ঢাকার কয়েকটি উদ্যান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আছে কয়েকটি উদ্যান৷ ইটপথরের শহরের মাঝে এসব উদ্যানগুলো যেন একেকটি সবুজ স্বর্গ৷ ছবিঘরে দেখুন ঢাকা শহরের কয়েকটি উদ্যান৷
রমনা পার্ক
ঢাকা শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত এ উদ্যানকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়৷ ১৬১০ সালে মোঘল সেনাপতি ইসলাম খান এই উদ্যানটির প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রায় ৬৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ উদ্যানটি গাছপালায় ভরপুর ৷ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এখানে৷ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান রমনার প্রাচীন বটমূলেই অনুষ্ঠিত হয়৷
রমনা পার্কের কিছু তথ্য
রমনা পার্কে বর্তমানে ২১১টি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে৷ এর মধ্যে ফুল ও শোভাবর্ধক ৮৭টি প্রজাতি, ফলজাতীয় ৩৬টি প্রজাতি, ঔষধি বৃক্ষ ৩৩টি প্রজাতি, কৃষি বনায়নের উদ্ভিদ তিনটি প্রজাতি, বনজ ও জলজ উদ্ভিদ দু’টি প্রজাতি এবং মশলা উদ্ভিদ তিন প্রজাতির৷ পার্কটিতে একটি লেকও আছে৷
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান
রমনা পার্কের পাশেই অবস্থিত৷ আগে এটা রমনা রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল৷ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্সের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন৷ দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধের পরে ৭১’ এর ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনারা এখানেই নতি স্বীকার করে৷ বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাদুঘর৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে এখানে স্থাপন কর হয় ‘শিখা চিরন্তনী’৷
বলধা গার্ডেন
ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন উদ্ভিদ উদ্যান৷ ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে তাঁর বাগানবাড়ি হিসেবে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ এর দু’টি অংশ হলো ‘সিবিলি’ ও ‘সাইকি’৷ নরেন্দ্র নারায়ণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা এনে বাগানটি ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন৷ বলধা গার্ডেন বর্তমানে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশ হিসেবে বন বিভাগের অধীনে আছে৷
বাহাদুর শাহ পার্ক
এ পার্কের অতীত নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক৷ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নওয়াব স্যার আব্দুল গণির উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট এলাকায় এ পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল৷ ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহের সময় কয়েকজন বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়া হয় এখানে৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে ১৯৫৭ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়৷ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ’র স্মরণে পার্কের পুনঃনামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক৷
ওসমানী উদ্যান
প্রায় ২৩ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত উদ্যানটি ঢাকার সচিবালয় ও নগর ভবনের মাঝে অবস্থিত৷ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনয়াক লে. জে. এম এ জি ওসমানির নামে এর নামকরণ করা হয়েছিল৷ ঢাকার সবচেয়ে অরক্ষিত উদ্যান বলা যায় এটাকে৷ তার ওপর এর ভেতরে সংরক্ষিত মীর জুমলার কামান দেখতে অনেকেই যান সেখানে৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলা এই কামানটি আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন বলে কথিত আছে৷
চন্দ্রিমা উদ্যান
ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত বিশাল উদ্যান৷ এরশাদ সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যানটির নাম ছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’৷ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করার পর বিএনপি সরকার এর নাম রাখে ‘জিয়া উদ্যান’৷ এরপরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে কয়েক দফায় নাম পাল্টাপাল্টি করে করে বর্তমানে ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’ নামেই আছে৷ ৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এ উদ্যানের পাশেই ক্রিসেন্ট লেক৷
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ঢাকার মিরপুরে চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত এ উদ্যান ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেই বেশি পরিচিত৷ বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র এটি৷ ১৯৬১ সালে প্রায় ২০৮ একর জায়গা জুড়ে এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কিছু তথ্য
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ১১৭টি গোত্রভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে৷ এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম , ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার লতা জাতীয় উদ্ভিদ৷ এতে আছে বিভিন্ন আকারের মোট সাতটি জলাশয়৷ শীতে এ সব জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে৷ দেশীয় পাখির অভয়ারণ্যও এই উদ্যান৷