হাসপাতালে শিশু চুরির চক্র
২২ আগস্ট ২০১৪
গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রাজধানী ঢাকার প্রধান সরকারি হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১২ নম্বর লেবার ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়ে যায় রুনা বেগমের দুটি নবজাতক জমজ শিশুর একটি৷ মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার বাসিন্দা রুনা বেগম (২৭) মঙ্গলবার ভোরে দুটি জমজ পুত্রের মা হন৷ কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়৷
সিসি ক্যামেরায় এই চুরির দৃশ্য ধরা পড়লেও, পুলিশ শুক্রবার পর্যন্ত চোরকে আটক বা নবজাতককে উদ্ধার করতে পারেনি৷ তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন চুরি যাওয়া শিশুটির জন্য হাসপাতালেই অবস্থান করছেন৷
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট যে, একজন নারী শিশুটিকে নিয়ে গেছে৷ রুনার স্বামী কাওসার আহমেদ, যিনি নৈশ প্রহরীর কাজ করেন, অভিযোগ করেন যে এই চুরির সঙ্গে হাসপাতালের কতিপয় নিরপত্তা প্রহরী জড়িত৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁরা সিসি ক্যামেরারর ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছেন চোর আটক এবং শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য৷ অন্যদিকে পুলিশ জানায় যে, তারা অপরাধীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন৷ এছাড়া এই ঘটনার পর হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ও নবজাতক চুরির ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ গত ২৩শে এপ্রিল এই ওয়ার্ড থেকে আরো একটি শিশু চুরি হয়৷ ১৮ই মার্চ নাদিম নামের এক শিশুচোর হাতেনাতে ধরাও পড়ে৷ নাদিম পেশাদার শিশুচোর চক্রের সদস্য বলে জানায় পুলিশ৷ এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আরো দুটি শিশু চুরি হয় হাসপাতাল থেকে৷ ২০১০ সালেও হাসপাতালের ওই ওয়ার্ড থেকে একটি নবজাতক চুরি হয়৷ অথচ এ সব ঘটনার কার্যকর কোনো তদন্তই হয়নি এখনও পর্যন্ত৷ অতীতে চুরি হওয়া শিশু উদ্ধারের কোনো নজির নেই এই হাসপাতালে৷
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে অস্থায়ী আয়াদের একটি অংশ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শিশুচোর চক্রকে সহায়তা করে৷ তারা ওষুধ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গেও জড়িত৷ এই সব আয়ারা হাসপাতালের কোনো বৈধ কর্মচারী নন৷ ইউনিয়ন নেতাসহ হাসপাতালের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা তাদের হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ দেন৷ তারা অর্থের বিনিময়ে রোগিদের সহায়তা করে৷ আবার প্রভাবশালীরা তাদের নানা অবৈধ কাজেও ব্যবহার করে থাকেন৷
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো চক্রের সহায়তায় এখানে একের পর এক শিশু চুরির ঘটনা ঘটছে৷ সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্যে ‘শিশুচোর' নারীর অবাধ ও সাবলীল বিচরণে তাঁদের এমন অভিযোগের সত্যতাও মেলে৷
হাসপাতালের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘‘হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্যই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে৷ তিনটি মনিটরে ১৬টি করে ক্যামেরার মাধ্যমে সব দৃশ্য তিনিও পর্যবেক্ষণ করেছেন৷'' তবে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকানো না গেলে শিশু চুরি বন্ধ করা কঠিন বলে জানান তিনি৷
কিন্তু শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘‘গত ছয় মাসে এ নিয়ে পাঁচবার শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতক চুরি ঠেকাতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ তারা একটু সচেতন না হলে এখানে পুলিশের একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না৷ কারণ প্রতিদিনই অনেক নবজাতক জন্ম নিচ্ছে হাসপাতালে৷ কার সন্তান কে নিয়ে যাচ্ছে এটা দেখার দায়িত্ব যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের৷''