ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৯ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে৷ দীর্ঘদিন পর ক্লাসে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা৷
সকাল সকাল ক্যাম্পাসমুখী
ক্লাস শুরুর প্রথমদিনে অর্থাৎ রোববার ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা সকাল আটটার মধ্যেই ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন৷ সকাল সাড়ে আটটা থেকে ক্লাস কিংবা পরীক্ষা থাকায় আগেভাগেই তারা চলে এসেছেন৷
কতদিন পর দেখা
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই দেখা গেল একঝাঁক হাসিমুখ৷ জড়িয়ে ধরছেন পরস্পরকে৷ দেড় বছর পর আবারো বন্ধুরা ক্যাম্পাসে একসাথে৷ আর তাই আবেগটাও একটু ভিন্নরকম৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের দুজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘এতদিন আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকব, কখনো ভাবতে পারিনি৷ বন্ধু-বান্ধব, ক্যাম্পাস, টিএসসি, হাকিম চত্বর সবকিছু অনেক মিস করেছি আমরা৷’’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে প্রবেশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে এবং হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হচ্ছে৷ সেই সাথে মাস্ক পরা ছিল বাধ্যতামূলক৷ আর যাদের নেই, তাদেরকে বিনামূল্যে একটি করে মাস্ক দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
শ্রেণিকক্ষে দূরত্ব বজায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি কক্ষে উর্দু বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে৷ উপস্থিতি বেশি বলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক৷
প্রথমদিনেই পরীক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের লোকপ্রশাসন, বাংলাসহ একাধিক বিভাগের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ব্যস্ত৷ কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘‘এতদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কারণে আমরা পরীক্ষা দিতে পারিনি৷ তাই ক্লাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সেশনজট ঠেকাতে প্রথমদিন থেকে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে৷’’
ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও আমরা অনলাইনে ক্লাস নিতে পেরেছি, যদিও নানা কারণে সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল৷ আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সিলেবাস না কমিয়ে বর্ষের আকার ছোট করেছি৷ অর্থাৎ ১ বছরের কোর্স এখন ৮ মাসে হবে৷ এতে শিক্ষার্থীদের উপর কিছুটা চাপ পড়লেও পেশাগত জীবনে তারাই লাভবান হবেন৷’’
ভার্চুয়াল ক্লাস আর সশরীরে ক্লাসের পার্থক্য
ভার্চুয়াল বা অনলাইনে ক্লাস আর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করার পার্থক্য জানতে চাইলে লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘এতদিন বাধ্য হয়ে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়েছে৷ ভার্চুয়াল ক্লাসের অনেক সমস্যা৷ শ্রেনিকক্ষে যেভাবে মনোযোগ দিয়ে ক্লাসে অংশগ্রহণ করা যায় এবং শিক্ষকরা যেভাবে পড়ান, অনলাইন ক্লাসে সেটা সম্ভব নয়৷’’
মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস
দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিল মোল্লা জানান, ‘‘এতদিন পর ক্লাস করার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত আমরা৷ এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন অনেক মিস করেছি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ক্লাস করতে আসার যে অনুভূতি, ঠিক তেমন লাগছে৷’’
মধুর ক্যান্টিনের অচেনা রূপ
দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিনও বন্ধ ছিল৷ প্রায় দেড় বছর পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হওয়ায় মধুর ক্যান্টিনে তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে আগের মতো সেই দীর্ঘ লাইন, আড্ডা, আলোচনা, খাবার পরিবেশন ইত্যাদি সেভাবে শুরু হয়নি৷ তবে খুব শীঘ্রই মধুর ক্যান্টিনকে চিরচেনা রূপে দেখা যাবে বলে আশা সেখানকার কর্মীদের৷
আসেননি অনেকেই
গত ৫ এবং ১০ অক্টোবর হল খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই ইতিমধ্যে ক্যাম্পেসে এসেছেন৷ আসছে নভেম্বর থেকে পূর্ণোদ্যমে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে৷ আর তাই শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্যাম্পাসে না এসে হলে নিজ রুমে পড়াশোনা করছেন৷