1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডেসটিনি মামলা : প্রতারিতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে যত শঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ মে ২০২২

আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে ডেসটিনির গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই কমিটি কি হবে? হলেও গ্রাহকরা কি টাকা ফেরত পাবেন?

https://p.dw.com/p/4BGhM
ছবি: bdnews24.com

গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধের মতো সম্পদ প্রতিষ্ঠানটির আছে কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন৷

দায়রা জজ আদালতের বিচারক নাজমুল হক বৃহস্পতিবার তার রায়ে ডেসটিনির রফিকুল আমিন ও সাবেক সেনা প্রধান হারুন অর রশীদসহ ৪৬ জনকে দণ্ড দিয়েছেন ৷ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় ওই দণ্ড দেয়া হয়৷

ডেসটিনির মোট গ্রাহক ছিল ৩৫ লাখ৷ দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ডেসটিনির এখন মোট স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল ৫৯০ কোটি ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা৷ রফিকুল আমিনসহ ৩৫ আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে ৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা৷ অন্যদিকে গ্রাহকরা পাবেন কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে তাদের যে সম্পদ এবং নগদ অর্থ আছে, তা গ্রাহকদের পাওনা টাকার চেয়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা কম৷

আদালত এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ তার শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের অন্তর্গত৷ এই টাকা উদ্ধারই আসল চ্যালেঞ্জ৷ রাষ্ট্রের অনুকূলে তাদের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ও অর্থ এবং জরিমানার টাকা ডেসটিনির শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ বলে গণ্য হবে৷

এজন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়, সমবায় মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য, একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও কো-অপারেটিভ বিভাগের নিবন্ধককে সদস্য হিসেবে রেখে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছেন আদালত৷

এই কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে অর্থ বিতরণের দায়িত্ব পালন করবে৷

পর্যবেক্ষণে বিচারক আরো বলেছেন, বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ বিক্রি করার জন্য কমিটিকে ক্ষমতা দেয়া হবে৷ তারা অর্থ একটি অ্যাকাউন্টে জমা রাখবেন৷ তারপর ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা করে ন্যায্যতা অনুযায়ী বিতরণ করতে হবে৷

ডেসটিনির সম্পদ এখন সরকারের কাছে আছে, অনেকেই সেই সম্পদ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন: মনজিল মোরসেদ

সরকার কমিটির সদস্যদের জন্য একটি সম্মানী নির্ধারণ করবে এবং সম্মানী ডেসটিনি মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সম্পদ বিতরণ কমিটির অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া হবে৷

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘আদালত মাত্র রায় দিয়েছেন৷ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না৷ এই রায় অনুযায়ী, ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা টাকা পাবেন কিনা, পেলে কীভাবে পাবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷’’

তিনি জানান, ‘‘ডেসটিনির বিরুদ্ধে যে মামলার রায় হয়েছে তা তাদের মাল্টি-পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি সংক্রান্ত৷ ট্রি- প্লান্টেশনের আরো একটি মামলা বিচারাধীন আছে৷’’

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘যে আদালত রায় দিয়েছে সেটি একটি ফৌজদারি মামলার আদালত৷ মামলাটিও ফৌজদারি মামলা৷ এখনে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো রায় ওই আদালত দিতে পারেন না৷ আদালত যেটা দিয়েছেন, সেটা পর্যবেক্ষণ৷ এই পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ক্ষতি পুরণের জন্য সরকার কোনো কমিটি গঠন করতে পারে না৷ তবে উচ্চ আদালত চাইলে সুয়োমোটো আদেশ দিতে পারেন৷ গ্রাহকরাও ক্ষতিপূরণের জন্য উচ্চ আদালতে যেতে পারেন৷ যেটা ইভ্যালির ব্যাপারে হয়েছে৷ আর গ্রাহকরা ক্ষতিপূরণের জন্য দেওয়ানি মামলা করতে পারেন৷ সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷’’

তার কথা, ‘‘ডেসটিনির সম্পদ তো এখন সরকারের কাছে আছে৷ সেটা কী অবস্থায় আছে, সেই সম্পদ কারা ভোগ বা ব্যবহার করছে, বাস্তবে তার অবস্থা কী সেটা আগে জানা দরকার৷ অনেকেই সেই সম্পদ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন৷ তারা ক্ষতিপূরণের পথে বড় বাধা হতে পারেন৷ সেটা না জেনে সম্পদের কাগুজে হিসেব করে লাভ নাই৷’’

রাষ্ট্র চাইলে কোম্পানি আইনে ক্ষতিগ্রস্তদের শেয়ার হোল্ডার বিবেচনা করে অর্থ দিয়ে দিতে পারত: ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক

সুপ্রিম কোর্টের আারেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘ফৌজদারী মামলার নিয়ম হলো, আদালত হয় শাস্তি দেবেন অথবা খালাস দেবেন৷ এছাড়া তাদের আর কিছু করার আইনগত এখতিয়ার নেই৷  তাই আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সেই ক্ষমতা ফৌজদারী আদালতের আছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ডেসটিনির সব ধরনের সম্পদের জন্য আদালতের নির্দেশেই রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয় অনেক আগেই৷ সব সম্পদ একটি জায়গায় আনা হয়েছে৷ রাষ্ট্র চাইলে এটাকে লিকুইডিটেশন করে কোম্পানি আইনে ক্ষতিগ্রস্তদের শেয়ার হোল্ডার বিবেচনা করে অর্থ দিয়ে দিতে পারতো৷ এটা আগেই করতে পারতো৷ পিপলস লিজিং নিয়ে কোম্পানি আইনে এখন একটি মামলা চলছে৷ এটা যথার্থ পদ্ধতি৷’’

তার কথা, ‘‘এখন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে৷ হাইকোর্টে যাবে৷ আপিল বিভাগে যাবে৷ চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে না৷’’

তবে এই মামলার পিপি অ্যাডভোকেট মীর আবদুস সালাম বলেন, ‘‘আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫-বি ধারায় আছে৷ তাতে মামলা পরিচালনার খরচসহ ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন৷ তবে এটা সরকারকে করতে হবে৷ আদালত কিছু করবেনা৷’’

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা এই রায়ের পর বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন৷ তারা অনেকেই মনে করছেন এখন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে৷ তবে তারা বুঝতে পারছেন না পাবেন কিভাবে৷ আবার অনেকেই বলছেন, ডেসটিনির সাথে তারা তাদের লেনদেনের কাগজপত্র সংরক্ষণ করেননি৷ তাহলে তাদের কী হবে?
আর আইনজীবীরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত যদি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় তা হবে যে সম্পদ আছে সেখান থেকে গ্রাহকদের বিনিয়োগের আনুপাতিক হারে৷ যে পরিমাণ টাকা গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার সামান্য অংশ এখন আছে৷ সরকার কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না৷ আর পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা আরেকটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ সফলতার হারও কম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য