1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিসলেক্সিয়া নিয়ে মোদীর মজা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৮ মার্চ ২০১৯

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘‌ডিসলেক্সিয়া'‌র মতো একটি অসুস্থতা নিয়ে মজা করলেন প্রকাশ্যে৷ দেশের অন্যতম সেরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা হেসে উঠলো সেই রসিকতায়৷

https://p.dw.com/p/3Efau
ছবি: UNI

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থাৎ দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটির রুরকি শাখায় আয়োজিত প্রযুক্তিবিদদের এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং মারফৎ যোগ দিয়েছিলেন৷ সেখানে এক ছাত্রী ডিসলেক্সিক শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক কিছু প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলেন৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী মূল বিষয়টিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে, কথার মাঝখানে হঠাৎ খুকখুকিয়ে হেসে ওঠেন৷ তার পর হাসতে হাসতেই প্রশ্ন করেন, এই প্রযুক্তি ৪০-৫০ বছরের ধেড়ে বাচ্চার জন্য প্রযোজ্য কি না৷ ছাত্রীটি রসিকতার মর্ম বুঝতে না পেরে উত্তর দেন, হ্যাঁ, প্রযোজ্য৷ তখন প্রধানমন্ত্রী আরও হাসতে হাসতে বলেন, তা হলে সেই ধেড়ে বাচ্চার মা খুশি হবে৷ এবার সভায় উপস্থিত বাকিরাও হেসে ওঠে৷ কারণ ততক্ষণে তারা বুঝতে পেরে গেছেন, যে ৪০-৫০ বছরের ধেড়ে খোকা বলতে নরেন্দ্র মোদী আসলে বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং তাঁর মা, অর্থাৎ সোনিয়া গান্ধীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন৷ ডিসলেক্সিয়ার মতো একটি সমস্যা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদাধিকারী এই বেয়াড়া রসিকতা তো বটেই, দেশের সেরা ছাত্রছাত্রীরা, যাঁরা ভারতের ভবিষ্যৎ, তাঁদের প্রতিক্রিয়াও লোককে হতবাক করেছে৷

‘দেশের শীর্ষে থাকা লোকজন বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন না’

ডিসলেক্সিয়া কি?

এটি এমন একটি রোগ, যা শিশুদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে অসুবিধা তৈরি করে৷ নির্দিষ্ট কিছু অক্ষর সঠিকভাবে চেনা, পড়া এবং লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়, যা ক্রমশ পুরো পড়াশোনার ওপরেই খারাপ প্রভাব ফেলে৷ যার দরুণ ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাটি শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে তো বটেই, সামাজিকভাবেও ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে৷

ডিসলেক্সিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে৷ গর্ভাবস্থায় কোনও ক্ষতিকর ধাতু, বা রাসায়নিকের ছোঁয়াচে এলে হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ আর ভারতের অসংগঠিত শ্রমিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যেহেতু মহিলা, এবং সন্তানধারণের পরও তাঁরা আর্থিক দুরবস্থার কারণে কাজ করে যেতে বাধ্য হন, নিজের এবং গর্ভস্থ সন্তানের উপযুক্ত যত্ন নিতে পারেন না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান জন্মের আগে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা পান না, ডিসলেক্সিয়া রোগের একটা আশঙ্কা থেকেই যায়৷

ডিসলেক্সিয়া সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ কারণ, সাধারণভাবে ডিসলেক্সিকদের বুদ্ধিবৃত্তি বা অন্যান্য গুণের ঘাটতি থাকে না৷ অতএব উপায় একটাই, স্নায়ু-মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে পড়ানো, যেটা খুব সহজেই করা যায়৷ সেখানে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদাধিকারী যখন এই রোগ নিয়ে রসিকতায় মাতেন, এবং দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা সেটি শুনে হেসে ওঠে, তখন বোঝা যায়, গোটা দেশ কী গভীর গভীর অসুখে আক্রান্ত৷‌

যদিও যাঁরা এই ধরনের বিশেষ বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা কিন্তু এ জাতীয় রঙ্গ-রসিকতায় আদৌ অবাক হচ্ছেন না৷ কারণ সমাজের এই অসুস্থ মনোভাব, এই কদর্য রসবোধের সঙ্গেই তাঁদের প্রতিদিন বাস করতে হচ্ছে৷ এ ধরনের অসংবেদনশীল মন্তব্য গায়ে এসে পড়লেও, তা গায়ে না মেখে, মাথা উঁচু রেখে এগিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত৷

এক মা যা বললেন

উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙায় থাকেন অমৃতা৷ তিনি একজন একাকী মা৷ তাঁর সন্তান ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত৷ শুধু সেই কারণেই তাঁকে তিনি কোনও সাধারণ স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি৷ কিন্তু তাতে হার মানেননি অমৃতা৷ নিজের পৈতৃক বাড়ির একটা অংশে বিশেষ শিশুদের জন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন, যেখানে ডাউন সিনড্রোম, অটিজম, সেরিব্রাল পলসির মতো রোগে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি৷

ডয়চে ভেলেকে অমৃতা বললেন, প্রধানমন্ত্রীর এই রসিকতা একেবারেই ব্যতিক্রমী ব্যাপার নয়৷ দেশের শীর্ষে থাকা লোকজন বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন না বলেই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের মূল সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার কাজটা করা যাচ্ছে না৷ আর একজন শীর্ষকর্তা যখন ডিসলেক্সিয়া নিয়ে মসকরা করেন, তখন তাঁর শিক্ষা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়৷ কারণ ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ডিসলেক্সিয়া ছিল, এমন মানুষ, বা যাঁরা স্পেশাল চাইল্ড, তাঁরা সমাজে কী পরিমাণ অবদান রেখেছেন!‌ নির্ভুলভাবেই এই ঐতিহাসিক সত্যতার দিকে নজর টেনেছেন অমৃতা৷ কারণ ডিসলেক্সিয়া ছিল এমন বহু সফল এবং বিখ্যাত মানুষের মধ্যে প্রথম যে তিনটি নাম লোকের মাথায় আসে, সেগুলো হলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, আলবার্ট আইনস্টাইন এবং ওয়াল্ট ডিজনি!

সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে ডিসলেক্সিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রসিকতা সম্পর্কে অমৃতা খুব জরুরি একটা প্রশ্ন তুলেছেন৷ সেটি হচ্ছে, ‘‌‘‌‌অপরকেই যদি বুঝতে না পারি, তাহলে কীভাবে আমরা দেশ চালাব!‌'‌'