1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিএনএ গবেষণা: ইউরোপীয় নমুনায় চলে বাকি বিশ্ব

২০ জুলাই ২০২২

বিশ্বে গবেষণার জন্য যত ডিএনএ সিকোয়েন্স হয়েছে তার বেশিরভাগেরই দাতা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত৷ এর ফলে বাকি পৃথিবীর মানুষের জিন সম্পর্কে জ্ঞানের বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4EPWg
DNA Profil und Menschen
ছবি: Klaus Ohlenschläger/picture alliance

বিশ্বে যা কিছু মানুষের বন্ধনকে দৃঢ় করেছে তার একটি ডিএনএ সিকোয়েন্স৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো একজন মানুষ থেকে আরেকজনের ডিএনএ বৈশিষ্ট্য ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই অভিন্ন৷

২০ জুলাই বিজ্ঞানী জর্জ ম্যান্ডেলের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী৷ তিনি বলেছিলেন, আমরা যে আচরণই করি না কেন তা কিছু অদৃশ্য বিষয় দ্বারা প্রভাবিত৷ বৈজ্ঞানিক গবেষণার উন্নতির কারণে আজকের যুগে আমরা এই ব্যাপারটিকে ডিএনএ হিসেবে জানি৷ কিন্তু মানব জাতির সিংহভাগ জিনগত বৈশিষ্ট্য যদি একই হয় তাহলে ডিএনএ সিকোয়্যান্সিংয়ে আদৌ এত বৈচিত্র্যের দরকার আছে কীনা সেই প্রশ্নটি কারো মনে আসতেই পারে৷

এর উত্তর খোঁজার জন্য দশমিক এক শতাংশ বৈসাদৃশ্যের দিকেই আমাদের নজর দিতে হবে৷ আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ক্ষুদ্র পার্থক্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ৩০০ কোটি নাইট্রোজেন যৌগ৷ মানুষে-মানুষে চুল, চোখের রং, উচ্চতা থেকে শুরু করে যাবতীয় বৈশিষ্ট্যের এত পার্থক্য ঠিক এই দশমিক এক শতাংশ ভিন্নতার কারণেই দেখি আমরা৷

জিনগত রোগ নির্ণয়

একজন ব্যক্তি বা কোন জনগোষ্ঠীর জন্য কোন নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি আছে কিনা এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও এখন পেতে পারি আমরা জিনগত পার্থক্য বিশ্লেষণ করে৷ তার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যসেবা কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে যা ব্যক্তি বা কোন জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখতে পারে৷

আমরা কিছু রোগের কথা এখন জানি যেগুলো বংশানুক্রমে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে দেখা যায়৷ যেমন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ক্যান্সার৷ এর বাইরেও অনেক রোগ আছে যেগুলো জিনগতভাবে হতে পারে৷ আশার কথা হলো সাম্প্রতিক সময়ে জেনেটিক বিজ্ঞান এতটাই অগ্রসর হয়েছে যে বিজ্ঞানীরা এসব রোগের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট জিনগুলোকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন৷

কিন্তু এই কাজটি আরো ভালোভাবে করার জন্য সংগৃহীত জিন নমুনায় আরো বেশি বৈচিত্র্যের প্রয়োজন৷ যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক জীববিজ্ঞানী সারাহ টিশকফ এ নিয়ে অনেকদিন ধরে সক্রিয় রয়েছেন৷ পর্যাপ্ত জিনগত নমুনা নিয়ে গবেষণা না থাকায় কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ধরুন ইউরোপীয় বংশদ্ভূতদের নিয়ে একটি গবেষণায় হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী জেনেটিক বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করা হলো এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে এমন রোগীদের উপর এই রোগ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হলো যারা আসলে মূল গবেষণার অন্তর্ভুক্ত নন৷ আমরা গবেষণা থেকে জানি ভিন্ন ভিন্ন নৃ তাত্ত্বিক মানুষের ক্ষেত্রে রোগের এ ধরনের পূর্বাভাস ভালোভাবে কাজ করে না, বিশেষ করে যদি তারা আফ্রিকান বংশদ্ভূত হন৷''

নমুনায় বৈচিত্র্যের অভাব

ঐতিহাসিকভাবেই জিনগত গবেষণায় ডিএনএ সরবরাহকারী বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপীয়৷ এ কারণে বাকি বিশ্বের মানুষের জিন বিষয়ে জ্ঞানের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যান জেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউট৷ তাদের হিসাবে বর্তমানে বিশ্বের জিনগত উপাত্তের ৮৭ শতাংশই ইউরোপীয় ব্যক্তিদের৷ ১০ শতাংশ এশিয়ান আর দুই শতাংশ আফ্রিকান৷ এমন বৈষম্যের কারণে আগেভাগে রোগ শনাক্ত করা কিংবা বিভিন্ন রোগের আধুনিক চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি থেকে পিছিয়ে থাকছেন তারা৷

বিজ্ঞানীরা বলছেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণার ফলাফল ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠী পর্যায়ে স্বাস্থ্যগত নানা সুবিধা দিতে পারে৷ তবে এই লক্ষ্য পূরণে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যান জেনম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে বৈচিত্র্যপূর্ণ জিন নিয়ে গবেষণা যথেষ্ট ব্যয়বহুল ব্যাপার৷ সেই সঙ্গে গবেষক ও সমাজের মধ্যে আস্থা ও মর্যাদার দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে ওঠাও জরুরি৷

সুস্মিতা রামাকৃষ্ণান/এফএস