ট্রেনে চড়ে পানি আনা ভারতীয় শিশুরা
ভারতের মহারাষ্ট্রের মুকুন্দওয়াদি গ্রামে খরার কারণে নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাই পানি আনতে শিশুদের ট্রেনে করে ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে৷
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা
স্কুল শেষে সহপাঠীর যখন খেলতে গেছে তখন দশ বছরের সিদ্ধার্থ ধাগেকে পানি আনতে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে হয়৷ ‘‘আমি পানি আনতে গিয়ে সময় নষ্ট করতে পছন্দ করি না৷ কিন্তু আমার আর কোনো উপায় নেই,’’ জানায় সে৷
খেলার সময় নেই
সিদ্ধার্থের সঙ্গে প্রায় সময় পাশের বাড়ির নয় বছর বয়সি সাক্ষী গারুড়’ও পানি আনতে যায়৷ সাক্ষীদের বাড়ি স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে৷ সে বলে, ‘‘এটা (পানি আনা) আমার নিয়মিত রুটিন৷ স্কুল শেষে আমি খেলার সময় পাই না, কারণ, আমাকে প্রথমে পানি আনতে যেতে হয়৷’’
কারণ খরা
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুকুন্দওয়াদি গ্রামে ধাগে তার পরিবারের সঙ্গে থাকে৷ ঐ এলাকায় সাধারণ বৃষ্টিপাতের চেয়েও ১৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে এবার৷ ফলে পানিসংকট দেখা দিয়েছে৷
নেই পানি সরবরাহ ব্যবস্থা
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ওয়াটারএইড বলছে, প্রায় ১২ শতাংশ ভারতীয়র বাড়ির কাছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই৷ তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৪ সালের মধ্যে সবার জন্য পানির ব্যবস্থা করতে ৪৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছেন৷
১৪ কিলোমিটার পথ
মোদীর অঙ্গীকার অনুযায়ী যতদিন পর্যন্ত না সবার জন্য পানি নিশ্চিত হচ্ছে ততদিন সিদ্ধার্থ আর সাক্ষীদের মতো শিশুদের কষ্ট করে যেতে হবে৷ প্রতিদিন তারা মুকুন্দওয়াদি থেকে আওরঙ্গবাদে যায় পানি আনতে৷ যাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথ৷ আওরঙ্গবাদের রেল স্টেশন পানি সংগ্রহ করে তারা৷ সিদ্ধার্থ আর সাক্ষীদের মতো একশ’র বেশি দরিদ্র পরিবারকে এভাবে পানির ব্যবস্থা করতে হয়৷
রেলযাত্রায় নানা ঝামেলা
মুকুন্দওয়াদিতে যখন ট্রেন থামে, তখন ঠেলাঠেলি করে পানির পাত্র নিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়৷ আবার আওরঙ্গবাদে ট্রেন থামার পরও তাড়াহুড়ো করতে হয়৷ তাই ট্রেনের দরজার কাছেই পাত্র রাখতে চায় শিশুরা৷ কিন্তু এ কারণে মাঝেমধ্যে অন্য যাত্রীদের বকা শুনতে হয় তাদের৷
বৃথা পরিশ্রম
পানি নিয়ে ফেরার সময় মুকুন্দওয়াদিতে এক মিনিটেরও কম সময় ট্রেন থেমে থাকে৷ এর মধ্যেই পানি নিয়ে নামতে হয়৷ অনেক সময় সিদ্ধার্থের মা জ্যোতি ছেলের অপেক্ষায় স্টেশনে থাকেন৷ তাড়াহুড়ো করে পানির পাত্র নামাতে গিয়ে মাঝেমধ্যে পানি পড়ে যায় বলে জানান তিনি৷ ফলে সব কষ্ট বিফল হয়ে যায়৷
গোসল সেরে নেয়া
বাড়িতে পানির ব্যবস্থা নেই বলে প্রকাশ নাগরে সাবান আর শ্যাম্পু নিয়ে আওরঙ্গবাদ এসেছেন৷ স্টেশনে তিনি গোসলও সেরে নিচ্ছেন৷