টেনিস কিংবদন্তি বরিস বেকার
লেজেন্ড, প্লেবয় অথবা ক্লাউন: বিগত ৪৭ বছরে সব রকম ভূমিকাতেই দেখতে পাওয়া গেছে বরিস বেকারকে৷ ৪৯টি টুর্নামেন্টে জিতে জার্মানদের মন কেড়েছেন৷ পরে কিন্তু তাঁর ফ্যানদের ‘ববেলে’-কে নিয়ে মাঝেমধ্যে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে৷
লালচুল এক কিশোর দুনিয়া জয় করল
এক কোটি দশ লক্ষের বেশি জার্মান ১৯৮৫ সালের ৭ই জুলাই টেলিভিশনের পর্দায় আটকে বসে ছিলেন, যখন ১৭ বছর বয়সি এক জার্মান টেনিস খেলোয়াড় এক ধাক্কায় বিশ্বখ্যাত হয়ে যান৷ ‘ববেলে’ উইম্বলডন জেতার পর জার্মানিতে শুরু হয় ‘টেনিস বুম’৷ পরের বছর, তারপর ১৯৮৯ সালেও বরিস তাঁর ‘বসবার ঘর’ উইম্বলডনে জেতেন৷
জার্মান টেনিসের এক নতুন যুগ
এর আগে জার্মানি কোনোদিন ডেভিস কাপ জিততে পারেনি৷ তারপর উদয় হলেন বরিস বেকার৷ ডেভিস কাপের সেই অবিস্মরণীয় ফাইনালে বেকার এবং কার্ল-উভে স্টেব ডাবলসে হারালেন সে আমলের পয়লা বাছাই মাট্স ভিলান্ডার এবং উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন স্টেফান এডবার্গকে৷ ১৯৮৯ ও ১৯৯৩ সালের ডেভিস কাপেও বরিস জার্মান দলে ছিলেন৷
‘বেকার হেশ্ট’
তাঁর বিদ্যুৎগতি সার্ভের জন্য ‘‘বুম বুম’’ বেকার; সার্ভ-অ্যান্ড-ভলি গেমে ঝাঁপ দিয়ে ভলি করা, জার্মানরা যার নাম দেন ‘‘বেকার হেশ্ট’’; পয়েন্ট জিতলে মুঠো তুলে আনন্দ প্রকাশ করা, জার্মান ফ্যানরা যাকে বলতেন ‘‘বেকার ফাউস্ট’’ বা বেকার মুষ্টি৷ বেকার-এর খেলার প্রতিটি অঙ্গ এবং প্রতিটি দিক ছিল তাঁর ফ্যানদের কাছে আদরণীয় ও স্মরণীয়৷
বিশ্বের পয়লা নম্বর
১৯৯১ সালের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে বিশ্বের বাছাই তালিকায় প্রথম স্থানটি অধিকার করেন বেকার৷ তিনি যে ৪৯টি টুর্নামেন্টে জিতেছেন, তার মধ্যে ছ’টি ছিল গ্র্যান্ড স্ল্যাম৷ তবে তিনি কোনোদিনই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিততে পারেননি৷
প্রথম বিবাহ
বেকার ১৯৯৩ সালে জার্মান-অ্যামেরিকান অভিনেত্রী তথা ফ্যাশন ডিজাইনার বার্বারা ফেলটুসকে বিবাহ করেন৷ ১৯৯৯ সালে বার্বারা যখন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন, ঠিক তখনই লন্ডনের একটি হোটেলে রুশ মডেল আঙ্গেলা এর্মাকোভা-র সঙ্গে বেকার-এর ঘনিষ্ঠতার কথা ফাঁস হয়ে যায়৷ সেই কাহিনির একটি ফলশ্রুতি: আনা নামের এক কন্যা, বেকার-এর তৃতীয় সন্তান; অপরদিকে, ২০০১ সালে বরিস ও বার্বারা-র বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
হাসির খোরাক
রুশ ফ্যাশন মডেল আঙ্গেলা এর্মাকোভার সঙ্গে বেকার-এর অবৈধ সম্পর্ক এবং উভয়ের যৌথ সন্তান নিয়ে স্বভাবতই হাসিঠাট্টা হয়ে থাকে৷ কোলোন কার্নিভালে সেজন্য বেকারকে তাঁর নিজস্ব ‘ফ্লোট’ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে৷
শেষ খেলা
১৯৯৯ সালে উইম্বলডনে প্রি-কোয়ার্টারফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্যাট্রিক ব়্যাফটার-এর কাছে হারার পর বেকার তাঁর পেশাদারি টেনিস জীবন সমাপ্ত করেন৷ আজ তিনি বলেন, ভগ্নস্বাস্থ্য দিয়ে তাঁকে সাফল্যের মূল্য দিতে হয়েছে: ‘‘আমার দু’টো নতুন হিপ, আর ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা দশ সেন্টিমিটার লম্বা লোহার পাত ঢোকানো৷ এছাড়া আমি অল্প খোঁড়াই৷’’
দ্বিতীয় বিবাহ
বেকার-এর দ্বিতীয় বিবাহ ২০০৯ সালে, নেদারল্যান্ডস-এর শার্লেলি ক্যার্সেনব্যার্গ-এর সঙ্গে৷ উভয়ের পুত্র আমাডেউস বেনেডিক্ট এডলি লুই হল বেকার-এর চতুর্থ সন্তান৷
নতুন কাজ
২০১৩ সালের শেষদিকে একটি খবর খেলাধুলার দুনিয়াকে চমকে দেয়: বরিস বেকার নোভাক জোকোভিচ-এর প্রধান কোচ হতে চলেছেন৷ বেকার নাকি তাঁকে বিশেষ করে ‘মানসিক দিক থেকে’ খুব সাহায্য করেছেন, কেন না বেকার বহু পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেই পরিচিত – বলেছেন জোকোভিচ৷