টুইটার কূটনীতিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ভারত সফররত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে নিয়ে টুইট করেছেন সেদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো টুইট বা সামাজিক বার্তা নেই৷ কেন নেই? আমরা কী তাহলে তথ্য প্রযুক্তির সর্বশেষ বিষয়গুলোকে ব্যবহার করিনা রাষ্ট্র এবং কূটনীতিতে!
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে তাঁর নৈশভোজের খবরটি নিজেই জানিয়েছেন টুইটারে৷ শুধু খবর নয় সঙ্গে ছবিও জুড়ে দিয়েছেন৷ একটি বা দু'টি নয়, তিনটি৷ আর সেই ছবিতে দুই রাষ্ট্রপতি ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আছেন আরো অনেকে৷ তাঁর টুইটার বার্তাটি রিটুইট হচ্ছে ব্যাপকভাবে৷
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পিছিয়ে নেই৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকের খবর তিনিও দিয়েছেন টুইটারে৷ মেদী তাঁর টুইটার বার্তায় বলেছেন, ‘‘আমাদের আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পথ আরো প্রশস্ত করেছে৷'' শুধু বৈঠকের খবর নয় ছবিও জুড়ে দিয়েছেন তিনি৷ নরেন্দ্র মোদীর টুইটার বার্তাটি শনিবার পর্যন্ত ফেবারিটের তালিকায় যোগ হয়েছে দুই হাজারবারের বেশি৷
এতো গেল প্রতিবেশি দেশের কথা৷ এবার দৃষ্টি আরো একটু বিস্তৃত করি৷ গত জুলাইয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার রদবদলের খবর প্রথম জানা যায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন-এর টুইটার বার্তায়৷ তিনি টুইটার বার্তায় ১০ জন নারীকে মন্ত্রিসভার প্রথম সারিতে আনার চমক দেন৷ খবর দেন ছয় মন্ত্রীর অব্যাহতির৷
পিছিয়ে নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বারাক ওবামা টুইটারের মাধ্যমেই তাঁর সমর্থকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান৷ টুইটারে তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাদের বলতে চাই, ভাগ্যক্রমে আমরা জয়লাভ করিনি, নির্বাচনে আমাদের বিজয় কোনো দুর্ঘটনা নয়৷ আপনারাই এর কৃতিত্বের দাবিদার৷''
আর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই মাসেরও বেশি সময় পর কিউবা থেকে দেশে ফিরে টুইটারের মাধ্যমেই দেশবাসীকে দেশে ফেরার খবর জানান ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ৷
এই উদাহরণ আরো বাড়ানো যাবে৷ দেয়া যাবে টুইটার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্র প্রধান , সরকার প্রধান বা সরকারের নীতি নির্ধারকরা৷ তাঁরা কিভাবে প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেশের মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছেন৷ আর নিজেই পরিণত হচ্ছেন একজন নাগরিক সাংবাদিকে৷
তবে এর ব্যতিক্রম বাংলাদেশ৷ এখানকার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কতজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার, ফেসবুক ব্যবহার করেন তা জানা না গেলেও তারা যে সক্রিয় নন তা বোঝা যায়৷ আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর যে এখন পর্যন্ত দেননি সেটা সবার জানা৷
রাষ্ট্র ও সরকারের অনেক বিষয় সাধারণ মানুষের আগ্রহে থাকে৷ জানতে চান তারা৷ আর সেটা জানতে চান নির্ভরযোগ্যভাবে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি সেটা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মাইক্রো ব্লগের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন তাহলে স্বচ্ছতা অনেকটা বেড়ে যায়৷
শুধু তাই নয়, এটা হতে পারে সফল কূটনীতির বড় একটি হাতিয়ার৷ প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মোদী যা করেছেন তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাঁর তাদের আন্তরিকতা প্রকাশ করতে পেরেছেন৷ আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে টুইট করে তাঁকে বিশেষ সম্মান দেখিয়েছেন তাঁরা৷ একইভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির টুইটার বার্তা পাওয়া গেলে বিষয়টি কতোটা মধুর হত - এরকবার ভাবুনতো৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার হল জিজিটাল বাংলাদেশ৷ এখানে ইন্টানেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারও বাড়ছে৷ তাঁরা দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ফলোয়ার হতে চান টুইটারে বা ফেসবুকে৷ তারা মন্তব্য করতে চান, চান রিটুইট করতে৷ সেই সুযোগটি কী দেবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা!