1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকায় অগ্রাধিকার পাবে তৃতীয় লিঙ্গ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ মে ২০২১

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের টিকাকরণে উদ্যোগী পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ পরিচয়পত্র নিয়ে এলেই কলকাতা পুরসভার ৯৬টি কেন্দ্র থেকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়ে যাবেন তারা৷ কিন্তু গোষ্ঠীর অনেকেই টিকাকরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন৷

https://p.dw.com/p/3toID
Indien Symbolbild LGBT
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Talukdar

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে সংগঠনগুলি সরব৷ সর্বসম্মতভাবে সমাজের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বৈষম্যের মুখে পড়তে হতে পারে৷ তাই বাংলায় কোভিডের টিকাকরণ শুরুর দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় লিঙ্গের টিকাকরণের কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ গতকাল, শুক্রবার থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের টিকাকরণের কর্মসূচী৷

রূপান্তরকামী পল্লবী চক্রবর্তী কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারে চাকরি করেন৷ প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকেই তার করোনার দুটি টিকাই ইতিমধ্যে নেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু সবার অবস্থা তো এমন নয়৷ গণিতে এমএসসি পাশ, কৃষ্ণনগরের রূপান্তরকামী সুমনা প্রামাণিক আবার জানেনই না যে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে! রূপান্তরকামী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী রঞ্জিতা সিনহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, ওখানে এখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া চলছে৷ প্রথম ডোজের ব্যাপার নেই৷ কোথায় দিচ্ছে জানব কীভাবে?'' সত্যিই কি পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের টিকাকরণ চলছে?

রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবে টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে৷ রাজ্যজুড়েই নাম নথিভুক্তকরণ চলছে৷ ডেটাবেসের অন্তর্গত সংশ্লিষ্ট তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি এলাকা বা ওয়ার্ড অনুযায়ী নিজের বাড়ির কাছেই যেখানে টিকাকরণ চলছে, সেখানে গেলেই টিকা পাবেন৷ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্যও একটি আলাদা লাইনের সুব্যবস্থা হচ্ছে৷''

‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্যও আলাদা লাইনের সুব্যবস্থা হচ্ছে’’: অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতায় কমবেশি দেড়শটি টিকাকরণ কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ কলকাতা পুরনিগমের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার কলকাতার ৯৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ প্রদান করা হবে৷ অগ্রাধিকার হিসেবে ওই তিনদিন পরিবহনকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, মুদিখানা-সবজি-মাছ বিক্রেতার সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও টিকা পাবেন৷ বুধবারের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের নাম, বয়স এবং পরিচয়পত্র পাঠাতে হবে৷ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সংক্রান্ত কোনও প্রমাণপত্রের প্রয়োজন নেই৷

শুক্রবারের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত ১৯ হাজার ৮৪৭ জন৷ মৃত্যু হয়েছে ১৫৯ জনের৷ এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে যেখানে গণটিকাকরণ চলছে, সেখানে সেই অর্থে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের টিকা দেওয়া নিয়ে তেমন প্রচার কই? ট্রাফিক সিগন্যাল বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যিনি উপার্জন করেন, তার কাছে এ খবর পৌঁছবে কী করে? অপর্ণা বলেন, ‘‘যাদের ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন নেই, তাদের জন্য প্রতিটা জেলার জেলাশাসক, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসারদের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সংগঠনগুলির কাছে পৌঁছনো হচ্ছে, যাতে প্রতিটা মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়৷'' তবে এই উদ্যোগের আগে তৃতীয় লিঙ্গের অনেক মানুষ টিকা নিয়েছেন অন্যান্যদের মতো৷ ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলাপমেন্ট বোর্ডের এক সদস্যের দাবি, সারা রাজ্যে টিকাকরণের ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা খুব পিছিয়ে নেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার আগেই যারা আঠারো বা পঁয়তাল্লিশের উর্ধ্বে, তাঁরা টিকা নিয়েছেন৷

রাজ্যের তরফ থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত প্রধানরা প্রচারের দায়িত্ব পালন করছেন৷ মাইকিংয়ের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে ফোন নাম্বারও৷ কিন্তু তাও টিকাকরণের খবর পৌঁছচ্ছে না সর্বস্তরে৷ প্রচারের ঘাটতি রয়েছে? রঞ্জিতা সিনহা বলেন, ‘‘রাজ্যে এমনিতে লকডাউন চলছে৷ কীভাবে পৌঁছব টিকাকরণ কেন্দ্রে? তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে? সরকারের ঘোষণা হয়েছে৷ কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা নেই৷''     

তৃতীয় লিঙ্গের সুমারি এখনো হয়নি৷ ২০১৪ সালের হিসেবে, সারা দেশে চার লক্ষ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন৷ যদিও এই তথ্য ঠিক বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন না৷ অনেকেই মনে করেন, এই রাজ্যেই চার লাখের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি আছেন৷ তাহলে টিকাকরণ করার সঙ্গে সঙ্গে কি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের সুমারিও হতে পারে? অপর্ণা বলেন, ‘‘তাতেও কিছু ত্রুটি থেকে যেতে পারে৷ সব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাই কি ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড পরিবর্তন করতে পেরেছেন? যদিও টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা নিশ্চয়ই আসবে৷''