‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলো ধীরে ধীরে উন্নতি করছে৷ কিন্তু অন্য দেশগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ বলছে এর পেছনে মূল কারণ করোনার টিকার সহজলভ্য না হওয়া৷
টিকার বৈষম্য
আইএমএফের সবশেষ তথ্য বলছে, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো এরই মধ্যে গড়ে ৩৯ দশমিক সাত শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়েছে৷ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো টিকা দিয়েছে ১১ শতাংশ মানুষকে৷ অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো মাত্র এক দশমিক দুই শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে৷
অর্থনৈতিক সহায়তা
অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ কোনো কোনো দেশে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সহায়তা বলবৎ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ বেশিরভাগ উদীয়মান দেশে ২০২০ সালেই সহায়তা শেষ হয়ে গেছে৷ অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জনগণের কাছে তেমন একটা সহায়তাই পৌঁছায়নি৷
প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব
এপ্রিলের পর অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ৷ কিন্তু উদীয়মান ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি একই মাত্রায় নিম্নগামী হওয়ায় ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছয় শতাংশই থাকছে৷ বিশ্বজুড়ে মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলেও মনে করেন আইএমএফের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গিতা গোপীনাথ৷
মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা
বিভিন্ন দেশে মহামারির প্রথম ধাক্কার পর ধীরে ধীরে ব্য়বসা-বাণিজ্য খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তার প্রভাবে বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন৷ তবে আইএমএফের বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করছেন, মহামারি থেমে গেলে অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷
দ্বিমুখী সমস্যা
নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে অবশ্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে দীর্ঘদিন৷ একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে৷ অনিয়মিত পণ্য সরবরাহ এবং বাড়িভাড়া বৃদ্ধিও দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে৷
টিকার সাম্যের আহ্বান
টিকার বৈষম্য দ্রুত কমিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ৷ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধাক্কা সামলানোর অবস্থায় আনতে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার আহ্বান সংস্থাটির৷ এজন্য যেসব দেশে বাড়তি টিকা রয়েছে, তাদের অন্তত একশো কোটি ডোজ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দিতে হবে৷ টিকা উৎপাদন ও প্রস্তুতকারীদেরও এসব দেশে আগে টিকা সরবরাহ করতে হবে৷