টিউনিশিয়ায় বিভাজনরেখা এখনও স্পষ্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০১২নভেম্বরের শেষ যাবৎ উত্তর টিউনিশিয়ার সিলিয়ানা প্রদেশে শ্রমিক সংগঠন এবং পুলিশের মধ্যে কয়েকদিনব্যাপী পথযুদ্ধ চলে৷ আহতের সংখ্যা তিনশো'র বেশি৷ টিউনিশিয়ার ইউজিটিটি শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন৷
ডিসেম্বরের চার তারিখে রাজধানী টিউনিসে উগ্র ইসলামপন্থিরা ইউজিটিটি'র একটি সমাবেশের উপর হামলা চালায়৷ বেশ কিছু মানুষ তাদের লাঠির আঘাতে আহত হন৷ অন্যান্য স্থানেও পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ৷ ২০১০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর এই টিউনিশিয়াতেই আরব বসন্তের সূচনা৷ দেশটি কিন্তু আজও শান্তি খুঁজে পায়নি৷
টিউনিশিয়ার সমাজে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণের চিহ্ন সুস্পষ্ট৷ এন্নাহদা পার্টি এবং সালাফি গোষ্ঠীরা রাজনীতি ও সমাজজীবনে ইসলামকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে চায়৷ ধর্মনিরপেক্ষ মহল এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন: তাদের তরফে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও ইউজিটিটি শ্রমিক সংগঠন সমিতি৷
বিশ্লেষকদের মতে পরিস্থিতি এতদূর গড়িয়েছে যে দু'পক্ষ পরষ্পরের সম্পর্কে শঙ্কা বোধ করতে শুরু করেছে৷ যেমন ইসলামপন্থিরা বহু দশক ধরে দমননীতি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল৷ অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ টিউনিশীয়দের ভীতি, দেশ ইরান কিংবা সৌদি আরবকে আদর্শ করতে পারে৷
তবে দৃশ্যত সামাজিক সংঘাতের চেয়েও সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে টিউনিশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি৷ দু'বছর আগে আরব বসন্তের প্রথম গরম হাওয়া এসেছিল সুউচ্চ বেকারত্ব থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, যাদের চাকরি পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদের পরিস্থিতির এই দু'বছরে কিছুমাত্র উন্নতি হয়নি৷
টিউনিশিয়ার অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজন ইউরোপের সাহায্য, বলছেন বিশ্লেষকরা৷ মুশকিল এই যে, বহু ইউরোপীয় শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা অশান্তি ও ধর্মঘটের ভয়ে টিউনিশিয়া পরিত্যাগ করেছে৷ বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ এবং অবকাঠামো সৃষ্টির দায়িত্বটা টিউনিশীয়দেরই থেকে যাবে৷
অপরদিকে টিউনিশিয়া এখনও লিবিয়া কিংবা মিশরের মতো দেশকে সঠিক গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখানোর ক্ষমতা রাখে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে যেভাবে সাহায্য করা হয়েছিল, টিউনিশিয়ার ক্ষেত্রেও তাই করা উচিত, বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷