1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ মার্চ ২০২০

সরকার নানা আশ্বাস দিলেও আসলেই কি বাংলাদেশের চিকিৎসকরা নিরাপদে কাজ করছেন? চিকিৎসকদের কাছ থেকে যে তথ্য মিলছে, তাতে ভয়াবহ ঝুঁকির চিত্রই উঠে আসছে৷

https://p.dw.com/p/3ZqME
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তো নিরাপত্তা সরঞ্জামের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন৷ চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. আব্দুর নূর তুষার ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলে বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলব না৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমাদের আছে, সেগুলো তাদের দেওয়া হচ্ছে৷'' পরীক্ষার কিট কী পরিমাণ আছে? জবাবে ডা. আজাদ বলেন, ‘‘গতকালও ১০ হাজার এসেছে৷ আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাড়ে ৩ হাজার দিয়েছে, এর সঙ্গে আরো দেড় হাজার এসেছে৷ আগামী দুএকদিনের মধ্যে এক লাখ চলে আসবে৷ আমরা এক লাখ না, দুই লাখ কিট মজুদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷’’ 

ডা. আবুল কালাম আজাদ

গত শুক্রবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ রশীদ স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘‘সম্পদের স্বল্পতার জন্য হাসপাতালের তরফ থেকে সকলকে মাস্ক সরবরাহ করা যাচ্ছে না৷ ঝুঁকি এড়াতে সকলকে নিজ উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহার করতে অনুরোধ জানানো হলো৷’’

এই নোর্টিশের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তারা এই নোর্টিশ দিয়েছেন৷ আমরা তাদের এই নোর্টিশ প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দিয়েছি৷’’ 

Screenshot Bangladesch Coronokrise Veröffentlichung Salimullah Medical College
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের নোটিশছবি: Facebook/Omi Rahman Pial

গত বৃহস্পতিবার সকালে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় নিজেদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন৷ পরে তাদের দাবি মেনে নেয়া হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আবার কাজে যোগ দেন৷ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান বলেন, হাসপাতালে ২০০ ইন্টার্ন চিকিৎসক আছেন৷ তাদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা আগে করেনি৷ অথচ সব ধরনের রোগী হাসপাতালে আসছেন৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করার কাজ তাদের করতে হচ্ছিল৷

গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিসের (এফডিএসআর) পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, ‘‘সারাদেশ থেকে চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন৷ করোনা ভাইরাস নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন৷ প্রতিদিন বহির্বিভাগে অনেক জ্বরের রোগী দেখতে হয়৷ এরমধ্যে কারো শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস আছে কিনা তা নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই৷ নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা  কোনো পোশাকও নেই৷ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তারা৷ এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন বলেই মনে করি৷’’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগে ছিল না, তবে এখন এসেছে৷ আমরা আজই চিকিৎসকদের মধ্যে নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিয়েছি৷ আরো কিছু মজুদ আছে৷ অতিরিক্ত কিছু চাওয়া হয়েছে৷ তবে আমার হাসপাতালে ৫০০ চিকিৎসক আছে৷ সবাইকে তো পিপিই দিতে পারব না৷ শুধুমাত্র যারা এই ধরনের রোগী হ্যান্ডেল করছেন তাদের এটা দেওয়া হচ্ছে৷’’ 

ডা. উত্তম বড়ুয়া

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজন মারা গেছেন৷ এ নিয়ে এই ভাইরাসে মোট দুই জনের মৃত্যু হলো৷ মন্ত্রী জানান, নতুন করে আরও চারজনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে৷ এ নিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ জনে৷ তিনি বলেন, করোনাতে আক্রান্ত হয়ে যে দুজন মারা গেছেন তারা দুজনই বৃদ্ধ৷ বিভিন্ন রকমের অসুখে আগে থেকেই আক্রান্ত ছিলেন তারা৷ 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আরও ৪০০ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে৷ চিকিৎসকদের জন্য কয়েক লাখ পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট- পিপিই, মাস্ক এসেছে৷ প্রতিনিয়ত আরো বেশি সংখ্যায় এগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ চীনেও অর্ডার প্লেস করা হয়েছে৷ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, ফলে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলেও জানান মন্ত্রী৷

আজ মারা যাওয়া ব্যক্তির মিরপুর-১-এর উত্তর টোলারবাগের বাড়িটি যে বহুতল ভবনে, সে ভবনটি পুরোপুরি কোয়ারান্টিন করা হয়েছে৷ ওই বাড়ি থেকে কেউ বের হবেন না, পাশাপাশি ভেতরেও কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না বলে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ ভবনটিতে ৩০টি পরিবার বসবাস করে৷