1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জেলবন্দির মৃত্যু: কেন প্রথম দুইয়ে যোগী ও মমতার রাজ্য?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৭ জুলাই ২০২২

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যান্দ রাই জানিয়েছেন, জেলবন্দির মৃত্যুর তালিকায় প্রথম দুই রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।

https://p.dw.com/p/4EhpV
জেলবন্দিদের মৃত্যুর তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থানে।
জেলবন্দিদের মৃত্যুর তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থানে। ছবি: Prabhakar Mani Tiwari

গত দুই বছরে ভারতে চার হাজার ৪৮৬ জন জেলবন্দির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে হয়েছে ৯৫২ জনের। দ্বিতীয় স্থানে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পশ্চিমবঙ্গ। দুই বছরে সেখানে জেলবন্দির মৃত্যুর সংখ্যা ৪৪২। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১৮৫ এবং ২০২১ সালে ২৫৭ জন জেলবন্দি মারা গেছেন। তিন নম্বর স্থানে আছে নীতীশ কুমারের বিহার। সেখানে দুই বছরে ৩৯৬ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে।  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই সংসদে একটি প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য দিয়েছেন।

জেলবন্দির মৃত্যুর তালিকায় নীচের দিকে আছে গোয়া ও কর্ণাটক এবং উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোনো বন্দির মৃত্যু হয়নি। তামিলনাড়ু সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বন্দিমৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। তবে সেই রাজ্যগুলি উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের ধারেকাছে নেই।

নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, ২০২০ থেকে ২০২১-এর মধ্যে পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গেছেন ২৩৩ জন।

কেন শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ?

মানবাধিকার কর্মী কিরীটি রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''জেলবন্দির মৃত্যু নিয়ে ২০০৫ সালে ভারতে নির্দিষ্ট আইন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জেল হেফাজতে কারো মৃত্যু হলে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।'' কিরীটি জানাচ্ছেন, ''দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দিনের পর দিন ধরে এই আইন অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ফলে এই দুই রাজ্যে যে এমন ঘটনা ঘটবে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।''

তবে কারণ শুধু এই একটাই নয়। উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বন্দিমৃত্যুর আরো অনেক কারণ আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জেল নিয়ে কাজ করেন মানবাধিকার কর্মী স্মিতা চক্রবর্তী। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''জেলের পরিকাঠামোর অবস্থা ভয়ংকর। যে জায়গায় একশজন বন্দি রাখা উচিত, সেখানে এক হাজার জনকে রাখা হচ্ছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসাও তাই ঠিকভাবে হয় না। উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাই সেখানে এত বন্দি মারা যাবেন সেটাই স্বাভাবিক।''

দুই দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট উত্তরপ্রদেশ সরকার ও এলাহাবাদ হাইকোর্টকে জানিয়েছে, রাজ্যে ৮৫৩ জন বিচারাধীন বন্দি জেলে আছেন এবং তাদের জেলে থাকার মেয়াদ ১০ বছর বা তার বেশি। এছাড়া ১২ বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বিচারাধীন বন্দিও জেলে আছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এদের জামিনের আবেদনের ফয়সালা অবিলম্বে করুক হাইকোর্ট, নাহলে সর্বোচ্চ আদালত সবাইকে জামিনে মুক্তি দেবে। 

মানবাধিকার সংগঠন পিইউডিআরের সঙ্গে যুক্ত প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জেলের ক্ষেত্রে একটা অভিযোগ খুব বেশি করে আসে। সেটা হলো, জেলরক্ষি ও শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীরা নতুন আসা বন্দিদের উপর প্রবল অত্যাচার করে। মারধর করে। পয়সা দিলে সেখানে যাবতীয় সুবিধা পাওয়া যায়। পয়সা না দিলে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। তাদের মারা হয়। নানারকম অত্যাচার করা হয়।'' আশিস বলেছেন, ''অন্য রাজ্যে এই অত্যাচারের পরিমাণ কম। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে বেশি।'' 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী সাংসদ জেলের একটা কাহিনি শুনিয়েছেন। কাহিনিটা তাকে বলেছিলেন তারই এক মক্কেল। সেই মক্কেল মামলায় হেরে যায় ও তার সাজা হয়। প্রথমেই তাকে যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাকে বলা হয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে সে রাজার হালে থাকবে। নাহলে মুসকিল। মক্কেল টাকা দিতে রাজি হয়। তাকে বলা হয়, বাড়িতে চিঠি লিখতে। ছেলেরা টাকা দিলেই আর কোনো অসুবিধা থাকবে না। এরপরই তাকে জোরে প্রবল জোরে থাপ্পড় মারা হয়। মক্কেল বলে, টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরও কেন মারা হচ্ছে। জবাব আসে, ছোট ট্রেলার দেখানো হলো মাত্র। ডয়চে ভেলের পক্ষে অবশ্য এই কাহিনির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তবে আশিসও জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা কয়েকটি রাজ্যের জেলে ঘটতেই থাকে। তার উপর জেলের ভিতরের অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর। ফলে সেখানে বন্দিদের শরীর খারাপ হওয়া ও মৃত্যুর ঘটনায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।