জেএনইউ উপাচার্যের ভূমিকায় প্রশ্ন
৯ জানুয়ারি ২০২০জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)ক্যাম্পাস এখন আলোচনার শীর্ষে৷ ক'দিন আগে সবরমতী ছাত্রী হস্টেলে ন্যক্কারজনক বহিরাগত সশস্ত্র দুস্কৃতি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বছর বাইশের কৃশকায় ঐশী ঘোষ৷ তাঁর মাথায় ১৬টি সেলাই৷ হাতে ব্যান্ডেজ৷ জখম আরও ৩৩জন পড়ুয়া৷ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের একাংশ এবং জেএনইউ-এর প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রধান হামলার জন্য দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জগদেশ কুমারকে৷
একাধিক মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁকে৷ তবু লড়াইয়ে পিছপা হতে নারাজ ঐশী৷ তিনি ভারতের বাম আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান৷
জেএনইউ-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম ফিলের ছাত্রীটির বাবা-মা দুজনেই রাজনীতি সচেতন মানুষ৷ ওঁরা বাম মনস্ক৷ বাড়িতে সকালের চা-চক্রে রাজনৈতিক আলোচনা শুনে বড় হয়ে ওঠা৷ মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কাজ করার৷ দেরি না করে ছাত্র রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন৷ তারপর ছাত্র সংগঠন এসএফআই৷ জেএনইউ ছাত্র আন্দোলন৷
ক্যাম্পাসে বহিরাগত সশস্ত্র দুস্কৃতি হামলার পিছনে বিরোধী ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আরও স্পষ্ট করে খোদ উপাচার্যের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন তিনি৷ উপাচার্যের ভূমিকার তীব্র নিন্দা সব মহলে৷ এদিকে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হস্টেলে ফিরেছেন বঙ্গ তনয়া ঐশী৷ হস্টেলে বসে এখন রাজনীতিকদের আত্মজীবনী পড়ছেন৷
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, ‘‘আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের পাশে নেই৷ দাবি আদায়ের লড়াইয়ে নেই৷ উল্টে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালাচ্ছে৷ উপাচার্যের মদদেই আক্রমণ হয়েছে৷ এতেই ওঁদের মুখোশ খসে পড়েছে৷''
উপাচার্য মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে গিয়ে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে এসেছেন৷ হাসিমুখে বেরিয়ে আসছেন৷ অথচ সন্তানসম রক্তাক্ত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াননি৷ স্বভাবতই নানা মহলে তাঁর ভূমিকার নিন্দা শুরু হয়েছে৷ শিক্ষাবিদ-সহ অনেকের প্রশ্ন, উপাচার্য কি সত্যিই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছেন?
অতীতে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানির অনুরোধে থেকে পাঁচ বছর জেএনইউ-এর নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডের প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী৷ অভিজ্ঞতায় ভর করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘জেএনইউ-এর উপাচার্য জগদেশ কুমারের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া ৫ জানু্যারির ঘটনাঘটতে পারে না৷ নিরাপত্তা ঘেরাটোপে থাকা ক্যাম্পাসে তিনশো জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীকে অকেজো করে রেখে বহিরাগত সশস্ত্র বাহিনীকে ঢোকানো হয়েছে৷ অভিযোগ উঠছে, নিরাপত্তারক্ষী ও দিল্লি পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে৷ আসলে ওদের দায়ী করা মুর্খামি হবে৷ আসলে উপাচার্যের নির্দেশেই হামলা হয়েছে৷''তাঁর আক্ষেপ, এই ঘটনায় যে পক্ষের যা-ই হোক না কেন, জেএনইউ তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে৷ যা অত্যন্ত দুঃখের৷
অন্যদিকে, যা নিয়ে এত বিতর্ক তা হল, ফি-বৃদ্ধি৷ বর্তমানে ১০টাকা হস্টেল ফি থাকা উচিত? ঐশীর জবাব, ‘‘দেখুন, আমাদের আন্দোলনকে হেয় করার জন্য দেশজুড়ে ফি-বৃদ্ধির অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে৷ আসলে গভীরে না গেলে সমস্যাটা চোখে পড়বে না৷ শুধু হস্টেল ফি নয়, সঙ্গে আরও অনেক কিছু রয়েছে৷ সেগুলো কেউ বলছেন না৷ এতদিন পানীয় জল, বিদ্যুতের খরচ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হত না৷ এখন বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের খরচ দিতে হবে৷ এমনকী, হস্টেলের ঠিকা শ্রমিকদের মজুরিও পড়ুয়াদের দিতে হবে৷ এখন প্রতি মাসে ছাত্রছাত্রীদের ৩ হাজার টাকা দিতে হয়৷ ফি-বৃদ্ধি হলে এই খরচ মাসে প্রায় নয়-দশ হাজার টাকা হবে৷ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা গরিব পড়ুয়ারা কীভাবে খরচ জোগাবে?এসবের বাইরে প্রতি ছ-মাস অন্তর সেমেস্টারে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়৷''
ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করা ইচ্ছে আছে ঐশীর৷ বলেছেন, ‘‘যেখানে জন্মেছি সেখানকার মানুষের পাশে আগে দাঁড়ানো উচিত৷ ভীষণ ইচ্ছে বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করার৷ ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে করব নিশ্চয়৷''