ফরীদির চিরপ্রস্থান
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ফরীদির বাসার পরিচারক রুবেল জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফরীদিকে খুঁজতে তাঁর ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়েন কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তখন চলে যান তিনি৷ এরপর সকাল ১০টার দিকে আবারো রুবেল সেই ফ্ল্যাটে যান এবং কড়া নাড়েন৷ কিন্তু তখনো কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন তিনি৷
ঘরে ঢুকে রুবেল দেখেন যে, ফরীদির বিছানা খালি আর তার বাথরুমের দরজা খানিকটা খোলা৷ সেই দরজার সামনে গিয়ে তিনি দেখেন, ভেতরে পড়ে আছেন হুমায়ুন ফরীদি৷
সেখান থেকে তাঁকে তুলে এনে হুমায়ূন ফরীদির ব্যক্তিগত সহকারী এস এম শাহীন এবং একই বাসার উপর তলায় বসবাসকারী ডাক্তারকে খবর দেন রুবেল৷ ডাক্তার এসে ফরীদিকে মৃত ঘোষণা করে৷
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ুন ফরীদি সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে রাজধানীর মডার্ন হাসপাতালে ছিলেন৷ রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো৷ এছাড়া ফুসফুসের জটিলতাসহ অন্যান্য সমস্যায়ও ভুগছিলেন তিনি৷ দুই দিন আগে হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়৷
গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া৷ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া৷
১৯৫২ সালের ২৯ শে মে ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি৷ পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীর নগর বিস্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে৷
মঞ্চনাটক দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন৷ দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিনয় জীবনে অসংখ্য মঞ্চনাটক, টিভি নাটক ও সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি৷
খুনি, হিংস্র খল-নায়কের চরিত্র থেকে শুরু করে অতি সাধারণ আলা-ভোলা, বোকা-সোকা মানুষের জীবন, যে কোনো চরিত্রেই অতুলনীয় ছিলো ফরীদির অভিনয়৷ সেই অসাধারণ অভিনয় দিয়েই তিনি জয় করেছেন অজস্র মানুষের মন৷
কাউকে কিচ্ছু না বলে, ফাল্গুনের এই প্রথম দিনে এমন হঠাৎ করেই তাঁর নাই হয়ে যাওটা এবার আর অভিনয় নয়৷ মৃত্যুর দৃশ্যটা শেষ করে মুখের মেক-আপ তুলতে তুলতেই এবার আর তিনি হেসে উঠবেন না৷
রুপালি পর্দার মিছে মৃত্যু নয়, বাস্তবেই না ফেরার দেশে ফরীদির চলে যাওয়া৷ তার এই চিরপ্রস্থানে আজ অশ্রু ছলোছল বন্ধু, ভক্ত ও দর্শকের চোখ৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারুক