1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জীবনে ফেরাও কম নেশা নয়

৪ জুন ২০২১

আজ যারা অ্যাসিড মত্ত, কাল তারাই বিপথে যাওয়া ছেলেপুলেদের জীবনে ফেরাবে। সেই হোক আসল নেশা।

https://p.dw.com/p/3uS9E
Togo Drogenabhängigkeit Schmerzmittel Opioide  Lome
ছবি: DW/L. Salm-Reifferscheidt

বাতি জ্বলছে না ঘরে। নিঝুম অন্ধকারে ভাঙা বোতলের মতো মেঝেতে ছড়িয়ে আছে তিনটে ছেলে একটা মেয়ে। তখন উইন্ডোজ চার-পাঁচের যুগ। নাকি তিন? সাব উফারের ঝংকার একটু কড়া। বেশিই কড়া। জানলার কাঁচ ঝনঝনিয়ে উঠছে মাঝে মাঝেই। কম্পিউটারের স্ক্রিন জুড়ে গোল সাইক্লোরোমায় আকাশপাতাল সাঁতার কেটেই চলেছে একটি ছেলে। সেই সাইক্লোরোমাকে সাক্ষী রেখে লাইভ অনুষ্ঠানে একের পর সাইকেডেলিক ফরমেশন তৈরি করে চলেছে পিংক ফ্লয়েড। ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন। অ্যাসিড।

জিভের ডগায় অ্যাসিড নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া তিনটে ছেলে একটা মেয়ে ট্রিপ নিচ্ছে। প্রতিটি সুর মূর্ছনা যেন মনে হচ্ছে শরীরের শিড়া বেয়ে বেয়ে চলেছে কোষ থেকে কোষান্তরে। দেখা যাচ্ছে। সেই ইনার স্পেস ছবিটার মতো। শরীরের ভিতরে এক টাইম ট্র্যাভেল। মাথার ভিতর হাল্কা থেকে আরো হাল্কা। যেন ভেসে থাকা যায় হাওয়ায়। যেন প্রথম স্বর্গ থেকে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে এক নিঃশ্বাসে ফিরে আসা যায় তৃতীয় বা চতুর্থে। আশ্রয় নেওয়া যায় এক মায়াবী বনে। সাঁতার কাটতে কাটতে পৌঁছানো যায় মায়ের জঠরে। সৃষ্টির গোড়ায়। পিংক ফ্লয়েড থামছে না।

একটা গোটা দিন ওভাবেই, ঠিক ওভাবেই ছিটকে ছিল, ঝিট খেয়ে ছিল, মেঝের উপর ভাঙা বোতলের মতো ছড়িয়ে ছিল তিনটে ছেলে আর আর একটা মেয়ে। কলেজ পড়ুয়া। বড়লোক বন্ধুর বদান্যতায় প্রথম অ্যাসিড স্পর্শ। প্রথম হুব্বার মতো শরীরের ভিতর আরেকটা, তার ভিতর আরেকটা, তার ভিতর আরো একটা শরীর আবিষ্কার। করতেই থাকা, করতেই থাকা। সাইকেডেলিক চক্র।

তিনটে ছেলে একটা মেয়ের দুইজন জীবন, অর্থনীতি এবং মধ্যবিত্ততার নিয়মে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জীবনে। দুইজন থেকে গেছে সাইকেডেলিক চক্রে। অ্যাসিড ছাড়া ঘুম হয় না। অ্যাসিড ছাড়া ঘুম ভাঙে না। অ্যাসিডের জন্য চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া। ধোলাই। পুলিশ। লকআপ। মাঝরাতে চেয়ারে বেঁধে ডান্ডা। সকালে আবার অ্যাসিড। কেমিক্যাল ট্যাবলেট জিভের গোড়ায় না দিলে পাগল পাগল করতে থাকতো দুজনেই। পাগলই হয়ে গেছিল বলা চলে। তখন ওদের আলাদা দল। ব্যান্ডের নামও-- অ্যাসিড। কলেজ ক্যান্টিনে খবর পেলাম লিড গিটারিস্ট, আমাদের চেয়ে বছর তিনেকের বড়, ওভার ডোজে শেষ। শ্মশানে ওকে পুড়িয়ে গঙ্গার ধারে বসে জিভে অ্যাসিড নিয়ে মন খারাপ সেলিব্রেট করছে বাকি বন্ধুরা।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

জাম্পকাট

মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। প্রায় এক যুগ। জীবনের নিয়মেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সেই দুই বন্ধুর সঙ্গে। খবরও রাখতাম না, মরে গেছে, নাকি পাগলাগারদে! দেখা হলো এক অ্যাসাইনমেন্টে। অ্যাসিডমুখো সেই বন্ধু বক্তৃতা দিচ্ছে এক বিদেশি কনসুলেটের কনফারেন্স রুমে। বিষয়, নেশা থেকে ফিরে আসার কাহিনি। অন্তত বার বিশেক লকআপে যাওয়া সেই বন্ধু এখন ভারতের অন্যতম ফোটোগ্রাফার। ছবি বানিয়েছে। সপ্তাহে অনেক কাজের ফাঁকেও অন্তত একবার দেখা করে ওর দাদার সঙ্গে। বছর ছয়েক আগে যে দাদা এক নেশার ঠেক থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ওকে। নিজের বাড়িতে রেখে ধীরে ধীরে স্রোতে ফিরিয়েছে। ঠিক যেভাবে একসময় ওই দাদাকে স্রোতে ফিরিয়েছিল আরো এক দাদা। ঠিক যেভাবে আমার বন্ধু দাদা হয়ে স্রোতে ফেরায় আরো আরো অ্যাসিডখেকোদের। এ-ও এক চক্র। সাইকেডেলিক। এ-ও এক নেশা। জীবনের। এ-ও এক লুপ। অ্যাসিডের ঘোরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।