1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাহাজ শিল্পে জবাবদিহিতা চালু করতে ব্যর্থ জাতিসংঘের এজেন্সি

২৭ মে ২০২২

বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে জাতিসংঘের এক এজেন্সি থাকলেও জাহাজ শিল্পের শক্তিশালী লবিয়িংয়ের কারণে সেই প্রতিষ্ঠান এখনো পরিবেশ দূষণ এড়াতে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না৷

https://p.dw.com/p/4BvEF
ছবি: DW

প্রহিবিশনের যুগে অ্যামেরিকায় অ্যালকোহল বিক্রি ছিল বেআইনি৷ তাই যাত্রীবাহী জাহাজের মালিকরা পানামায় তাদের জাহাজ নথিভুক্ত করে যাত্রীদের মদ বিক্রির পথে বাধা দূর করেন৷

রোজ জর্জ এক সাংবাদিক ও লেখক, যিনি জাহাজ শিল্প নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘মানুষ সবসময়ে বলে, মহাসাগরে কোনো আইন নেই৷ কথাটা ঠিক নয়৷ সমুদ্রের আইন কয়েক'শ পৃষ্ঠা দীর্ঘ৷ কিন্তু সমস্যা হলো, সেই আইন কার্যকর করার ঘটনা বিরল৷ যে কোনো আধুনিক জাহাজের মালিক বিশ্বের যে কোনো দেশের পতাকা ভাড়া নিয়ে জাহাজে উত্তোলন করতে পারেন৷ তখন সেই জাহাজ পতাকার দেশের ছোট অংশ হয়ে ওঠে এবং সেখানকার আইনের আওতায় থাকে৷’’

আন্তর্জাতিক ম্যারিটাইম সংগঠনই একমাত্র কর্তৃপক্ষ, যেটি গোটা ক্ষেত্রের জন্য নীতি নির্ধারণ করতে পারে৷ জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানেরও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সেটি ঠিক এর বিপরীতটাই করেছে৷’’

জাহাজ শিল্পের লবিয়িংয়ের কাছে পরাস্ত জাতিসংঘ

‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়র্নমেন্ট’ নামের এনজিও-র প্রধান ফাইগ আবাসভ জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘একাধিক কারণ রয়েছে৷ প্রথমত আইএমও-তে সাধারণত সদস্য দেশের পরিবহণ মন্ত্রণালয়গুলি প্রতিনিধিত্ব করে৷ তারা জাহাজ ও বিমান চলাচল ক্ষেত্র চাঙ্গা করতে চায়৷ জলবায়ু ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা কখনো খুব একটা মাথা ঘামায় নি৷ সেটা জলবায়ু বা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিষয়৷ ফলে এটা একটা কাঠামোগত সমস্যা৷’’

তাছাড়া নীতি নিয়ে ভোটাভুটির দৃষ্টান্তও বিরল৷ আইএমও ঐকমতের ভিত্তিতেই কাজ করতে চায়৷ ফলে জোর গলা ভেটো শক্তির কাজ করে৷ আবাসভ বলেন, ‘‘তৃতীয়ত, এই শিল্পের শক্তিশালী লবিয়িং সংঘ রয়েছে, যেগুলি কার্যত জাতীয় প্রতিনিধিদলের মধ্যেই উপস্থিত৷ অনেক ক্ষেত্রে সেগুলি সরকারকে চাপে রাখে৷’’

৩০ শতাংশ প্রতিনিধিই ব্যবসায়ী, অর্থাৎ নীতি নির্ধারক নন৷ জাতিসংঘের অন্য কোনো এজেন্সিতে এমনটা দেখা যায় না৷ লবিয়িংয়ের একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আবাসভ বলেন, ‘‘যেমন গত দশ বছরে আইএমও-র জার্মান ডেলিগেট অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন৷ তারপর সেই ব্যক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ফোন কল পেলেন৷ জার্মান জাহাজ শিল্পক্ষেত্র সে সময়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে অখুশি হওয়ায় তাঁকে সুর নরম করতে বলা হলো৷’’

‘সিস অ্যাট রিস্ক' নামের এনজিও সংঘের প্রতিনিধি লুসি গিলিয়াম বলেন, ‘‘আমরা আরও অতিকায় জাহাজ তৈরি করে ব্যবসার কৌশল থেকে ফায়দা তুলতে পারছি৷ শিল্পজগত মাত্র এক ইউরো দামের বিকিনি ও টিশার্ট বিক্রি করায় মানুষ সেগুলিকে ফেলনা জিনিস হিসেবে ভাবছে৷ সস্তার শিপিং সেই প্রক্রিয়া আরও সুবিধাজনক করে তুলছে৷ তাদের দূষণেরও মাসুল দিতে হয় না৷ শিপিং জগতের নির্গমনের সমস্যার সমাধান না করে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাও সমাধান যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট৷’’

যে শিল্প পরিবেশ দূষণের মূল্য দেয় না

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোম্পানিগুলিকে নির্গমন কমাতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে৷ উদ্ভাবনও এ ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হতে পারে৷ ফাইগ আবাসভ বলেন, ‘‘আমাদের মতে, কম দূরত্বের জাহাজের জন্য ব্যাটারি, গ্রিন হাইড্রোজেন বা সবুজ হাইড্রোজেন-ভিত্তিক জ্বালানির মতো প্রযুক্তি শূন্যস্থান পূরণ করে গোটা ক্ষেত্রকে কার্বনহীন করতে পারবে৷’’

কিন্তু কোনো ট্যাংকার জাহাজের গতি পরিবর্তন করতে হলে সময় ও উদ্যোগের প্রয়োজন হয়৷ আইএমও তার কোনোটাই করে নি৷ রোজ জর্জ মনে করেন, আত্মসংস্কারের প্রশ্নে শিপিং মোটেই দ্রুত গতি দেখাতে পারেনি৷

ফাইগ আবাসভ বলেন, ‘‘আমাদের মতে, সেটা অবশ্যই সম্ভব৷ তবে নিজে থেকে কিছুই হবে না৷ বিধিনিয়মের মাধ্যমে টেকসই আচরণ ও প্রযুক্তি বেছে নেবার ম্যান্ডেট থাকতে হবে৷ জাহাজ কোম্পানিগুলিকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে৷’’

আরও পরিবেশবান্ধব জাহাজের মূল্য অনেক বেশি হবে৷ কিন্তু এক জার্মান সংরক্ষণ গোষ্ঠী হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছে, যে সে ক্ষেত্রে চার ইউরো ৯৯ সেন্টের টিশার্টের মূল্য মাত্র দুই সেন্ট বেড়ে যাবে৷

ক্রিস্টিয়ান কাউরলা/এসবি