জাহাজ শিল্পে জবাবদিহিতা চালু করতে ব্যর্থ জাতিসংঘের এজেন্সি
২৭ মে ২০২২প্রহিবিশনের যুগে অ্যামেরিকায় অ্যালকোহল বিক্রি ছিল বেআইনি৷ তাই যাত্রীবাহী জাহাজের মালিকরা পানামায় তাদের জাহাজ নথিভুক্ত করে যাত্রীদের মদ বিক্রির পথে বাধা দূর করেন৷
রোজ জর্জ এক সাংবাদিক ও লেখক, যিনি জাহাজ শিল্প নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘মানুষ সবসময়ে বলে, মহাসাগরে কোনো আইন নেই৷ কথাটা ঠিক নয়৷ সমুদ্রের আইন কয়েক'শ পৃষ্ঠা দীর্ঘ৷ কিন্তু সমস্যা হলো, সেই আইন কার্যকর করার ঘটনা বিরল৷ যে কোনো আধুনিক জাহাজের মালিক বিশ্বের যে কোনো দেশের পতাকা ভাড়া নিয়ে জাহাজে উত্তোলন করতে পারেন৷ তখন সেই জাহাজ পতাকার দেশের ছোট অংশ হয়ে ওঠে এবং সেখানকার আইনের আওতায় থাকে৷’’
আন্তর্জাতিক ম্যারিটাইম সংগঠনই একমাত্র কর্তৃপক্ষ, যেটি গোটা ক্ষেত্রের জন্য নীতি নির্ধারণ করতে পারে৷ জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানেরও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সেটি ঠিক এর বিপরীতটাই করেছে৷’’
‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়র্নমেন্ট’ নামের এনজিও-র প্রধান ফাইগ আবাসভ জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘একাধিক কারণ রয়েছে৷ প্রথমত আইএমও-তে সাধারণত সদস্য দেশের পরিবহণ মন্ত্রণালয়গুলি প্রতিনিধিত্ব করে৷ তারা জাহাজ ও বিমান চলাচল ক্ষেত্র চাঙ্গা করতে চায়৷ জলবায়ু ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা কখনো খুব একটা মাথা ঘামায় নি৷ সেটা জলবায়ু বা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিষয়৷ ফলে এটা একটা কাঠামোগত সমস্যা৷’’
তাছাড়া নীতি নিয়ে ভোটাভুটির দৃষ্টান্তও বিরল৷ আইএমও ঐকমতের ভিত্তিতেই কাজ করতে চায়৷ ফলে জোর গলা ভেটো শক্তির কাজ করে৷ আবাসভ বলেন, ‘‘তৃতীয়ত, এই শিল্পের শক্তিশালী লবিয়িং সংঘ রয়েছে, যেগুলি কার্যত জাতীয় প্রতিনিধিদলের মধ্যেই উপস্থিত৷ অনেক ক্ষেত্রে সেগুলি সরকারকে চাপে রাখে৷’’
৩০ শতাংশ প্রতিনিধিই ব্যবসায়ী, অর্থাৎ নীতি নির্ধারক নন৷ জাতিসংঘের অন্য কোনো এজেন্সিতে এমনটা দেখা যায় না৷ লবিয়িংয়ের একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আবাসভ বলেন, ‘‘যেমন গত দশ বছরে আইএমও-র জার্মান ডেলিগেট অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন৷ তারপর সেই ব্যক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ফোন কল পেলেন৷ জার্মান জাহাজ শিল্পক্ষেত্র সে সময়ে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে অখুশি হওয়ায় তাঁকে সুর নরম করতে বলা হলো৷’’
‘সিস অ্যাট রিস্ক' নামের এনজিও সংঘের প্রতিনিধি লুসি গিলিয়াম বলেন, ‘‘আমরা আরও অতিকায় জাহাজ তৈরি করে ব্যবসার কৌশল থেকে ফায়দা তুলতে পারছি৷ শিল্পজগত মাত্র এক ইউরো দামের বিকিনি ও টিশার্ট বিক্রি করায় মানুষ সেগুলিকে ফেলনা জিনিস হিসেবে ভাবছে৷ সস্তার শিপিং সেই প্রক্রিয়া আরও সুবিধাজনক করে তুলছে৷ তাদের দূষণেরও মাসুল দিতে হয় না৷ শিপিং জগতের নির্গমনের সমস্যার সমাধান না করে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাও সমাধান যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট৷’’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোম্পানিগুলিকে নির্গমন কমাতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে৷ উদ্ভাবনও এ ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হতে পারে৷ ফাইগ আবাসভ বলেন, ‘‘আমাদের মতে, কম দূরত্বের জাহাজের জন্য ব্যাটারি, গ্রিন হাইড্রোজেন বা সবুজ হাইড্রোজেন-ভিত্তিক জ্বালানির মতো প্রযুক্তি শূন্যস্থান পূরণ করে গোটা ক্ষেত্রকে কার্বনহীন করতে পারবে৷’’
কিন্তু কোনো ট্যাংকার জাহাজের গতি পরিবর্তন করতে হলে সময় ও উদ্যোগের প্রয়োজন হয়৷ আইএমও তার কোনোটাই করে নি৷ রোজ জর্জ মনে করেন, আত্মসংস্কারের প্রশ্নে শিপিং মোটেই দ্রুত গতি দেখাতে পারেনি৷
ফাইগ আবাসভ বলেন, ‘‘আমাদের মতে, সেটা অবশ্যই সম্ভব৷ তবে নিজে থেকে কিছুই হবে না৷ বিধিনিয়মের মাধ্যমে টেকসই আচরণ ও প্রযুক্তি বেছে নেবার ম্যান্ডেট থাকতে হবে৷ জাহাজ কোম্পানিগুলিকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে৷’’
আরও পরিবেশবান্ধব জাহাজের মূল্য অনেক বেশি হবে৷ কিন্তু এক জার্মান সংরক্ষণ গোষ্ঠী হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছে, যে সে ক্ষেত্রে চার ইউরো ৯৯ সেন্টের টিশার্টের মূল্য মাত্র দুই সেন্ট বেড়ে যাবে৷
ক্রিস্টিয়ান কাউরলা/এসবি