1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঁশের তৈরি সাইকেল

২৬ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ-ভারতে নানা কাজে বাঁশ ব্যবহার করা হয়৷ জার্মানিতে এবার বাঁশের তৈরি সাইকেল নজর কাড়ছে৷ টেকসই উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে আফ্রিকার দেশ ঘানায় সেই সাইকেলের কাঠামো তৈরি হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3MlOm
ছবি: DW

জার্মানির উত্তরে কিল শহরে সাইকেল ছাড়া দৈনন্দিন জীবন আর ভাবাই যায় না৷ তা সত্ত্বেও মাইবু কোম্পানির সাইকেল সত্যি চোখে পড়ার মতো৷ কারণ সেগুলির ফ্রেম বা কাঠামো বাঁশ দিয়ে তৈরি৷ মানুষের প্রতিক্রিয়া শুনে তাঁরা আমোদ পান৷ সবাই জানতে চায় এই সাইকেল মজবুত কিনা৷ অনেকে টোকা মেরে দেখতে চায়, সত্যি বাঁশ তো? নাকি ধাতুর উপর বাঁশের মতো রং লাগানো হয়েছে? সাইকেল দেখে এই দুটি প্রতিক্রিয়াই সবচেয়ে বেশি শোনা যায়৷

২০১২ সালে বাঁশের প্রতি মাক্সিমিলিয়ান শাই ও ইয়োনাস স্টলৎসকে-এর আগ্রহ জাগে৷ ছাত্র হিসেবেই তাঁরা ‘মাইবু' নামের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ ঘানায় টেকসই সাইকেল তৈরি করে ইউরোপে বিক্রি করাই ছিল সেই ব্যবসার মূলমন্ত্র৷ জার্মানির উত্তরে এক উৎপাদনকেন্দ্রে সাইকেলগুলি বিক্রির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়৷ মাইবু কোম্পানির মাক্সিমিলিয়ান শাই বলেন, ‘‘ঘাস হিসেবে বাঁশের তন্তুকে লংগিটিউডিনাল ফাইবার বলা হয়৷ সাইকেলের প্রচলিত উপকরণের তুলনায় এটি একেবারে ভিন্ন৷ বাইরের অংশ শক্ত হলেও নমনীয় এই তন্তুর কল্যাণে কাঠামো খুব হালকা হয়৷ মনে রাখতে হবে, এশিয়ায় ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত বাঁশের কাঠামো অনেক উঁচু হওয়া সত্ত্বেও দমকা বাতাসের মুখেও নমনীয় ও স্থিতিশীল থাকে৷ সে কারণেই এশিয়ায় নির্মাণকাজের কাঠামো এবং আমাদের এখানে সাইকেলের কাঠামো তৈরি করতে বাঁশ ব্যবহার করা হয়৷''

জার্মানির রাজপথে বাঁশের তৈরি সাইকেল

ঘানায় এক স্থানীয় প্রকল্পের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে এই কোম্পানি কাজ করে৷ এর আওতায় ঘানায় সাইকেলের ফ্রেম তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়েছে৷ গোটা অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাদান হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করা হয়৷ মাত্র তিন বছরের মধ্যেই নতুন করে বাঁশ গজায়৷

প্রত্যেকটি ফ্রেম হাতে করে তৈরি করতে প্রায় ৮০ ঘণ্টা সময় লাগে৷ এই কাজের কারণে প্রায় ৪০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ উৎপাদনের কাজে যেটুকু মুনাফা হয়, একটি স্কুল তৈরির কাজে তা ব্যয় করা হয়৷ মাক্সিমিলিয়ান শাই বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু বড়াই করতে চাইনি, যে ঘানায় আমাদের নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে৷ বরং সমানাধিকারের ভিত্তিতে ঘানায় আমাদের সহযোগী রয়েছে৷ ঘানায় উৎপাদন হয়, পরিচালনার রাশও সেখানেই থাকে৷ সেই উপাদানও ঘানায় তৈরি হয়৷ আমাদের সহযোগীরা সেখানকার মানুষ, সংস্কৃতি, রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা সেই কাঠামো ইউরোপে নিয়ে আসি এবং চূড়ান্ত রূপ দেই এবং বিক্রি করি৷''

অন্য কয়েকটি কোম্পানিও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাইকেল তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে৷ যেমন এই সাইকেলের কাঠামোর পাইপ লিনেন ফাইবার দিয়ে তৈরি৷ কিছু কোম্পানি এমনকি সাইকেলে কাঠের চাকাও ব্যবহার করে৷

বার্লিনে টোবিয়াস রুডল্ফ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাইকেল তৈরি করেন৷ একটি মাত্র সাইকেল তৈরি করতে তাঁর অনেক ঘণ্টা সময় লাগে৷ তবে তাঁর মতে, পরিবেশবান্ধব এই সব উপাদান ধাতুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে না৷ টোবিয়াস বলেন, ‘‘যতকাল প্রাকৃতিক উপাদান অনেক কষ্ট করে হাতে করে তৈরি করতে হবে, ততকাল সেটা সম্ভব নয়৷ এমন দাম রাখা সম্ভব নয়, যা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে৷''

মাইবু কোম্পানির বাঁশের তৈরি সাইকেলের দাম দেড় থেকে চার হাজার ইউরো হতে পারে৷ অনেক ক্রেতা গাড়ির বিকল্প হিসেবে এমন সাইকেল ব্যবহার করেন৷ যেমন একজন বলেন, ‘‘জানি, সাইকেলেরও বেশি দাম হয়৷ কিন্তু যখন জানলাম যে আমি সামাজিক ও টেকসই একটি প্রকল্পে সহায়তা করছি, তখন সাইকেলের জন্য প্রতিটি পয়সা সার্থক বলে মনে হয়৷''

বাঁশ দিয়ে তৈরি সাইকেল কি সত্যি টেকসই ভাবধারার সঙ্গে মানানসই? সাইকেলের কাঠামো যেভাবে ঘানা থেকে জার্মানিতে আনা হচ্ছে, তার প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ ইয়োনাস স্টলৎসকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে টেকসই উন্নয়নের তিনটি অংশ রয়েছে এবং সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত পরিবেশের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে৷ সেইসঙ্গে একই গুরুত্বের সঙ্গে টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানদণ্ডও জরুরি৷''

মাক্সিমিলিয়ান শাই মনে করেন, ‘‘আমাদের ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো আপোশ হয়েছে বলে মনে করি৷ আমরা সঠিক দিশায় পদক্ষেপ নিচ্ছি৷ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ প্রভাব রাখতে পারি৷ পরিবেশবান্ধব মানদণ্ডেও আমরা অন্য সাইকেলের তুলনায় এগিয়ে রয়েছি৷''

প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সাইকেল একদিকে পরিবেশ রক্ষা করছে, অন্যদিকে উন্নত ডিজাইনের ক্ষেত্রেও নিজস্ব জায়গা করে নিচ্ছে৷

ডরোটে গ্র্যুনার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য