1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির ব্যাপক বাজেট বৃদ্ধি

১৬ মার্চ ২০২২

২০২১-২২ সালের বাজেট পরিকল্পনা অনুযায়ী জার্মানিকে বড় অংকের ঋণ নিতে হবে৷ এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধ খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ সরকার এই চাপ কতটা সামলাতে পারবে?

https://p.dw.com/p/48ZON
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারও চাপের মধ্যে রয়েছেনছবি: Florian Gaertner/photothek/picture alliance

জার্মান পার্লামেন্ট ২০২২ সালের বাজেটের খসড়া পেশ করতে চলেছে সরকার৷ এতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ইউরো বা নয় লাখ কোটি টাকার নতুন ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে৷ অর্থ মন্ত্রণালয় ভালভাবেই জানে এটি বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বেশ কম৷ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে জার্মানির যে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন পড়ছে তারা উল্লেখ নেই বাজেটের খসড়াতে৷

জ্বালানির দাম বৃদ্ধির আর্থিক প্রভাব বা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ফলে সরকারের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা বিবেচনা করা হয়নি৷ ইউক্রেনে মানবিক খাতে সাহায্যের হিসাব খরচের পরিসংখ্যানে রয়েছে, কিন্তু ইউক্রেন থেকে জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য তা বরাদ্দ নয়৷

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আরও ঋণের প্রয়োজন হবে কি না, প্রয়োজন হলেও তার পরিমাণ কতটা তা সঠিকভাবে অনুমান করা সম্ভব নয়৷ তারা একটি ‘মূল বাজেট' তৈরি করেছেন, যেটি পার্লামেন্টে পাঠানোর আগে বুধবার অনুমোদন করতে চায় কেন্দ্রীয় পরিষদ৷ এর মোট পরিমাণ ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো বা ৪৩ লাখ কোটি টাকার বেশি৷

জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে এই বাজেট অনুমোদন হতে জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে৷ এই সময়ের মধ্যে আর কী কী খরচ লাগবে তা হিসাব করে সম্পূরক বাজেটে যুক্ত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়৷ দেশটির রক্ষণশীল বিরোধী দল খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ) এবং খ্রিস্টীয় সামাজিক দল (সিএসইউ) মনে করে অতিরিক্ত ঋণের পরিমাণ শেষ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ডলারে পৌঁছাবে৷

ইউক্রেনে হামলার প্রেক্ষিতে এতদিনে রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে সরে এসে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির দুই শতাংশের বেশি ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছে ওলাফ শলৎসের সরকার৷ প্রতিশ্রুত সেই ১০০ বিলিয়ন ইউরো বা ১০ হাজার কোটি ইউরোর যোগানে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ এতে ঋণের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, তবে বিশেষ তহবিলটি বার্ষিক বাজেটের অংশ নয়৷ ফলে ঋণ অনুপাতে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না৷

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

মূল বাজেটে একটি বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে রাজস্ব প্রাপ্তি নিয়ে, যা নির্ভর করবে আগামী দিনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপরে৷ জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারও চাপের মধ্যে রয়েছেন৷ গত বছর সরকার পরিবর্তনের ফলে চলতি বছরের জন্য কোনো বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি৷ পয়লা জানুয়ারি থেকে ফেডারেল বাজেটের উপর নির্ভরশীল মন্ত্রণালয়, সংস্থা এবং অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী বাজেট নিয়ে কাজ করছে৷ তারা নিজেরাই জানে না কী পরিমাণ ব্যয় করার অনুমতি রয়েছে তাদের৷

ডিসেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন লিন্ডনার৷ ২০২২ সালের খসড়া বাজেট নিয়ে কাজ করতে হয়েছে তাকে৷ ওমিক্রনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আগে সেই খসড়া লিখেছিলেন তার পূর্বসূরি ওলাফ শলৎস (বর্তমান চ্যান্সেলর )৷

মুক্ত গণতন্ত্রী দলের (এফডিপি) নেতা লিন্ডনার ঋণের সীমা বাড়াতে রাজি নন৷ এদিকে জ্বালানির সরবরাহ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে৷ গ্যাস এবং ‘হিটিং অয়েল' অর্থাৎ ঘর উষ্ণ রাখার তেলের দাম বেড়ে চলেছে৷ গ্যাস স্টেশনগুলিতে, এক লিটার পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম এখন দুই ইউরো বা ২০০ টাকারও বেশি৷

খসড়া বাজেটে দরিদ্রদের জন্য ‘হিটিং অ্যালাওয়েন্স' অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং গ্যাস মজুতের জন্য বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে৷ কিন্তু দাম বাড়তে থাকলে সেই বরাদ্দ যথেষ্ট হবে না৷

লিন্ডনার গাড়িচালকদের উপর বোঝা কমাতে চান এবং পেট্রল ব্যবহারকারীদের জন্য অস্থায়ী ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ক্যাশ রেজিস্টারে লিটার প্রতি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাটা হবে৷ কিন্তু লিটারে প্রতি দশ সেন্ট ছাড় দিলেও জার্মান কোষাগারে মাসিক খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৫ কোটি ইউরো বা পাঁচ হাজার ২১৪ কোটি টাকার কাছাকাছি৷

গ্রিন পার্টির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট হাবেক, জ্বালানির সামগ্রিক ব্যবহার কমাতে ‘দক্ষতা' এবং ‘প্রণোদনা'-র আহ্বান জানিয়েছেন এবং পেট্রল খরচ কমাতে হাইওয়েতে গতিসীমার প্রস্তাব করেছেন৷

বিতর্কের মূল জায়গাটা হলো বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ঋণ নেয়া হবে কি না৷ লিন্ডনার এবং তার দল এফডিপি চায় ২০২৩ সালের প্রথম দিক থেকে সরকার যতটা আয় করবে ততটুকুই ব্যয় করবে৷ এটি তার তরফে কোনো রাজনৈতিক দাবি বা ইচ্ছা নয় বরং বাস্তবতা নিরিখেই এমন সিদ্ধান্ত বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন লিন্ডনার৷

জার্মান সংবিধানে শুধু জরুরি পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণসীমা অতিক্রমের অনুমতি দিয়েছে৷ লিন্ডনার বলেন, ‘‘আমরা সবাই আশা করছি করোনার সময় যেমন হয়েছিল, তেমনভাবে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাব৷'' সংবিধান মেনেই ২০২৩ সালের জন্য লিন্ডনার মাত্র ৭৫০ কোটি ইউরো বা ৭১ হাজার কোটি টাকা ঋণের পরিকল্পনা করেছেন৷ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করে তারপর ব্যয়ের বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷

আরও কিছু প্রশ্ন

আগামী বছরের জন্য প্রাথমিক আর্থিক পরিকল্পনায়, জোট সরকার চুক্তিতে কিছু প্রকল্পের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল৷এর মধ্যে ছিল অভিভাবক ভাতা চালু করা, মৌলিক শিশু ভাতা এবং বয়স্ক, অসুস্থদের সেবা ভাতার ব্যবস্থা৷ কিন্তু বাস্তবে তার দেখা মেলেনি৷ অর্থ মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে সব প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার জন্য নতুন ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়৷ কিন্তু জোট শরিকরা কি একইভাবে বিষয়টি দেখবে? প্রশ্ন উঠছে এমনই৷

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থি শাখা ২০২৩ সালে ‘ঋণ সীমা' স্থগিত রাখা এবং ধনীদের জন্য উচ্চ করের প্রস্তাব দিয়েছিল৷ যদিও এফডিপি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে৷

আরকেসি/এসিবি (সাবিনে কিনকার্ৎজ)