1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির প্রথম মেডিক্যাল স্কুল – মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফার

৬ জুন ২০১১

জার্মানিতে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলা হয় হানোফারে৷ প্রতি বছর অন্তত সাত হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে মেডিক্যালে পড়া সুযোগ করে দেয়া করা হয়৷ তবে সেটি ছিল ৬০-এর দশকের কথা৷

https://p.dw.com/p/11UxO
১৯৬১ সালে মাত্র সাতটি মেডিক্যাল স্কুল খোলার অনুমতি দেয়া হয় জার্মানিতেছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb

১৯৬১ সালে মাত্র সাতটি মেডিক্যাল স্কুল খোলার অনুমতি দেয়া হয় জার্মানিতে৷ আর তার পরপরই, ১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মকালীন সেমেস্টার চালুর মধ্যে দিয়ে মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফার শুরু করে তার যাত্রা৷ মাত্র ১২ জন শিক্ষক এবং ৪১ জন ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে শুরু করা হয় ক্লাস৷ তবে দশ বছরের মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ দশ বছরের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজারে আর কুড়ি বছরের মধ্যে তা তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়৷

মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফার প্রথম বারো বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্লিনিক এবং আরো অনেক ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হয়৷

Flash-Galerie Hannover
মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারের বাৎসরিক বাজেট ৫৮৩ মিলয়ন ইউরোছবি: picture-alliance/dpa

ভারতীয় ছাত্র বিশ্বাস শর্মা

৩১ বছর বয়স্ক ভারতীয় ছাত্র বিশ্বাস শর্মা মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারে পিএইচডি করছেন৷ তিনি ডিএএডি থেকে বৃত্তি পেয়েছেন৷ সস্ত্রীক তিনি বসবাস করছেন হানোফারে৷ তাঁর গবেষণার বিষয় মেডিক্যাল জেনেটিক্স৷ জার্মানিতে তিনি তিন বছর থাকবেন৷ কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন জার্মানিতে আসার জন্য? বিশ্বাস শর্মা জানালেন, ‘‘প্রথমে আমি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছিলাম৷ আমি মেডিক্যাল জেনেটিক্স বিষয় নিয়ে কাজ করছিলাম, তাই লক্ষ্য ছিল এই বিষয়েই গবেষণা চালিয়ে যাওয়া৷ মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারে আমি আমার গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়েছিলাম৷ মেডিক্যাল রিসার্চের পাশাপাশি বায়োলজিক্যাল রিসার্চও এখানে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব৷ আমাকে আমার বায়োডাটা, এখানকার সুপারভাইজারের একটি চিঠি দেখাতে হয়েছে ডিএএডি-কে৷ আর সঙ্গে ছিল আমার প্রজেক্ট৷ অত্যন্ত বিশদভাবে আমাকে জানাতে হয়েছে, দেখাতে হয়েছে কোন বিষয় নিয়ে আমি গবেষণা করতে চাই, কেন করতে চাই৷ এই প্রজেক্ট তৈরিতে আমার জার্মান প্রফেসর সাহায্য করেছিলেন৷''

৫০টি ফুটবলের মাঠের সমান ক্যাম্পাস

কতবড় মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারের ক্যাম্পাস? প্রায় ৫০টি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের চারপাশে বিভিন্ন ক্লিনিক৷ শিশুরোগ, হৃদরোগ, চোখ, স্ত্রীরোগ – এসব ক্লিনিক ছাড়াও রয়েছে একটি ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টার৷

বারোশোরও বেশি চিকিৎসক মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারে কাজ করছে৷ নার্স রয়েছে চৌদ্দশোরও বেশি৷ প্রতিবছর প্রায় চার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এ বছর গ্রীষ্মকালীন সেমেস্টারে ভর্তি হয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী৷

জার্মানি আর ভারতের মধ্যে পড়াশোনা এবং গবেষণায় পার্থক্য কোথায়? বিশ্বাস শর্মা জানালেন,

‘‘ জার্মানিতে সবকিছু সময়মত হয়৷ সবাই ঘড়ির কাঁটা ধরে চলাফেরা করে৷ এছাড়া যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে আমরা প্রতিদিন গবেষণার কাজ করি ভারতে এসব পাওয়া যায় না৷ গবেষণার জন্য প্রয়োজনে যদি কোন রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা হাজির করা হয়৷ কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না৷ এছাড়া আমার সুপারভাইজার অত্যন্ত বন্ধুসুলভ৷ সারাক্ষণই আমাদের গবেষণায় সাহায্য করছেন, জানতে চাইছেন কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা৷''

বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত এমএইচএইচ

মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারের বাৎসরিক বাজেট ৫৮৩ মিলয়ন ইউরো৷ এই বাজেটের মধ্যে থেকেই গবেষণা, চিকিৎসা, চিকিৎসক এবং নার্সদের বেতন নির্ধারণ করা হয়৷ এছাড়া প্রতিবছর যেসব ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দেয়া হয় সেই অর্থের যোগানও আসে এই বাজেটের মধ্যে থেকেই৷ বলা প্রয়োজন, প্রতি বছর মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফারে প্রায় ছয়শো ইন্টার্ন আসে৷

ডিএএডি-র সঙ্গে কাজ করছে মেডিৎসিনিশে হোখশুলে হানোফার৷ যার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রী বা চিকিৎসক এবং গবেষকরা এখানে আসতে পারে৷ পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট ছাড়াও খন্ডকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে৷

ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে যেসব ছাত্র-ছাত্রী জার্মানিতে পড়াশোনা বা গবেষণার জন্য আসতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বিশ্বাস শর্মার পরামর্শ,‘‘প্রথম পরামর্শ হবে জার্মান ভাষা শেখা৷ খুব ভাল করে না শিখলেও ধারণা থাকা জরুরি৷ গবেষণার জন্য কেউ যদি আসতে চায় তাহলে বলবো আগে বিষয় ঠিক করে নিতে৷ ডিএএডি বা বিশ্ববিদ্যালয় যাই হোক না কেন – নিজস্ব প্রজেক্ট দেখাতে হবে৷ এই প্রজেক্টের ওপরই নির্ভর করবে প্রার্থীর আবেদন পত্র গ্রহণ করা হবে কিনা৷ লক্ষ্য স্থির করতে হবে৷ প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে যে সব প্রশ্ন করা হবে তার যথাযথ উত্তর দিতে হবে৷ তাহলেই গবেষণার জন্য জার্মানির দ্বার উন্মুক্ত হবে এবং তা বৃত্তি সহ৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ