1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির গোয়েন্দা বিমান ‘ইউরো হক্’

২৮ নভেম্বর ২০১১

গোয়েন্দা বিমান ব্যবহারে পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় জার্মানি৷ তাই গত অক্টোবরে জার্মান বিমান বাহিনী প্রদর্শন করলো নতুন এক গোয়েন্দা বিমান, ইউরো হক্৷ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই মনুষ্যবিহীন যানটি একনাগারে চলতে পারে ত্রিশ ঘণ্টা৷

https://p.dw.com/p/13IF7
গোয়েন্দা বিমানের চেহারা এমনই রহস্যজনক হয়ে থাকেছবি: AP

দীর্ঘ দশ বছর ধরে পরিকল্পনা এবং উন্নয়নকাজ শেষে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয় ‘ইউরো হক্'৷ এই গোয়েন্দা বিমানের পাইলট থাকবেন ভূমিতে৷ জার্মানির কোন এক বিমান ঘাঁটিতে বসে কম্পিউটার গেমের মতই নিয়ন্ত্রণ করবেন তাঁর বিমান, যেটি কিনা ভূপৃষ্ঠ থেকে ষাট হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে সক্ষম৷ কোন রকম বিরতি বা জ্বালানি ছাড়াই বার্লিন থেকে টোকিও পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারে এই বিমান৷ অবশ্য শুধু ঘোরাঘুরি এই বিমানের কর্ম নয়৷ ময়লা পরিষ্কারের যন্ত্র ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার'এর মতই কাঙ্খিত লক্ষ্যের সব তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পারদর্শী ইউরো হক্৷ তথ্য বলতে কোন শত্রুঘাঁটির ছবি, ভিডিও ফুটেজ যেমন সংগ্রহ করবে আকাশের এই গোয়েন্দা, তেমনি কাঙ্খিত এলাকার টেলিফোন কল, মুঠোফোনে দেয়া ক্ষুদেবার্তা, টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠান - সবই একেবারে ছেঁকে নেবে এটি৷একইসঙ্গে সেসব তথ্য পাঠিয়ে দেবে ভূমির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে৷

Anti Terror Arbeit der USA Drohne NO FLASH
চালকবিহীন মার্কিন ড্রোন বিমানছবি: picture alliance/dpa

২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে নামতে পারে ইউরো হক্৷ ইতিমধ্যে এটি নিয়ে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে৷ জার্মান বিমান বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হোলগার নয়মান এই প্রসঙ্গে জার্মান সাপ্তাহিক ডেয়ার স্পিগেলকে জানান, মনুষ্যবিহীন এই ড্রোন বিমানটি অনেকটাই মার্কিন গোয়েন্দা বিমানের মত, যেগুলো এক দশক আগেই সেদেশ ব্যবহার করতে শুরু করেছিল৷

ইউরো হক্ দেখতে মার্কিন গোয়েন্দা বিমানগুলোর মত হলেও প্রযুক্তিগত দিকে থেকে অনেক ব্যবধান রয়েছে৷ এই বিমানগুলোতে জার্মানির তৈরি সেন্সর এবং নজরদারি ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে৷ একটু আগেই বলেছি, ভূপৃষ্ঠ থেকে ষাট হাজার ফুট উপর দিয়ে চলতে সক্ষম এই গোয়েন্দা বিমান৷ ফলে এটি যাত্রাবাহী বাণিজ্যিক বিমানগুলোর জন্য কোন বাড়তি বিড়ম্বনাও তৈরি করবে না৷ কেননা, বাণিজ্যিক বিমানগুলো সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার ফুট উপরে উড়তে সক্ষম৷

এই জার্মান ড্রোন বিমানের কারিগরি দিকে খানিকটা নজর বোলানো যাক৷ স্পিগেল অনলাইন এর তথ্য অনুযায়ী, মনুষ্যবিহীন যানটির ওজন মাত্র ১৫ টন৷ এটি তৈরি করা হয়েছে কার্বন ফাইবার দিয়ে৷ লম্বায় বিমানটি ১৪.৫ মিটার তবে পাখাসহ এটি ৪০ মিটার চওড়া৷ একনাগাড়ের ২৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম এই ড্রোন৷ এই ক্ষমতা ব্যবহার করে আফগানিস্তানের মত সংঘাতপ্রবণ এলাকা অনায়াসে পর্যবেক্ষণ করে জার্মানিতে ফিরে আসতে পারবে ইউরো হক্৷ আরো যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য সেটি হচ্ছে, ইউরো হক্'এ ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যন্ত উচ্চক্ষমতার সেন্সর৷ ফলে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে কিংবা বালুঝড়ের মধ্যেও দিব্যি নজরদারির কাজ করতে সক্ষম হবে এটি৷

জার্মানির জন্য এবং জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও ইউরো হক্ তৈরি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ ইউরোপীয়ান অ্যারোনটিক ডিফেন্স ও স্পেস কোম্পানি ইএডিএস এবং একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গোয়েন্দা বিমানের ইউরোপীয় সংস্করণ তৈরি করেছে৷ চলতি বছরের জুলাই মাসে ‘ইউরো হক্' এর একটি নমুনা বিমান ১০,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জার্মানির ম্যানশিং বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছায়৷ মার্কিন এবং ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা এই উড়ালের গতিপথ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন৷

আগামী গ্রীষ্মে কাজ শুরু করতে প্রস্তুত ইউরো হক্৷ ইতিমধ্যে এগারো জন জার্মান পাইলটকে এই ড্রোন চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ আপাতত পাঁচটি ইউরো হক্ ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে বুন্ডেসভ্যার অর্থাৎ জার্মান সশস্ত্র বাহিনী৷ নজরদারির কাজেই মূলত এসব বিমান ব্যবহার করা হবে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক