জার্মানিতে শ্রমশোষণ ও শ্রমিকদের দুরবস্থার চিত্র
করোনা সংকট জার্মানির মাংস ব্যবসা এবং অন্য কিছু খাতের শ্রমিকদের দুরবস্থার ভয়াবহতা প্রকাশ করেছে৷ অবশেষে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের৷ ছবিঘরে জার্মানির শ্রমবাজারে শ্রমিকদের দুর্দশার খণ্ডচিত্র...
যে কারণে জার্মানিতে শ্রমিকের অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ
করোনার প্রথম ঢেউ সামলে নিয়ে ম্যার্কেল সরকার যখন কিছুটা স্বস্তিতে, তখন আবার শুরু হয় সংক্রমণ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ট্যোনিসে ১৫০০ শ্রমিকের সংক্রমিত হওয়ার খবরও আসে তখন৷ সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ অনেক খাতে শ্রমিকদের চরম দুর্দশার বাস্তবতা৷
কম বেতন, বেশি খাটানো, নিম্নমানের বাসস্থান
অনেক শ্রমিক জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন যত ঘণ্টা কাজ করার কথা কর্মক্ষেত্রে আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয় তাদের৷ বাড়তি কাজের জন্য কোনো মজুরি দেয়া হয় না৷ এক ঘরে থাকতে হয় ১০ থেকে ১৫ জনকে৷ অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের যাতায়াতের সুবন্দোবস্তও নেই৷ আট সিটের মিনিবাসে ১৫ জন বসানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে৷
‘আমি আর জার্মানিতে যাবো না’
রোমানিয়া থেকে জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের একটি খামারে কাজ করতে এসেছিলেন মারিয়ানা কস্তেয়া৷ দু মাস কাজ করেই মন উঠে গেছে তার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আর কখনো জার্মানিতে ফিরে যাবো না৷’’কারণ হিসেবে মারিয়ানা জানান, কখনো কখনো বিনা বেতনে কাজ করা, ছোট একটা ঘরে ৮-১০ জনের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকা, ৩০ জন মিলে একটা টয়লেট ব্যবহার করা তার পক্ষে আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়৷
যেসব খাতে শ্রমিকরা বেশি অসহায়
এ পর্যন্ত মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বেশি অভিযোগ এলেও ডেলিভারিম্যান/উয়োম্যান, সেবাকর্মী, নির্মাণশ্রমিক এবং মৌসুমী কৃষকদের কাছ থেকেও অনেক অভাব-অভিযোগের কথা জানতে পেরেছে সংবাদমাধ্যম৷
‘ক্লান্তিকর, স্নায়ুক্ষয়ী অভিজ্ঞতা’
নাম প্রকাশ করলে বড় বিপদ হতে পারে এই ভয়ে নিজেকে অ্যালেক্স নামে উপস্থাপন করা এক শ্রমিক জানিয়েছেন, ট্যোনিসে কাজের চাপ আর ভয়াবহ অব্যবস্থা সহ্য করতে না পেরে সম্প্রতি ছোট, অখ্যাত একটা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন৷ এখানেও অন্যায়, অনিয়মের শিকার হলে নিজের দেশ বুলগেরিয়ায় ফিরে যাবেন তিনি৷ ‘‘ক্লান্তিকর এবং স্নায়ুক্ষয়ী অভিজ্ঞতা’’র মধ্য দিয়ে আর যেতে চান না তিনি৷
মূল কারণ সাবকন্ট্রাক্ট
শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করার ঘটনাগুলো ঘটছে মূলত মধ্যসত্ত্বভোগী একটা শ্রেণির কারণে৷ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক দরকার হলে ছোট কিছু প্রতিষ্ঠানকে সাবকন্ট্রাক্ট দেয়৷ সাবকন্ট্রাক্ট নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত পূর্ব ইউরোপ থেকে দক্ষ শ্রমিক এনে কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে৷ শ্রমিকরা সাবকন্ট্রাক্টরদের সঙ্গে চুক্তি করে কাজে যোগ দেন বলে কোনো সমস্যার দায় ট্যোনিসের মতো কোম্পানিগুলো কখনোই নেয় না৷
মন্ত্রী বললেন, ‘‘সব জানা কথা!’’
সম্প্রতি জার্মানির শ্রমমন্ত্রী হুবার্টাস হাইল বলেছেন, যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তার অধিকাংশই পুরোনো৷ তিনি স্বীকার করেন, এসব জানা থাকলেও এতদিন খুব কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়নি৷ এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে আগামীতে শ্রম আইন এবং শ্রমিকের অধিকার খর্ব করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷