জার্মানিতে রোগীর সেবাদানে ফার্মেসির ভূমিকা
জার্মানির স্বাস্থ্যসেবার বেশ সুনাম রয়েছে সারা বিশ্বে৷ স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন মাধ্যমের পাশাপাশি দেশের ফার্মেসির রয়েছে একটি বড় অবদান৷ জেনে নিন, রোগীদের সুচিকিৎসায় ফার্মেসির সেবা দানের কিছু কথা৷
প্রথমেই চাই প্রেসক্রিপশন
জার্মানিতে যে কোনো ওষুধ কিনতে হলে ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয়৷ সোজা কথা, ডাক্তার না দেখিয়ে বা ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ পাওয়া যায়না৷ অবশ্য মাথাব্যথা ও সর্দি-কাশির মতো ছোটখাটো অসুখের জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ওষুধ কেনা সম্ভব৷
ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়
দেখা গেলো প্রেসক্রিপশনে লেখা আপনার যে ওষুধটির প্রয়োজন সেটা হয়তো ঐ মুহূর্তে ফার্মেসিতে নেই৷ এরকম পরিস্থিতিতে আপনার শরীরের গুরুত্ব বুঝে ওষুধটি ফার্মেসির যে কোনো কর্মী আপনার বাড়িতে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে দেয় বিনামূল্যে৷ আর যদি এমন ওষুধ হয় যেটা পরে সেবন করলেও চলবে, সেক্ষেত্রে অর্ডার দেয়া ওষুধ সাধারণত সন্ধ্যায় পৌঁছে দেয়া হয়৷
কাজটি যাঁরা করে থাকেন
গাড়ি বা সাইকেলে চড়ে বাড়ি পোঁছে দেয়ার জন্য বেশিরভাগ ফার্মেসিতে রয়েছে আলাদা কর্মী৷ এই কাজটি সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীরা করে থাকে৷ গৃহিণী ও অবসরপ্রাপ্তরাও বাড়তি আয়ের জন্য এমন কাজ করে থাকেন৷ শুধুমাত্র সেবাদানের জন্যও অনেকে এসব করে থাকেন৷
দিনে গড়ে পঁচিশ হাজার ওষুধ
জার্মানিতে দিনে গড়ে ২৫ হাজার ওষুধ রোগীদের বাড়িতে পোঁছে দেওয়া হয়৷ ‘এই সেবা (বাড়িতে ওষুধ পোঁছে দেয়া) আমরা দিয়ে থাকি অতি আনন্দের সাথে,’’ একথা জানান জার্মানির আন্সবাখ শহরের একটি ফার্মেসির প্রধান জেসমিন জোভারাস৷
দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার
শহরের প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে একাধিক ফার্মেসি৷ আর সে কারণেই যেসব রোগী ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকেন তাঁদের বাড়িতেই ওষুধ পৌঁছে দেয়া হয়৷ তবে কোনো এলাকায় ফার্মেসির সংখ্যা কম হলে বা বিশেষ প্রয়োজনে আরো দূরে গিয়েও ওষুধ পোঁছে দিয়ে আসে অনেক ফার্মেসি৷
ইমারজেন্সি ডিউটি
জার্মানির যে কোনো দোকান বা অফিস আদালতের মতো ফার্মেসিগুলোও রাতে বন্ধ থাকে৷ বন্ধ থাকে রবিবার বা সরকারি ছুটির দিনেও৷ তাই জরুরি ভিত্তিতে এসব দিনে বা সময়ে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে একটি করে ফার্মেসি খোলা রাখা হয় রোগীদের সেবা দিতে৷ তাছাড়া প্রতিটি ফার্মেসিতে একটি করে লেটার বক্স থাকে, সেটাতে প্রেসক্রিপশন রেখে দিলেও একই কাজ হয়৷
প্রবীণ বা সিরিয়াস রোগীদের বাড়তি সুবিধা
বেশি অসুস্থ, প্রবীণ কিংবা যাঁদের একটি শিশু অসুস্থ কিন্তু বাড়িতে আরেকটি শিশু রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বা টেলিফোনেও ওষুধের অর্ডার দেয়া যায়৷ তাছাড়া তুষারপাত বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে যদি কোনো প্রবীণ বাইরে বের হতে না পারেন, তাঁদের ওষুধও ঘরে পৌঁছে যায় বিনামূল্যে৷
শুধু ওষুধ বিক্রিই কাজ নয়
প্রয়োজনে ফার্মেসিতে ব্লাডপ্রেশার বা রক্তে চিনির পরিমাণ মাপা যায় কিংবা নিজের শরীরের ওজন নেয়া সম্ভব৷ তাছাড়া ওষুধ সেবনের নিয়ম-কানুন ছাড়াও স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা পরামর্শ দিতেও তাঁরা সবসময়ই ব্যস্ত থাকেন৷
তবে সুযোগের অপব্যবহার নয় কিন্তু!
তবে জেসমিন জোভারাস জানান, কেউ যেন সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার না করে সেদিকেও তাঁরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখেন৷ অর্থাৎ রোগীর অবস্থা ভালো করে জেনে নিয়ে, তবেই তাঁরা ওষুধ বাড়িতে পৌছানোর দায়িত্ব নিয়ে থাকেন৷
যাঁরা সুবিধা নিয়ে থাকেন
জার্মানির ফার্মেসি সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছোট ছোট এলাকায় অর্থাৎ যেসব এলাকায় জনসংখ্যা ২০,০০০ এর মধ্যে তাদের শতকরা ৩৭ জন এই সুবিধা নিয়ে থাকেন৷ বড় শহর বা যেসব এলাকার জনসংখ্যা ৫০০,০০০ এর বেশি তাদের মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগ মানুষ এই সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন৷
ম্যাগাজিন
ফার্মেসি থেকে মাসে দু’বার নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন বের করা হয়৷ যাতে স্থান পায় নারী, পুরুষ, শিশু, বুড়ো সকলের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷ এই ম্যাগাজিন যে কেউ নিয়মিত পড়লে নিজেকে নানা রোগবালাই থেকে দূরে রাখা সম্ভব৷