1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বাসা সংকটে ভাড়াটিয়াদের যত ভোগান্তি

১৮ অক্টোবর ২০২১

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আবাসনের কাজে ধীরগতি আর প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়তে থাকায় জার্মানিতে বাসস্থান সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে৷

https://p.dw.com/p/41pDZ
Deutschland | Mietshaus in der Nähe vom Alexanderplatz in Berlin
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance

আপনি কী করেন -- এ প্রশ্ন ছোটখাট আড্ডায় প্রায়ই শুনতে পাবেন৷ এমন প্রশ্ন জার্মানির অনেক শহরের লোকেরাই করে থাকেন৷ তবে দেশটির রাজধানী বার্লিনে কিন্তু প্রশ্নটি একটু অন্যরকম৷ সেখানে প্রায়ই শুনতে হয় -- আপনি কত টাকা বাসা ভাড়া দেন -- এ প্রশ্ন৷

আর দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বাস করছেন এমন বাসিন্দারা আপনাকে বলবে যে আগের দিনগুলো অনেক ভালো ছিল৷ অর্থাৎ, যে সময়ে আপনি কথা বলছেন ঠিক সেসময়ের আগের দিনগুলো নাকি অনেক ভালো ছিল৷ কারণ আগে কম দামে পছন্দমতো বাসা পাওয়া যেত৷ এখন আর তা নেই৷

এতসব অভিযোগ আর জিজ্ঞাসার কারণ হলো, রাজধানী শহরটিতে আয় অনুযায়ী পছন্দমতো বাসা ভাড়া পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

বাসা পাওয়ার বিষয়ে ভাড়াটিয়াদের এমন উদ্বেগ আর অভিযোগ নিয়ে ডয়চে ভেলেকে বার্লিন রেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের ডাইরেক্টর রাইনার ফিল্ড বলেন, ‘‘দিন দিন এখানে চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে বাসা তৈরি হচ্ছে না৷'' 

বার্লিন রেন্টার অ্যাসোসিয়েশন হলো রাজধানী শহরের ভাড়াটিয়াদের সংগঠন৷ জার্মানির সব শহরেই এমন সংগঠন রয়েছে যারা ভাড়াটিয়াদের ভালমন্দ দেখভালের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে৷

সবযায়গাতেই একই অবস্থা

এমন পরিস্থিতিতে পছন্দসই ও সামর্থ্য অনুযায়ী বাসা না পাওয়ার বিষয়ে ভাড়াটিয়ারা বেশ হতাশ৷ দুই দশক আগেও নাকি পরিস্থিতি এমন ছিলো না৷ 

ভাড়াটিয়াদের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে সরকার বাসা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিল৷ কিন্তু সরকারের এ পদক্ষেপেরও সমালোচনা আছে৷ সমালোচকদের যুক্তি, সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানুষকে আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ বাসা পেতে নয় বরং আবাসন কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে৷

আর বাসা ভাড়ার বলগা টেনে ধরতে বার্লিন শহর কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিল৷ কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাসা বাড়া বাড়াতে পারছিল না বাড়ির মালিকরা৷ কোনে কোনো ক্ষেত্রে বাসা ভাড়া কমিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল৷

কিন্তু বার্লিন প্রশাসনের এ পদক্ষেপও টিকেনি৷ কারণ আদলতের এক রায়ে এ সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়ে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে যে বাসা ভাড়া নির্ধারণ করা আছে তার পরে বার্লিন প্রশাসন নতুন আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না৷ আর তাই পরিস্থিতি আগের মতোই থেকে গেল৷

গত মাসে বার্লিনের ভাড়াটিয়ারা বড় বড় প্রতিষ্ঠান হাত থেকে বাসা ভাড়ার বাজারটি বেড় করে আনার পক্ষেই গণভোট দিয়েছে৷ এমন গণভোটের ফলে চাপে পড়েছে সাসংদরা৷ এ কারণে গত মাসে অনুষ্ঠিত দেশটির জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় সহজলভ্য আবাসনের বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম এজেন্ডা৷

Bundesgartenschau 2019 Heilbronn
জার্মানির একটি আবাসিক এলাকা৷ ছবি: Imago Images/A. Hettrich

তবে কারো কারো দাবি, জার্মানির আর কয়েকটি শহরে তুলনায় নাকি বার্লিনে বাসা ভাড়া অনেক কম৷ তবে ইউরোস্ট্যাট-এর এক পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে রাজধানী শহরটিতে বাসা ভাড়া শতকরা ছয় ভাগ বেড়েছে৷ রাজধানী শহরে বাসা ভাড়া বাড়ার এ হার একটু বেশিই বলতে হবে কেননা জার্মানির আরেক বড় শহর মিউনিখের তুলনায় তা অন্তত দ্বিগুণ বেড়েছে৷   

আর এর ফলে দেশের অর্থনীতিতেও চাপ পড়ে৷ কেননা বাড়তি ভাড়ার চাপ সামলাতে গিয়ে অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে আনতে হয় বাসিন্দাদের৷ হান্স ব্যোকলার ফাউন্ডেশন-এর এক পরিসংখ্যান বলছে, শহরাঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দাদেরকে তাদের আয়ের শতকরা ৩০ ভাগ বাসা ভাড়ার পেছনে খরচ করতে হয়৷

এ বিষয়ে ফিল্ড বলেন, ‘‘নতুন যে বাসাবাড়ি তৈরি হচ্ছে তা চাহিদা মেটাতে পারছে না৷ আর এ কারণে বাসা ভাড়ার বিষয়ে একটি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন৷''

ভোগান্তিতে গরিবরা

বাসাবাড়ির এ ঘাটতির কারণে ভুগতে হয় সবাইকে৷ তবে স্বল্প আয়ের মানুষের উপর অর্থনৈতিক চাপ বেশি পড়ে৷

পরিসংখ্যান বলছে, শহরে বাস করা দরিদ্র জনগোষ্ঠী বাসা ভাড়া বাবাদ তাদের আয়ের ৩০ ভাগেরও বেশি ব্যয় করে থাকেন৷ এ চিত্র দেশটির শতকরা ৯২ ভাগ শহরের৷ আর উচ্চ আয়ের মানুষদের শতকরা ১২ ভাগ বাসা ভাড়ার পেছনে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন৷ 

এদিকে সিঙ্গেল থাকা ব্যক্তিরা, সিঙ্গেল বাবা কিংবা মায়েরা এবং মধ্য আয়ের মানুষদের ভোগান্তিও কিন্তু কম নয়৷

এই শ্রেণির মানুষের আয়ের পরিমাণ এমন যে, তারা না পায় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত বাসা, না তারা খুঁজে পায় নিজেদের আয় অনুযায়ী বাসা৷ আর সরকারি বাসা পেতে যারা আবেদন করেন তাদেরকে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় এমন ইতিহাস তো আছেই৷

কেন এই পরিস্থিতি?

এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷ এর মধ্যে আছে লোকজনের বাসাবাড়ি নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন৷ এগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়ই আছে যা সরকারের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে বলে মনে করছেন তারা৷

যেমন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের আগমন৷ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের লোকেরা চাকরির সন্ধানে বড় বড় কিংবা ব্যয়বহুল শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এদিকে জার্মানিতেও জনসংখ্যার নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে আবাসনের বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে৷

এই পরিস্থিতির কারণে সমাজের ভেতরেই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয় বলে মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক রিসার্চের গবেষক কোনস্টানটিন খোলোডিলিন৷

Deutschland Marburg | Wohnungssuche
জার্মানির একটি শহরে বাসা ভাড়া চেয়ে বিজ্ঞাপন৷ ছবি: Imago Images/R. Peters

সমাধানের পথ

সমাধানের পথ হিসেবে গবেষকরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয়ের কথা বলছেন৷ বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ভর্তুকি প্রদান, কর কমিয়ে দেওয়া এবং চুক্তির মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করা যে, তারা ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রেখে বাসা প্রদান করবে৷

বার্লিন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এমনই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে৷ জানা গেছে, বার্লিন প্রশাসন একসময় তাদের নিজেদের জমি বিক্রি করে দিয়েছিল৷ বাসাবাড়ি বানানোর লক্ষ্যে তারা এখন এসকল জমি ফিরে পেতে চাইছে৷ যদিও এতে খরচ অনেক বেশি পড়বে৷

২০১৪ সালে বার্লিন সরকারের নিজস্ব হাউসিং কোম্পানিগুলোকে বাসাবাড়ি বানানোর জন্য তাগিদ দেয়৷ 

বাসাবাড়ি বানাতে গিয়ে এসকল প্রতিষ্ঠানও নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে৷ যেমন, জমির দাম, শ্রমিকের মজুরি, বাড়ি বানানোর রসদপত্রের মুল্যবৃদ্ধিসহ নানা জিনিস৷ আর এর ফলে তাদের পক্ষে বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে৷

তাছাড়া নতুন আবাসিক এলাকাগুলোতে প্রতিবেশিদের জন্য জায়গা, স্কুল-কলেজ খোলা, কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার ইত্যাদি সুবিধা তৈরি করাও বেশ চ্যালেঞ্জের৷ কেননা এ সবকিছুর সাথে রাজনৈতিক এ আমলাতান্ত্রিক বিষয় জড়িত৷       

সিনেট ডিপার্টমেন্টের আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হাউসিং-এর মুখপাত্র পেট্রা রোহল্যান্ড বলেন, ‘‘আমরা সবসময়ই বলি যে, আমরা এমন আবাসিক এলাকা চাই যা সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব৷''

নিজেদের জমি বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আবাসিক এলাকাগুলো যেন শহরের সবুজায়নের ক্ষতি না করে সে বিসয়টি বিবেচনায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ৷''

ইউলিয়াম নোয়াহ গ্লুক্রোফট/আরআর