জার্মানিতে বাংলা পার্বণ
১৮ মে ২০০৯লাল পাড়ের ওই শাড়ির আঁচল, আলতা পায়ে খুশির নাচন
ইলশে ভাজা পান্তা খাওয়া, সব বাধার আজ খুলছে বাঁধন
পাগলা মনের খুশির ভিড়ে বৈশাখি রঙ লাগলো প্রাণে
আইলো আইলো রে
আইলো আইলো রে রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে
প্রতিবছর ১৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়৷ সারাদিন ছেলে-বুড়ো সবাই মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে৷ মেয়েরা সাদা লাল পাড়ের শাড়ি পরে বৈশাখকে স্বাগতম জানায়৷ আমের বোল ধরে গাছে গাছে৷ গ্রীষ্মের তপ্ত গরম উপেক্ষা করে রোদের দুপুর উপভোগ করে সবাই৷ রোদেলা আকাশ হঠাৎ করে সাজে কালো মেঘে৷ যেন কালবৈশাখির প্রতীক্ষা৷ গ্রামেগঞ্জের দোকানদাররা হালখাতার সব হিসেব শেষ করে বছরের প্রথম দিনটিতে দোকানে মিষ্টি সাজিয়ে বসেন৷ এভাবেই পালিত হয় বাঙালির চিরায়ত উৎসব পহেলা বৈশাখ৷
জার্মানিতে পহেলা বৈশাখ
জার্মানিতে ঈদের দিনেও ছুটি থাকেনা৷ আর পহেলা বৈশাখ মঙ্গলবার ছিলো ভীষণ ব্যস্ত দিন৷ তাই বাংলাদেশীরা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন করেছে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে৷ বাংলাদেশী হিসেবে আমিও দাওয়াত পেলাম৷ তবে আমার দাওয়াতটা ছিল ভিন্ন রকম৷ আমাকে নাটক করার জন্য ডাকা হলো স্টুটগার্ট এবং মিউনিখ থেকে৷ নাটকটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার দায়িত্বও ছিল আমার৷ ফ্রাংকফুর্টের বাংলা থিয়েটারের পক্ষ থেকে নাটকে অংশগ্রহণ করার জন্য ডাকা হলো আমায়৷ নাটকের নাম - আঙ্গরামেলা৷ রচয়িতা - নুরুল আখন্দ খোকন৷ নির্দেশনায় - ফারজানা কবীর খান এবং নুরুল আখন্দ খোকন, অভিনয়ে - মিনহাজ দীপন, রাশেদ, নুরুল আখন্দ খোকন, ওমর ফারুক লুক্স এবং ফারজানা কবীর খান৷
জার্মানিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি আমি চারবার৷ প্রথমবার স্টুটগার্টে এপ্রিলের ১১ তারিখে স্টুটগার্টবাসী বাংলাদেশীরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছে৷ তারপর ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিনেই ডয়চে ভেলেতে পালন করি আমরা বছরের প্রথম এই দিনটি৷ আর তারপর মিউনিখে, বন-এর পাশে ডুইসডর্ফে এবং ৩রা মে কোলনে৷ এর মানে কিন্তু এই নয় যে নববর্ষের উৎসব আর কোথাও পালন হয়নি৷ পালন করা হয়েছে জার্মানির প্রায় প্রতিটি প্রদেশে, যেখানে বাংলাদেশীরা বসবাস করছেন৷
ডয়চে ভেলের পহেলা বৈশাখ
১৪ই এপ্রিল ডয়চে ভেলেতে উদযাপন করা হয় পহেলা বৈশাখ৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সবাই মিলে আয়োজন করেছিল পহেলা বৈশাখ৷ পান্তা-ইলিশ আর নানারকম ভর্তা দিয়ে সাজানো হয়েছিল দুপুরের খাবার৷ ছিল শ্রোতাবন্ধুদের পাঠানো গুড় দিয়ে তৈরি পায়েসও৷ পরিপূর্ণ কর্ম-দিবস থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান গ্রেহাম লুকাস সহ আমরা বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের কর্মীরা সবাই মিলে আনন্দে মাতিয়ে তুলেছিলাম এই একটি দিন৷ মেয়েরা পরেছিল লাল শাড়ি এবং ছেলেরা পাঞ্জাবি৷
হৃদয়ে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মানুষ যত দূরেই থাকুক না কেন হৃদয়ে বহন করে প্রিয় দেশকে৷ দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তারা বিদেশ-বিভুঁইয়ে বসে স্মরণ করেন বাংলাদেশকে৷ প্রিয় জন্মভূমিকে ছেড়ে এসেছেন তারা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কারণে, সম্মান জানাতে ভোলেননা নিজেদের মাতৃভূমিকে৷ চেষ্টা করেন একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের সন্তানদের বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে৷
প্রতিবেদক: ফারজানা কবীর খান, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক