জার্মানিতে বন্যা: দুর্যোগে মানুষ মানুষের জন্য
জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক সাহায্য সবচেয়ে ফলপ্রসূ৷ জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর স্বেচ্ছাসেবীরা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়ালেন তা অভূতপূর্ব৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আহরভ্যালিতে
জার্মানিতে এবার বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আহরভাইলার বা আহরভ্যালি৷ সেখান থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে লিমবুর্গ থেকে তেলভর্তি ট্যাঙ্ক নিয়ে ভোরবেলা হাজির টোমাস এবং মারিয়াস৷ উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্তদের ডিজেল দেয়া৷ ১৭টি জ্বালানি ব্যবসায়ী ৩২ হাজার লিটার ডিজেল ত্রাণ হিসেবে দিয়েছেন৷ জরুরি ত্রাণ-কাজে সহায়তাকারীদের জ্বালানি দিয়ে সাহায্য করছেন তারা৷ ফেসবুকে আগাম এ বিষয়ে জানানো হয়েছে৷
জরুরি জ্বালানি সহায়তা
রেমাগেন শহতরটিও বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এই শহরের কাছে সিনঝিগের বাসিন্দা রাসিম শেরভিদাকু বন্যার পর থেকে অবিরাম ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করে যাচ্ছেন৷ রেমাগেনের একটি পার্কিংলটে জরুরি জ্বালানি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন তিনি৷ তিনি ও তার পরিবার অক্ষত থাকলেও তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বদ্ধপরিকর৷ তার ছেলেও বন্যা পরবর্তী জঞ্জাল পরিষ্কারে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছেন৷
দুর্গতরা অভিভূত
বার্লিনের দুর্যোগ গবেষক মার্টিন ফস জানিয়েছেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন৷ বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি, তারা তাৎক্ষণিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন৷ যারা এতদিন ভাবতেন এখনকার পৃথিবীতে মানুষ খুব স্বার্থপর, তারা এই সাহায্য দেখে অভিভূত হয়েছেন৷’’
জীবনের ঝুঁকি
আইফেলের ষাটোর্ধ্ব হুবার্ট শিলেস যা করেছেন তা অভাবনীয়৷ বাঁধের পানি আটকাতে ৩০ টনের খননযন্ত্র নিয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন তাতে প্রাণে বেঁচেছেন ১০ হাজার মানুষ৷
খনন যন্ত্র নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারের যাত্রা
কার্স্টেন স্টাইনার বন্যার তিনদিন পর তার বিশাল খনন যন্ত্র নিয়ে নিজের খরচে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুর্গত এলাকায়৷ উদ্দেশ্য জঞ্জাল পরিষ্কার করা৷ যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তার উপার্জনের কী হবে? তিনি বললেন, ‘‘এখানকার মানুষের দিকে তাকাও৷ আমার চেয়ে তাদের অবস্থা অনেক খারাপ৷’’
কাজ ভাগ করে নেয়া
তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়ানোয় সবচেয়ে বেশি উপকার হয়েছে৷ নিজেরা দল তৈরি করে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন৷ এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় যারা ছোটখাটো সাহায্যও করছেন তারাও একেকজন ‘হিরো’ বলে মনে করেন ব্রেমেনের দুর্যোগ গবেষক ভোল্ফ ডোমব্রোস্কি৷
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
মাক্স ডিরোন তেমনি একজন হিরো৷ ত্রিশের কাছাকাছি বয়সি এই তরুণ পুরোনো ফায়ার ট্রাক দিয়ে রেমাগেনে বিনামূল্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জ্বালানি দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, দুর্যোগের রাতে তার পুরোনো গাড়ি নিয়ে তিনি বেড়িয়ে পড়েছেন আহরভ্যালির দুর্গত এলাকায় মানুষকে সাহায্য করতে৷ এরপর থেকে প্রতিদিন কাজ শেষে ঠিক বিকেল ৫টায় সেখানে হাজির থাকেন তিনি৷ জঞ্জাল পরিষ্কার এবং বাড়িঘর ঠিক করায় হাত লাগান৷
শাটল বাস নিয়ে ত্রাণ কাজ
পাবলিক বাসগুলো দুর্গত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের পৌঁছে দিচ্ছে বিনে পয়সায়৷ এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছে এসব বাস৷ তাদের যাত্রা শুরু হয় সকাল ৭টায়৷ বাড-নয়েনআহর-আহরভাইলারের মার্ক উলরিখ এই উদ্যোগের আয়োজক৷ তার এলাকাটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়৷ শাটল বাস সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট তিনি ফেসবুকে দিয়ে থাকেন, যাতে রাস্তার যানজট না হয়৷