1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যজার্মানি

জার্মানিতে প্রথম শিশুর মাংকিপক্স

১১ আগস্ট ২০২২

জার্মানিতে প্রথম কোনো শিশু মাংকিপক্সে আক্রান্ত। এর আগে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই রোগ জানা যায়। আক্রান্তদের দেখে মনে হচ্ছে, মাংকিপক্স প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এ রোগ সম্পর্কে এখনো বিশেষ তথ্য নেই।

https://p.dw.com/p/4FPbY
এই রোগ নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা
এই রোগ নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরাছবি: National Institute of Allergy and Infectious Diseases/AP/picture alliance

জার্মানির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট ৯ আগস্ট জানায় প্রথমবার এ দেশের কোনো শিশু মাংকিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে।

আরকেআই বলেছে, জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্য বাডেন-ভুর্টেমবার্গের একটি শহর ফোরৎঝাইমে দুই জন সংক্রামিত প্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে একই পরিবারের চার বছর বয়সি  শিশুকন্যাও মাংকিপক্সে আক্রান্ত।

পরিবারেরশিশুটির ঘনিষ্ঠ একজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তারও পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখন জানা যায় শিশুটিও আক্রান্ত। এখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিডাব্লিউকে বলেছে, বাড়ির বাইরে কারও সংস্পর্শে আসেনি শিশুটি এবং তার দেহে কোনো উপসর্গও নেই।

জার্মানির বাইরে শিশুদের মাংকিপক্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনে শিশুদের দেহে মাংকিপক্সের জীবাণু মিলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সবমিলিয়ে সারা বিশ্বে চার বছর এবং তার চেয়ে কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ২৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে।

পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত মাংকিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্বে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ জন আক্রান্তের মধ্যে মাত্র ৯৮ জন রোগীর বয়স জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে মাংকিপক্সে আক্রান্ত ৩১ হাজার ৮০০ জন।

মাংকিপক্স কী কী প্রভাব ফেলে

ভাইরাসটি শিশুদের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে খুব একটা বেশি কিছু জানা যায়নি।

২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাংকিপক্সের প্রাদুর্ভাবের সময় (যা কর্মকর্তারা মনে করেন প্রেইরি কুকুরের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শের কারণে হতে পারে) ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল এবং মাত্র দুইজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই দুইজনই ছিল শিশু। তারা যদিও পরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ সংক্রান্ত তথ্য আফ্রিকার বাইরে বিরল। আফ্রিকার অন্তত আটটি দেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। কিন্তু কীভাবে আফ্রিকার শিশুদের উপর এই রোগ প্রভাব ফেলেছিল তা দেখা যাক।

২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সেন্ট্রাল আফ্রিকার দেশগুলিতে মাংকিপক্সে মৃত্যুর হার প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশি ছিল। যুক্তরাজ্যের নরউইচ মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক পল হান্টারের মতে, পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু হয়েছিল, যেখানে শিশু মৃত্যুর হার নয় দশমিক ছয় শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

জাইরেতে ১৯৮৫ সালের একটি প্রাদুর্ভাবের সময় চার বছর বা তার কম বয়সি শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল, যা ১৪.৯ শতাংশ। তারপরে পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ। দ্য জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা জানিয়েছিল, ১০ বছর বা তার বেশি বয়সি শিশুদের কারো মৃত্যু হয়নি।

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি
শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশিছবি: Robert Kneschke/Zoonar/picture alliance

হান্টারের কথায়, "শিশুরা, বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুরা গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। তবে আমরা বর্তমান মহামারিতে সামগ্রিক মৃত্যুর হার অনেক কম দেখছি।"

হান্টারের অনুমান, "খুব ছোট শিশুদের মধ্যে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঝুঁকি প্রকৃতপক্ষে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আফ্রিকাতে আমরা যা দেখেছি তার চেয়ে কিছুটা কম।"

রহস্যময় নেদারল্যান্ডসের সংক্রমণ

২০২২ সালের জুনের শেষের দিকে, নেদারল্যান্ডসের গবেষকেরা ১০ বছরের একটি ছেলে মাংকিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানতে পারেন।

মে মাসে শুরু হওয়া এই প্রাদুর্ভাবের সময়, ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা গবেষকদের কাছে স্পষ্ট নয়।

নথিভুক্ত হওয়া আক্রান্তদের সংখ্যাগরিষ্ঠ (৯৮ শতাংশের বেশি) পুরুষ অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে ছিলেন। তবে গবেষণায় এটা ইঙ্গিত করা হয়নি যে ভাইরাসটি শুধুমাত্র বীর্য বা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাংকিপক্সের কারণে যে ক্ষত হয় সেটি থেকে নির্গত তরল পদার্থ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা কারো ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়লে তিনিও আক্রান্ত হন ।

তদন্তকারীরা প্রথমে নিশ্চিত করেন, ছেলেটি যৌন নিগ্রহের শিকার হয়নি। কারণ যৌন সম্পর্ক মাংকিপক্স সংক্রমণের মাধ্যম হলেও এটি একমাত্র কারণ নয়। তারপরে ছেলেটির পরিবারের বাকি সদস্যদেরও পরীক্ষা করা হয়।

শুধুমাত্র ভাইরাসের ক্ষেত্রে নয়, সেরোলজিক্যাল পরীক্ষাতেও কারো শরীরে জীবাণু মেলেনি। ছেলেটির ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ বা পরিবারের অন্য সদস্যের টিকা দেয়ার কারণে হয়েছে কি না সেটিও দেখা হয়।

শিশুটি কোথায় বা কীভাবে আক্রান্ত হয়েছিল তা নির্ধারণ করতে পারেননি গবেষকেরা।

গবেষণার লেখক ম্যাথিজ ওয়েলকার্সের মতে, ছেলেটির সংক্রমণ খুবই কম ছিল। তার শরীরে ভাইরাস আক্রান্ত ২০টি ক্ষত ছিল।

ডয়চে ভেলেকে সে বলে, বাড়িতে থেকেও সবার থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছিল বলে সে খুব বিরক্ত হয়েছিল। স্কুলে যেতে চাইত বারবার। তিন সপ্তাহ পর ক্ষতগুলি সেরে গেলে সে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে।

গুটিবসন্তের টিকা ব্যবহার হচ্ছে অনেকসময়
গুটিবসন্তের টিকা ব্যবহার হচ্ছে অনেকসময়ছবি: Gideon Markowicz/Xinhua News Agency/picture alliance

স্কুলের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের জন্য মাংকিপক্সের টিকা

অনেক দেশে স্কুল শুরু হওয়ার পরই প্রশ্ন উঠছে, পড়ুয়াদের এবং শিক্ষকদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কি না। কারণ শিশুরা সারাদিন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে, একসঙ্গে টিফিন খায়, খেলাধুলা করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা একটি ডে কেয়ারে মাংকিপক্সের সম্ভাব্য সংক্রমণের কথা জানিয়েছেন। আগস্টের শুরুতে একজন শিক্ষকের দেহে রোগের জীবাণু মিলেছিল। প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে কেউই ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের জাইনিওস টিকা দেয়ার প্রস্তাব করছেন। এটি একটি সতর্কতা বলা যেতে পারে। ইমভেনেক্স টিকা নামেও এটি পরিচিত।

এটি একমাত্র টিকা যা বিশেষভাবে মাংকিপক্সের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত, যদিও কয়েকটি দেশ গুটিবসন্ত প্রতিরোধের পুরোনো টিকাও ব্যবহার করছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, সকলকেই মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি  মানতে হবে, যেমনটি কোভিড মহামারির সময়ে সবাই মেনে চলেছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার হাত ধোওয়া উচিত। আপনি যদি এমন কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসেন, যাতে ভাইরাস ছিল। তারপর আপনার মুখ, চোখ বা নাকে হাত দিলে ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। মাংকিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেউ এসেছেন বা কেউ মাংকিপক্সে আক্রান্ত হলে তার থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

গবেষণায় মাংকিপক্সের বায়ুবাহিত সংক্রমণের কোনো প্রমাণ মেলেনি। ত্বকের সঙ্গে সংস্পর্শে বা বা লালার মাধ্যমে যেমন চুম্বন থেকে এই রোগ হতে পারে। তবে পৃষ্ঠতল জাতীয় কোনো অংশ থেকে ভাইরাস হানার সম্ভাবনা কম। সুতরাং লক্ষণগুলি দেখলে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সাধারণ মাংকিপক্সের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, ছোট ফোঁড়াজাতীয় ক্ষত এবং ফোলা লিম্ফ নোড। এই ক্ষত বা "পকস", সাধারণত প্রাথমিক লক্ষণগুলির এক থেকে তিন দিন পরে দেখা যায়।

ক্লেয়ার রথ/আরকেসি