1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে ইসলামি কিন্ডারগার্টেন

নাস্টাসিয়া স্টয়ডেল/আরবি২৩ জানুয়ারি ২০১৪

জার্মানির মুসলিম কিন্ডারগার্টেন ‘হালিমা' যাত্রা শুরু করে ১৯৯৯ সালে৷ জার্মানির মুসলমানদের এখানকার সমাজে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি৷

https://p.dw.com/p/1AvNV
Muslimischer Kindergarten Gruppenbild
জার্মানির মুসলিম কিন্ডারগার্টেন ‘হালিমা'ছবি: DW/N. Steudel

কিন্ডারগার্টেনে শুক্রবারের এক দৃশ্য: মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন শুক্রবার৷ হালিমা কিন্ডারগার্টেনে আজ খাবারের মেন্যুতে রয়েছে ক্যাপসিকাম ও গাজরের স্যুপ৷ সাথে রয়েছে নিজেদের বেক করা রুটি৷ শিক্ষিকা আইসে, সাইমা ও মিরেলা বেশ কয়েকটি বড় বড় হাড়িতে রান্না করছেন এই স্যুপ৷ এজন্য অপেক্ষা করছে ২২টি কচিমুখ৷ নয়টি দেশের তিন থেকে ছয় বছর বয়সি শিশু৷ তাদের কেউ কেউ সবজি কাটায় সাহায্য করছে৷ কেউ কেউ এখানে সেখানে খেলাধুলা করছে৷ অনেকে আবার তুর্কি ক্লাস করছে৷ এজন্য তুরস্কের কনসুলেট থেকে এক শিক্ষিকা আসেন সপ্তাহে একদিন৷ বাচ্চারা আপেল, কলা ইত্যাদি ফলের ছবি দেখে তাঁর কাছে তুর্কি ও জার্মান ভাষায় ওগুলির নাম শিখছে৷

সহজেই দুই ভাষায় কথা বলতে পারে

ছয় বছরের সালেহ সহজেই তুর্কি ও জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারে৷ বাবা মেসুত পালানজি তিন বছর বয়স পর্যন্ত তাকে বাসায় তুর্কি ভাষা শিখিয়েছেন৷ যাতে সে মাতৃভাষা ঠিকমত বলতে পারে৷

৪৪ বছর বয়সি মেসুত পালানজি ‘হালিমা' কিন্ডারগার্টেনের পরিচালনা পরিষদের প্রধান৷ তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি আলোর মুখ দেখে৷ তখনকার দিনে এক পাইওনিয়ার বলা চলে এটিকে৷ বিশেষ করে, ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা ও অবিশ্বাস দূর করার ক্ষেত্রে এক সাহসী পদক্ষেপ৷ হালিমার আগে আরো দুটি ইসলামি কিন্ডারগার্টেন স্থাপিত হয়েছিল জার্মানিতে৷ তবে মিউনিখের কিন্ডারগার্টেনটি কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়৷

আইডিয়াটা আসে ১৯৯৩ সালে

জার্মানির দক্ষিণ পশ্চিমের শহর কার্লসরুহে শহরে এক ইসলামি কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠা করার আইডিয়াটা উদ্যোক্তাদের মাথায় আসে ১৯৯৩ সালে৷ মুসলমান বাবা-মায়ের আকাঙ্খার দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজটা হাতে নেওয়া হয়৷ তারা চেয়েছিলেন বাচ্চারা যেন ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান যেমন রোজা, ঈদ ইত্যাদি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পায়৷ এইসব বাবা মায়ের গতানুগতিক কিন্ডারগার্টেনে খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়নি৷ সেসব কিন্ডারগার্টেনে ইসলামের রীতিনীতি, হারাম হালাল খাবার এসব নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না৷

হালিমা কিন্ডারগার্টেনটির পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বেশ কয়েক বছর গড়িয়ে যায়৷ মেসুত ও তাঁর সহযোগীদের কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে বেগ পেতে হয় যে, এখানে ধর্মের ভূমিকা খুব কমই থাকবে৷ এটা কোরান স্কুল নয়৷ এখানে ধর্ম প্রচার বা সুরা মুখস্ত করানো হবে না৷

বাবা-মারা উৎসাহিত হয়ে ওঠেন

হালিমা কিন্ডারগার্টেনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুসলিম বাবা-মায়েরা উৎসাহিত হয়ে ওঠেন৷ কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির ব্যাপারে অপেক্ষমান তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে৷ অনেকে তো বাচ্চা জন্মের পরপরই নাম লেখাতে আসেন৷

তবে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের এই কিন্ডারগার্টেনে পাঠাতে তেমন আগ্রহ দেখান না৷ তাই অমুসলিম বাচ্চার সংখ্যা এখানে নিতান্তই নগন্য৷ কিছুটা হতাশার সুরে বলেন মেসুত৷ এর ফলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মেলামেশাটা সহজ হতো৷ ইসলাম সম্পর্কে ভীতিও দূর হতো৷

তুর্কি বংশোদ্ভূত সাইমা ও বসনিয়ার মিরেলা প্রথম থেকেই এই কিন্ডারগার্টেনের সঙ্গে যুক্ত৷ জার্মান ভাষায় পারদর্শী এই দুই শিক্ষিকা৷ মিরেলা হিজাব না পরলেও সাইমা হিজাব পরেন৷ এতে অবশ্য বাচ্চাদের কিছু যায় আসে না৷ তারা দু'জনকেই পছন্দ করে৷

ইন্টিগ্রেশনে ইতিবাচক পদক্ষেপ

এই প্রতিষ্ঠানটি ইন্টিগ্রেশনের ব্যাপারে আরেকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ রাখছে৷ আগে ঐ এলাকার মুসলিম মায়েরা যত দেরিতে সম্ভব সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠাতেন৷ আর এখন তারা বাচ্চাদের এই কিন্ডারগার্টেন পাঠিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের পেশায় যোগ দেন৷ এ কারণে কার্লসরুহে শহরে দেড় বছরের মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি ‘হালিমা' কিন্ডারগার্টেন খোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সেখানে বাচ্চারা এক বছর বয়স থেকেই যেতে পারবে৷ আশা করা হচ্ছে খ্রিষ্টান মা-বাবারাও তাদের বাচ্চাদের সেখানে পাঠাবেন৷

এতক্ষণে হালিমা কিন্ডারগার্টেনে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে৷ বাচ্চারা ছুটে আসে৷ বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করে৷