জার্মানি কিভাবে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে?
সম্প্রতি জার্মানিতেও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে৷ করোনায় আক্রান্ত রোগের মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এমন রোগের বিরুদ্ধে জার্মানির প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই সুদৃঢ়৷ ছবিঘরে রয়েছে বিস্তারিত৷
বিশেষজ্ঞদের আস্থা
সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির জনগণকে বড় কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হবে না৷ ইবোলার মত ভাইরাস আক্রান্তদেরও বাঁচাতে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে তারা৷
আইনি সুরক্ষা
সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় জনগণ আইনি সুরক্ষা পান জার্মানিতে৷ এখানে আছে ‘প্রোটেকশন অ্যাগেইনস্ট ইনফেকশন অ্যাক্ট’৷ এই আইনের আওতায় সব নাগরিককে সংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দেয়া সরকারের দায়িত্ব৷
সংক্রামক রোগ নিরাময় নেটওয়ার্ক
২০০৩ সাল থেকে ভয়াবহ সংক্রামক রোগের নিরাময়ে মেডিকেল সেন্টারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক সদা সতর্ক রয়েছে৷ এই ক্লিনিকগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ কেউ আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে এর যে কোনো একটিতে নিয়ে যাওয়া যায়৷ সেখানকার চিকিৎসক ও অন্য স্টাফরা খুবই দক্ষ৷ তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা নিশ্চিত করার সবরকমের প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে রাজ্য সরকার৷
বিশেষায়িত বিমানবন্দর
জার্মানির হামবুর্গ, ড্যুসলডর্ফ, ফ্রাঙ্কফুর্ট ও মিউনিখ-এই চারটি বিমানবন্দর সংক্রামক রোগাক্রান্তদের ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষায়িত৷ কোনো ফ্লাইটে কেউ আক্রান্ত আছেন বোঝা গেলে বিমানটিকে সাথে সাথে এর যে কোনো একটি বন্দরে নিয়ে আসা হয়৷ রোগীদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা থাকে৷ সেখানে তাদের আলাদা করে প্রাথমিক ব্যবস্খা নিয়ে দ্রুত যথাযথ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা আছে৷
ব্যবস্থাপনায় দ্রুততা
এখন পর্যন্ত যতগুলো মারাত্মক সংক্রামক রোগের যতগুলো ঘটনা জার্মানিতে ঘটেছে, সেগুলোকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সামাল দেয়া হয়েছে৷ এমনকি ইবোলার সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সফলতা দেখিয়েছে দেশটি৷
নিয়মিত প্রশিক্ষণ
জার্মানির জনগণের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ তারা চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে৷ বিশেষ করে মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলো নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রায়েছে৷
তথ্য সরবরাহ ও সমন্বয়
বিশেষ পরিস্থিতিতে সমন্বয় কেমন করে করতে হয়, তার উদাহরণ জার্মানি৷ কোনো সংক্রামক রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি কী করে সামাল দিতে হবে, তার তথ্য বিরামহীনভাবে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোতে সরবরাহ করা হয়৷ সমন্বিতভাবে কাজটি করে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মাসিস্টদের নিজস্ব ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো৷ ইবোলার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল৷
২৪ ঘন্টা জরুরি ব্যবস্থা
বিশেষ পরিস্থিতিতে শুধু চিকিৎসা নয়, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ২৪ ঘন্টা জরুরি সেবা চালু রাখা হয়৷ যেমন, বার্নহার্ড নখট ইনস্টিটিউট ফর ট্রপিকাল মেডিসিন ও মারবুর্গ ইউনিভার্সিটির ভাইরলজি ইনস্টিটিউট রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে ২৪ ঘন্টা তৈরি থাকে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটে একটি ২৪ ঘন্টা হটলাইন নম্বর রাখা হয়৷
যাত্রীদের জন্য তথ্য সেবা
যাত্রীদের জন্যও আলাদা তথ্যসেবা দেয়া হয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ‘ট্রাভেল ও সেফটি ইনফরমেশন’-এর অধীনে তো এমনিতেই থাকে এসব তথ্য৷ এছাড়া সম্ভাব্য ভাইরাসের আক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে আলাদা তথ্য থাকে৷ উপসর্গ দেখা গেলে কী করতে হবে তাও লেখা থাকে৷
কেন্দ্র ও রাজ্যের তথ্যের আদান-প্রদান
বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন এবং তথ্যের আদান প্রদান করেন৷ সেখানে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ হয়৷ তারা একে অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷