জার্মানদের ছুটি কাটানো মানে ‘বিশ্রাম’
জার্মানরা ভ্রমন বিলাসী সেকথা অনেকেই জানেন কিন্তু ছুটিতে তারা কি করতে বেশি পছন্দ করেন তা জানা না থাকলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে করা একটি সমীক্ষার ফলাফলে জানা সম্ভব হয়েছে৷
জার্মানদের পছন্দ-অপছন্দ
‘জার্মানরা কিভাবে ছুটি কাটাতে চান’ – এ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো সংস্থা একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল ১৪ বছরের বেশি বয়সি মোট চার হাজার মানুষের মধ্যে৷ সমীক্ষার ফলাফল, জার্মানরা ছুটিতে কে কি করতে চান, অর্থাৎ তাদের ইচ্ছের যে তালিকা, তার একেবারে প্রথমেই স্থান পেয়েছে ভালো খাওয়া-দাওয়া, তারপর সমুদ্রসৈকত আর ঘোরাঘুরি৷
খাওয়া-দাওয়া উপভোগ করবেন
এই সমীক্ষায় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই জানিয়েছেন যে তাঁরা ছুটিতে পছন্দমতো ভালো রেস্তোরাঁতে আয়েশ করে দেশি-বিদেশি নানা রকম মজার মজার খাওয়া-দাওয়া উপভোগ করতে চান৷ ছুটির সময়টাতে তারা বাড়ির মতো কেনাকাটা, রান্নাবান্নার ঝামেলা বা তাড়াহুড়ো কোনোটাই করতে রাজি নন৷
সমুদ্রসৈকত
স্ট্রান্ড, সনে, মেয়ার – অর্থাৎ বীচ, রোদ আর সাগর – এই তিনটি শব্দ যেন জার্মানদের ছুটি কাটানোর সাথে একেবারে মিলে মিশে আছে৷ পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির বিজ্ঞাপণগুলোতেও এমনটা লেখা থাকে৷ আর এই সমীক্ষায় ৭০ শতাংশ জার্মান ছুটিতে সমুদ্রে বা হৃদে গোসল ও সূর্যস্নান করতে চান বলে মত দিয়েছেন৷
ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাঁটি
ছুটিতে গেলে দূরে কোথাও না যেয়ে, কাছাকাছি ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাঁটি বা ছোটখাটো প্যাকেজ ট্যুরে যেতে চান বলে সমীক্ষায় জানিয়েছেন অর্ধেকেরও বেশি জার্মান নাগরিক৷ কোনো রকম স্ট্রেস নয়, একটু আরাম করে করতে চান তারা সবই ছুটির সময়টাতে৷
ছুটিতে সংস্কৃতির জগতে নয়
এই জরিপে শতকরা মাত্র ২৮ জন মত প্রকাশ করেছেন, তাঁরা ছুটির সময় সংস্কৃতির জগতে ঘোরাফেরা করবেন৷ জরিপের ফলাফল যাই হোক না কেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে মিউজিয়ামগুলোতে ঢোকার টিকিট কাটার জন্য সব সময়ই লম্বা লাইন দেখা যায় এদেশে৷ ভালো সিনেমা বা কনসার্টগুলোতেও বেশ ভিড় লক্ষ্যণীয়৷ আর কোলনের ক্যাথিড্রাল দেখতে শীত গ্রীষ্ম সারা বছরই থাকে পর্যটকদের প্রচণ্ড ভিড়৷
ইচ্ছেমতো চলা
প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে, তাঁরা ছুটিতে ইচ্ছেমতো থাকতে চান৷ অর্থাৎ সেভাবে কোনো পরিকল্পনা না করে একটু অলসভাবে কাটাতে চান সময়টা৷ বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা, দেরিতে ঘুমোতে যাওয়া কিংবা দুপুরেও একটুখানি গড়িয়ে নেওয়া – এসব আর কি৷ সোজা কথা ছুটিতে গিয়ে কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম মেনে চলতে চান না৷ ছুটি মানে শুধুই ছুটি ‘খাও দাও আর ঘুমাও’৷
পূর্ব জার্মানির মানুষ
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের মানুষ কিন্তু এ ব্যাপারে খানিকটা ভিন্ন মত দিয়েছেন৷ তাঁরা দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে চান, চান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে৷ তাঁরা উঁচু বা পাহাড়ি জায়গায় হাঁটতে যেতে পছন্দ করেন, চালাতে চান সাইকেল৷ অর্থাৎ ছুটিতে গিয়ে শুধু শুয়ে বসে না থেকে কিছুটা অ্যাকটিভ থাকতে চান তাঁরা৷
মিডিয়া থেকে দূরে
তবে ৫৫ বছরের ওপরে যাঁদের বয়স তাঁরা হাঁটাহাটি বা প্যাকেজ ট্যুর করতে বেশি পছন্দ করেন৷ বই পড়তেও ভালোবাসেন৷ তবে এই সমীক্ষায় অনেকেই ছুটির সময়টুকু মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন৷ অর্থাৎ টেলিভিশন, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট কম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন৷
মহিলারা বেশি অ্যাকটিভ
সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ছুটি কাটানোর সময় পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি অ্যাকটিভ৷ তাঁরা পুরুষদের চেয়ে বেশি বই পড়েন, ছবি তোলেন, প্রিয়জনদের কাছে পোস্টকার্ড পাঠান৷ ছুটির সময়টা ইচ্ছেমতো শপিং সেন্টারে ঘুরে বেড়াতে বা জামা-কাপড় পরে দেখতে ভালোবাসেন৷ শপিং মলে ঘুরে কিছু না কিনে খালি হাতে নিশ্চয়ই বাড়ি ফেরেন না৷ দৈনন্দিন জীবনে দায়িত্ব পালন করে অন্য যা কিছু করা সম্ভব হয় না, সেটাই করতে চান ছুটির সময়৷
বয়সের তারতম্য
সমীক্ষায় একটি জিনিস পরিষ্কার যে, বয়সের তারতম্যের কারণে তাঁদের আগ্রহ বা ইচ্ছারও তারতম্য হয়ে থাকে, যা খুবই স্বাভাবিক৷ ৩৪ বছরের কম যাঁদের বয়স তাঁরা পছন্দ করেন ডিস্কোতে গিয়ে নাচ করতে৷ সঙ্গীকে নিয়ে খানিকটা বেশি সময় তাঁরা কাটাতে চান৷ টেলিফোন করতেও আগ্রহ তাঁদেরই বেশি৷
চাই সবকিছুই
ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো সংস্থা বা বেএটি-র প্রধান উলরিশ রাইনহার্ড বলেন, ছুটি কাটানো বা ‘হলিডে’ – এ ব্যাপারটা জার্মানদের আত্মার সাথে মিশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে৷ তাই ছুটি কাটাতে গেলে মানুষ এমন জিনিস করতে আগ্রহী হয়, যেগুলো যান্ত্রিক জীবনে প্রাত্যহিক কাজের চাপে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ যেমন শপিং করা, খেলাধুলা করা, রেস্তোরাঁয় যাওয়া, সাঁতার কাটা বা সিনেমা দেখা ইত্যাদি৷