1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান সমাজ বেশি বিভক্ত নয়

মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাউ
১৩ ডিসেম্বর ২০২১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়া বিতর্ক বাস্তবতাকে বিকৃত করছে বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাউ৷ তিনি বলেন, জার্মান সমাজ ততটা বিভক্ত নয়, যতটা অনেকে কল্পনা করেন৷  

https://p.dw.com/p/44CE6
Suttgart | Demonstration gegen Corona Auflagen
ছবি: Leonhard Simon/imago images

বাধ্যতামূলক টিকা — ২০২১ সালের সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি শব্দ হবে এগুলো৷ কিন্তু সেটা কি এতই বিতর্কিত যে সেগুলো জার্মান সমাজকে বিভক্ত করে ফেলবে?  

এই মুহূর্তে নিশ্চিয় সেরকম মনে হচ্ছে৷ এটা সত্য যে আগামী বছর থেকে জার্মানিতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে৷

তবে, বিষয়টি আরো জটিল করে তোলার আগে একটু থামা ও শোনা কাজের কাজ হবে৷  

শোনা বলতে যেমন বোঝাচ্ছি নতুন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস দায়িত্ব গ্রহণের দিন টিকার বিষয়ে জার্মানিতে আলোচিত বিভক্তি নিয়ে কী বলেছিলেন, সেটা৷ তিনি বিষয়টিকে তেমন বড় কিছু মনে করছেন না, কারণ দেশটির অধিকাংশ নাগরিক ইতোমধ্যে টিকা নিয়ে নিয়েছেন৷  

এবং তিনি ঠিকই বলেছেন৷ ১০ ডিসেম্বর অবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়ে নিয়েছেন৷ শলৎস এটাও বলেছেন, ‘‘এবং আরো অনেকে মনে করেন যে এটা ঠিকই আছে বা অন্তত নীতিগতভাবে ভুল কিছু নয়৷'' এটাও সত্য কথা৷ 

সংখ্যালঘু একটি অংশ সরব

তবে তিনি যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন সেটা হচ্ছে: ‘‘শুধুমাত্র একটি সরব সংখ্যালঘু অংশ চরম উগ্রবাদী আচরণ করছে বলে আমাদের এটা মনে করা উচিত হবে না যে সমাজ বিভক্ত হয়ে গেছে৷'' চমৎকার বলেছেন, জনাব চ্যান্সেলর! কেউ যদি তার এই বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান হন তাহলে তার উচিত মেরুকরণ এবং জনতুষ্টি বিষয়ক গবেষণাগুলো আরো নিবিড়ভাবে দেখা৷ এরকম অনেক গবেষণা রয়েছে, আর সেগুলো যা খুঁজে পেয়েছে তাও পরিষ্কার: সামাজিক সংহতি অনেক মানুষের ধারনার চেয়েও বৃহত্তর ব্যাপার৷ 

জার্মানির কনরাড আডেনাউয়ার ফাউন্ডেশনের ইওখেন ব়্যোসে নির্বাচন এবং সমাজ নিয়ে গবেষণা করেন৷ প্রতিষ্ঠানটির এক গবেষণার আলোকে তিনি লিখেছেন, ‘‘২০১৯ সালের শুরুর দিকে দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর ধারণা ছিল সমাজে সংহতি খুব অল্প বা একেবারেই নেই৷ মেরুকরণ সম্পর্কে এই উপলব্ধি করোনা মহামারির সময় কমে গেছে৷ ‘আমাদের সমাজে মানুষ অসংলগ্নভাবে একে অপরের বিরোধিতা করে' এমন বক্তব্যের সঙ্গে ঐক্যমত্য পোষণ করাদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ থেকে কমে ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে৷''

এখানে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে জার্মানির মানুষ এভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে৷

ব্যার্টেলসমান পপুলিজম ব্যারোমিটারও একই ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছে: ‘‘বর্তমানে জার্মানির প্রতি দশজন ভোটারের মধ্যে মাত্র প্রায় দু'জন এখনও নিজেদের ধ্যানধারনায় পপুলিস্ট৷ এটা ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের (৩২ দশমিক আট শতাংশ) তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম৷''

এটাও জার্মান সমাজে বিভক্তি বাড়ছে বলে যে বিস্তৃত ধারনা তৈরি হয়েছে তার বিপরীত বার্তা দিচ্ছে৷

বিতর্কের নেতৃত্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

তাহলে এরপরও কেন বিভক্তি, মেরুকরণ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে? এর একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে আমরা তথাকথিত মিডিয়া গণতন্ত্রে বসবাস করছি৷ ডিজিটাল যুগের ইতিবাচক দিক হচ্ছে যেকেউ যে-কোনো বিষয়ে যে-কোনো সময় নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন৷ এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ধন্যবাদ৷ কিন্তু ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম এবং এরকম প্ল্যাটফর্মগুলোর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এগুলো ব্যবহার করে লাগামহীন গুঞ্জন তৈরির সুযোগ আছে৷ আর এখানেই সেই বহু পুরনো কথাটা ফিরে আসে: একজন যত সরব ও বিক্ষুব্ধভাবে সামনে আসে, ততবেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে৷

Deutsche Welle Marcel Fürstenau Kommentarbild ohne Mikrofon
মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাউ৷, ডয়চে ভেলেছবি: DW

গণমাধ্যমের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন৷ ২০২০ সালে ২৬ শতাংশ মানুষ ফেসবুক, বিশ শতাংশ মানুষ ইন্সটাগ্রাম এবং শুধুমাত্র ৫ শতাংশ মানুষ টুইটার সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেছেন৷ নির্দিষ্ট কিছুক্ষেত্রের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সক্রিয়: রাজনীতিবিদ, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিকরা৷ 

এদের সবাই তাদের বার্তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায়, বা তাদের সেটা করতে হয়৷ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছাড়া সেটা করাও অসম্ভব৷ কিন্তু যারা এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন না তাদের কাছে অনলাইনের বার্তা কীভাবে পৌঁছায়? টুইটার এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনকি কেউ না চাইলেও অনেকে মতামত দেন৷ আর এসব মতামতদাতাদের মতামত সেই প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ থাকতো যদি সেগুলো অন্যরা শেয়ার বা প্রচার না করতেন৷ এখন যা ঘটছে তাহচ্ছে এসব মতামত কখনো কখনো প্রচলিত মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সহায়তায় লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করছে টেলিভিশন টকশোগুলো৷

উত্তপ্ত বিতর্কের অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্র কাজ করছে

অডিয়েন্স, রেটিং এবং ক্লিকের নিরলস প্রতিযোগিতায় চাঞ্চল্যকর শিরোনাম এবং তথ্যে অতিরঞ্জন এই খাতের অংশ হয়ে উঠছে৷ ফলে বাধ্যতামূলক টিকার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা দেখলে দ্রুতই মনে হতে পারে যে বিষয়টি নিয়ে সমাজ বিভক্ত৷

আর এক্ষেত্রে ওলাফ শলৎস যথার্থই বলেছেন: ‘‘অবশ্যই বিষয়টি উগ্রভাবে আলোচনা করা যায়৷ আর এটা কোনো সমস্যা নয়৷ কেননা এটাইতো গণতন্ত্র৷''

শেষ করার আগে চলুন বার্লিনের জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের পাওয়া ক্যুয়লারের পুরস্কারজয়ী নিবন্ধ ‘এঙ্গার এন্ড ওয়ার্ল্ডভিউ' পড়া যাক৷ লেখক মনে করেন, সামগ্রিকভাবে জার্মান সমাজে মেরুকরণ তেমন একটা হচ্ছে না, তবে ব্যক্তিগত মতামত বাড়ছে৷

‘‘জনসংখ্যার একটি ছোট অংশকে (রাজনৈতিক অভিজাত এবং মতামত তৈরিকারকরা) আরেকটি ছোট অংশ (রাগান্বিত অনলাইন ট্রল) ঘৃণাবাচক বক্তব্য এবং অপবাদ দিয়ে আক্রমণ করছে যা বিস্তৃত বিতর্কের সংস্কৃতির উপর প্রভাব তৈরি করছে৷''

দুর্ভাগজনক হলেও তিনি ঠিক বলেছেন৷

মার্সেল ফ্যুর্স্টেনাউ ডয়চে ভেলের সাংবাদিক৷