জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি-মোহ ও চৌর্যবৃত্তি
পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন জার্মানির পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী৷ জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি-প্রীতি যেমন আলোচিত, তেমনি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও এবারই প্রথম নয়৷
পার্লামেন্টের ১৭ শতাংশ
২০১১ সালে জার্মানির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ৬২২ সদস্যের ১১৫ জন ছিলেন ডক্টরেট৷ সেসময় ১৬ জন মন্ত্রীর ১০ জনই ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী৷ বর্তমান পার্লামেন্টের ৮২ শতাংশেরই অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি রয়েছে৷ আর পিএইচডিধারী ১৭ শতাংশ৷ অন্য দেশগুলোতে সচরাচর এত পিএইচডি করা জনপ্রতিনিধি দেখা যায় না৷
ড. ম্যার্কেল
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পূর্বসূরী ছিলেন হেলমুট কোল৷ তিনি ইতিহাসের ডক্টরেট৷ কম যান না তার উত্তরসূরী আঙ্গেলা ম্যার্কেলও৷ তিনি কোয়ান্টাম রসায়নে পিএইচডি করেছেন৷ পেশাজীবনের শুরু বিজ্ঞানী হিসেবে৷ বর্তমান মন্ত্রীসভায় আইন, ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান, শিক্ষা, এমনকি ধর্মতত্ত্বের পিএইচডিধারী রাজনীতিবিদ রয়েছেন৷ জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার শ্টাইনমায়ারও একজন ডক্টরেট৷
রাজনীতির পাঠ ও পিএইচডি
অনেকেই রাজনীতি শুরু করেছেন পিএইচডি অর্জনের পরে৷ আবার কেউ কেউ রাজনীতিতে যোগ দেয়া অবস্থাতেও গবেষণা করেছেন৷ যেমন, ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সাবেক পরিবার বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্যোর্ডার ২০০৯ সালে তার পিএইচডি শেষ করেন জার্মান সংসদ সদস্যদের আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে৷ কিন্তু এই গবেষণায় দলের সদস্যদের উপর তার নির্ভরশীলতা নিয়ে পরে বিতর্ক তৈরি হয়৷
গবেষণায় অবদান
রাজনীতি করা অবস্থায় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা নিয়ে বিতর্ক যেমন রয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের গবেষণা অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের প্রসারে ভূমিকা রেখেছে৷ জার্মানির বর্তমান প্রেসিডেন্ট গবেষণা করেছেন গৃহহীনদের সমস্যার বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের ভূমিকা নিয়ে, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান স্পিকার এর পিএইচডির বিষয় ছিল কর্পোরেট নিরীক্ষাকারীদের আইনি অবস্থান নিয়ে৷
চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ
রাজনীতিবিদদের পিএইচডির এই মোহের পাশাপাশি গবেষণা তৈরিতে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে৷ ২০১১ সালে এজন্য পদত্যাগ করতে হয়েছিল সেসময়কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ল থিওডর সু গ্যুটেনবার্গকে৷ পরবর্তীতে এমনকি ডক্করেট উপাধিও হারান তিনি৷ যদিও সম্প্রতি তিনি ব্রিটিশ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন করে ডক্টরেট অর্জন করেছেন৷
আরো যারা
২০১২ সালে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী আনেত্তে শাভান (ছবি) -এর থিসিসে চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিলভিয়া কখ-মেহরিনের গবেষণা প্রবন্ধের ৩৪ শতাংশে চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ে৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও পিএইচডি অভিসন্দর্ভ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷ যদিও তার গবেষণার ফলাফলের অংশটি যথাযথ ছিল বলে রায় দিয়েছিল এ সংক্রান্ত অ্যাকাডেমিক কমিটি৷
পরিবারমন্ত্রীর পদত্যাগ
জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি ও গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে৷ দেশটির পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রান্সিসকা গিফে সম্প্রতি এই অভিযোগের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি অবশ্য বহুদিনের৷ ২০১০ সালে ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে তিনি পিএইচডি প্রবন্ধ জমা দিয়েছিলেন৷
গিফাইয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার শুরু ২০১৯ সালে৷ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে তিরস্কার করলেও জানিয়েছিল ডক্টরেট উপাধি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই৷ তবে গিফে নিজেই টাইটেলটি ব্যবহার করবেন না বলে ঘোষণা দেন৷ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে মন্ত্রীত্ব ত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি৷ গবেষণাটি নিজের সামর্থ্যে করা দাবি করে গিফাই বলেন, যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে তার জন্য তিনি দুঃখিত৷