জার্মান ফুটবল জাদুঘরে ‘হল অফ ফেম’
ডর্টমুন্ড শহরে অবস্থিত জার্মান ফুটবল জাদুঘর প্রথমবারের মতো সর্বকালের সেরা ১১ জার্মান ফুটবলারকে নিয়ে চালু করেছে ‘হল অফ ফেম’৷ জার্মানি জুড়ে ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে এই ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়৷
সেপ মায়ার
জার্মানির ইতিহাসের সেরা গোলকিপারদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেপ মায়ারকে৷ গোলপোস্টে অসাধারণ ক্ষিপ্রতার জন্য বাভারিয়া রাজ্যের আনসিং নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম নেয়া মায়ারকে ভক্তরা আদর করে ডাকতেন ‘আনসিং-এর বিড়াল’ নামে৷ ১৯৬৬ সাল থেকে পরপর চারবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন তিনি৷ বুন্ডেসলিগায় ১৯৬৬ সাল থেকে ১৩ বছর টানা ৪৪২টি ম্যাচ খেলেছেন৷ তাঁর এই রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেনি কেউ৷
ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ার এককালের সম্রাটদের নামেও ছিল ‘ফ্রানৎস’৷ পাশাপাশি মাঠে তাঁর নেতৃত্ব, বলের ওপর দখল এবং খেলার শৈলীর কারণে ‘ডেয়ার কাইজার’ বা ‘সম্রাট’ উপাধি পান বেকেনবাওয়ার৷ মিডফিল্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে মাঠে তাঁর মূল ভূমিকা দেখা যায় রক্ষণভাগে৷ ফুটবলে এক পজিশন থেকে ছুটে অন্য পজিশনে চলে যাওয়ার ‘সুইপার’ বা ‘লিবেরো’ সিস্টেমের উদ্ভাবকও গণ্য করা হয় তাঁকে৷
আন্দ্রেয়াস ব্রেহমে
অ্যাটাকিং ফুলব্যাক হিসেবে সুনাম কুড়ানোর পাশাপাশি শক্তিশালী ও নিখুঁত শটের জন্য ফ্রি কিক এবং পেনাল্টিতে প্রায়শই ডাক পড়তো ব্রেহমের৷ ১৯৯০ সালে ইটালি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে জয় এনে দিয়েছিলেন ব্রেহমে৷
পল ব্রাইটনার
ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার ও বের্টি ফোগ্টসের সাথে মিলে জার্মান জাতীয় দলের রক্ষণভাগকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে তুলেছিলেন পল ব্রাইটনার৷ ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছিলেন ব্রাইটনার৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসের চার খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন পল ব্রাইটনার, যাঁরা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছেন৷ বাকি তিনজন হচ্ছেন পেলে, ভাভা এবং জিনেদিন জিদান৷ ফিফার সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ দলেও স্থান করে নিয়েছিলেন ব্রাইটনার৷
ফ্রিৎস ভাল্টার
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন ভাল্টার৷ ১৯৪০ সালে জার্মান জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচেই রোমানিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে সবার নজর কাড়েন তিনি৷
লোথার ম্যাথাউস
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপজয়ী পশ্চিম জার্মানির অধিনায়ক ছিলেন ম্যাথাউস৷ সে বছরই ‘ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন তিনি৷ ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ঘোষণা করা ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন তিনি৷ এখন পর্যন্ত এই পুরস্কার পাওয়া একমাত্র জার্মান খেলোয়াড় ম্যাথাউস৷
মাথিয়াস জামার
পূর্ব জার্মানির হয়ে বয়সভিত্তিক সব দলেই খেলেছেন মাথিয়াস জামার৷ ১৯৮৮ সালে পূর্ব জার্মান জাতীয় দলের হয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি৷ ১৯৯০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পূর্ব জার্মানির ইতিহাসের শেষ ম্যাচে দুই গোল করে বেলজিয়ামকে বলতে গেলে একাই হারিয়ে দেন মাথিয়াস৷ সে বছরেরই ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বকাপজয়ী একীভূত জার্মান জাতীয় দলে নেয়া হয় তাঁকে৷
গ্যুন্টার নেৎসার
নিখুঁত পাস দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতার জন্য সর্বকালের সেরা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় নেৎসারকে৷ দলের অন্য খেলোয়াড়রা যখন মূলত ছোট ছোট পাসে খেলতেন, তখন লম্বা পাস দেয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি৷ পশ্চিম জার্মানির জাতীয় দলে ১৯৬৫ সালে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয় নেৎসারের৷
গ্যার্ড ম্যুলার
ছয় গজের বক্সের আশেপাশে ফিনিশিং-এ অসাধারণ দক্ষতার জন্য পরিচিত ম্যুলার৷ ফুটবলের ইতিহাসে সেরা গোলস্কোরারদের একজন তিনি৷ পশ্চিম জার্মানির হয়ে ৬২ ম্যাচে তিনি করেছেন ৬৮ গোল৷ এছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্ডেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে ৩৬৫ গোল করেছেন ম্যুলার৷
উভে জেলার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে ৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন জেলার৷ ২০০৪ সালে পেলের ঘোষণা করা ১২৫ সেরা জীবিত খেলোয়াড়ের তালিকায় ছিল তাঁর নাম৷ জার্মান বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গ্রেট অর্ডার অফ মেরিট অভ দ্য ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি’ পাওয়া প্রথম ফুটবলার তিনি৷
হেলমুট রান
ভক্ত ও সহ-খেলোয়াড়দের কাছে ‘দ্য বস’ নামে পরিচিত ছিলেন রান৷ ১৯৫৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে (পশ্চিম জার্মানি- ৩: হাঙ্গেরি- ২) তাঁর গোলেই জয়লাভ করে পশ্চিম জার্মানি৷
সেপ হেরবার্গার
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী পশ্চিম জার্মান দলের কোচ ছিলেন হেরবার্গার৷ তবে ১৯৩৩ সালে হিটলারের নাৎসি পার্টিতে যোগ দেয়ার কারণে জাদুঘরের হল অফ ফেমে তাঁর স্থান নিয়ে এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক৷