1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান প্রেসিডেন্টের ভারত সফর: বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত

রাজীব চক্রবর্তী
২৮ মার্চ ২০১৮

প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলিতে ভারতের পাশে দাঁড়াবে জার্মানি৷ দু' দিনের সফরে এ কথা বলেছেন জার্মানির প্রসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷

https://p.dw.com/p/2v8rD
Bundespräsident Steinmeier besucht Indien
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd von Jutrczenka

জার্মানিতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর সেদেশের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের এবারের সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক৷ এর আগে ২০১৪ সালে ভারতে এসেছিলেন তৎকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ স্টাইনমায়ারের রাজনৈতিক ‘‌ওজন'‌ অনেকটা বেশি৷ নতুন সরকার গঠনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা৷ দু'দফায় মোট ৮ বছর জার্মানির বিদেশ মন্ত্রী থাকার অভিজ্ঞতা৷ এবং দু-‌বছর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ এই পরিস্থিতিতে স্টাইনমায়ারের ভারত সফর একদিকে যেমন দ্বি-‌পাক্ষিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তেমনই আন্তর্জাতিক বিষয়েও ঐক্যমত গড়ার কাজে হাত মিলিয়েছে এই দুটি দেশ৷

 

পাঁচ দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন স্টাইনমার৷ উভয় দেশের দাবি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও নানা ক্ষেত্রে গঠনমূলক অংশীদারি আরও গভীর হতে চলেছে৷

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের বন্ধুত্ব দুই দেশের সম্পর্কে উষ্ণতা আনবে৷

এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নিরিখে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয় জার্মানির সঙ্গে৷ বিশ্বস্তরে যার স্থান ষষ্ঠ৷ ২০১৬-‌১৭ তে যার পরিমাণ ছিল ১,১৮,৫০১ কোটি টাকা৷ গত ১৭ বছরে প্রায় ১৮০০টি জার্মান কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগ করেছে ৬৯,৩০৯ কোটি টাকা৷ ভারতও ২০১৬ পর্যন্ত জার্মানিতে ৩৮,৮২৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে৷

এর আগেও বেশ কয়েবার ভারতে এসেছেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার পা রেখে স্টাইনমায়ার বললেন, ‘‘‌‌আগেও এসেছি৷ ভবিষ্যতে আবারও আসবো৷ বার বার আসতে ইচ্ছে করে ভারতে৷ কারণ, আমার হৃদয়ে এই দেশের জন্য বিশেষ সম্মান রয়েছে৷ গোটা দুনিয়ায় বিশেষ সম্মান অর্জন করে চলেছে ভারত৷'‌'‌

সফরের শুরুটা হয়েছিল দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শহর হিসেবে পরিচিত বারানসী দিয়ে৷ বারানসী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্রও বটে৷ প্রেসিডেন্টের সঙ্গী জার্মান সরকারের প্রথম সারির একদল আধিকারিক, কয়েকজন উদ্যোক্তা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি৷

দিল্লির সুন্দর নার্সারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও মজবুত করা ও তার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন স্টাইনমায়ার৷ বৈঠকের পর মোদীর টুইট— ‘‌‘‌জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-‌ভাল্টার স্টাইনমায়ারকে দিল্লির সুন্দর নার্সারিতে নিয়ে যেতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি৷ অনেকগুলি বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি৷'‌'

ভারতের উপ-‌রাষ্ট্রপতি এম বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজও ‌স্টাইনমায়ারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন৷

বারানসী থেকে সারনাথ গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ সারনাথ সংগ্রহশালা পরিদর্শনের পাশাপাশি কয়েকটি ঐতিহাসিক এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি৷ দিল্লিতে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে গুরুগম্ভীর আলোচনায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার জামে মসজিদেও গিয়েছিলেন৷ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে এক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন৷ শুধু কি তাই?‌ শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি ‘‌গোল টেবিল বৈঠক'‌-‌এ অংশ নেন৷ তারপর চেন্নাই পৌঁছান স্টাইনমায়ার৷ সেখানে আইআইটি-‌মাদ্রাজ ঘুরে দেখেন৷ পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতা তাঁর সফরকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়৷

প্রসঙ্গত, জার্মানির বিদেশমন্ত্রী এবং ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে এর আগে বহুবার ভারত সফরে এসেছেন স্টাইনমায়ার৷ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইট করেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ উভয় দেশই দ্বি-‌পাক্ষিক সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়েছে৷'‌'‌

 

রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কোবিন্দের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক করেন স্টাইনমায়ার৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে ‘‌গার্ড অফ অনার'‌ দেওয়া হয়৷ রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সস্ত্রীক স্টাইনমায়ার৷

 ‌ভারতের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে জার্মানির প্রেসিডেন্টের৷ স্টাইনমায়ার বলেছেন, ‘‌‘সব ধরনের সন্ত্রাসবাদকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে ‌গোটা বিশ্বের সব মহলকে ঐক্যমতে পৌঁছতেই হবে৷'‌'

শুভেন্দু রায় চৌধুরী

সাংবাদিক শুভেন্দু রায়চৌধুরি স্টাইনমায়ারের এ সফর সম্পর্ক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‌‘‘ জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সন্ত্রাসবাদকে রুখতে হলে সবার আগে গোটা বিশ্বকে একমত হতে হবে৷ বিশেষ করে সন্ত্রাসকবলিত দেশগুলিকে সর্বাগ্রে স্বীকার করতে হবে যে, ‘‌ভালো সন্ত্রাসবাদ'‌ এবং ‘‌মন্দ সন্ত্রাসবাদ'‌ বলে কিছু হতে পারে না৷ সন্ত্রাসবাদকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে৷ তবে, কোনও সন্দেহ নেই যে, জার্মানি পাশে দাঁড়ালে সবদিক থেকে ভারত আরও শক্তিশালী হবে৷ এখন ভারত ‌ও জার্মানির বন্ধুত্বের মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়া‌ জোটবদ্ধ হলে সন্ত্রাসবাদের মতো অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান হবে৷'‌'

 ভারত সবসময় বলে আসছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদকে মদত জুগিয়ে চলেছে৷ ভারতের দাবি, এই কথাটুকু সন্ত্রাসকবলিত অন্যান্য দেশকে স্বীকার করতেই হবে৷ আসলে বিষয়টা কারও অজানা নয়৷ কিন্তু, দেশগুলি নিজেদের বাণিজ্যিক বা অন্য কোনও স্বার্থে সমঝোতার পথে হেঁটেছে৷ তা সত্ত্বেও ভারত-‌জার্মানির সখ্য বৃদ্ধি দুটি দেশের পক্ষেই মঙ্গলজনক৷

এদিকে, মাত্র দু-‌দিন আগেই জার্মানিকে টপকে অটোমোবাইল বাজার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ভারত৷ যাত্রী ও মালবহনকারী অটোমোবাইলে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ৷ বিশ্ববাজারের নিরিখে গতবছর ৪০ লক্ষের বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে ভারত৷ জার্মানিতে ৩ দশমিক ‌৮ মিলিয়ন, এবং ভারতে ৪ মিলিয়নের বেশি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য