জার্মান প্রবচন: বহু শতাব্দীর জীবনের অভিজ্ঞতা
১০টি জনপ্রিয় জার্মান প্রবচন ও তাদের অলঙ্করণ – বিশেষ করে ডয়চে ভেলের জন্য আঁকা৷ প্রবচনের মজা বচনে, আবার অঙ্কণেও বটে...
‘ভাস হেনশেন নিশ্ট ল্যার্ন্ট, ল্যার্ন্ট হান্স নিমারমের’
‘খোকা হান্স যা শেখেনি, ধেড়ে হান্সও তা কোনোদিন শিখবে না৷’ ছোটবেলায় মানুষ যা শেখে না, পরবর্তী জীবনে তা শেখা শক্ত – এ অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের৷ দাঁত মাজা থেকে শুরু করে নিজের জিনিসপত্র সযত্নে রাখা, এসব ভালো অভ্যাস আমরা সাধারণত ছোটবেলাতেই করে থাকি৷
‘ইস্ট ডি কাটসে আউস ডেম হাউস, টানৎসেন ডি ময়জে আউফ ডেম টিশ’
‘বেড়াল বাড়ি থেকে বেরোলেই ইঁদুরেরা খেলা করে৷’ বাবা-মা কিংবা অভিভাবক, স্কুলের মিস কিংবা টিচার ঘর থেকে বেরোলেই ছেলেপিলেরা, এমনকি মেয়েরাও – ভূতের নেত্য করে, এ তো আমরা সকলেই জানি৷ এককালে পাঠশালে গুরুমশায়ের ঢুলুনি এলেই পড়ুয়ারা যা প্রাণ চায় তাই করত, আজও তা বিশেষ বদলায়নি৷
‘ক্লাইনভি মাখ্ট আউখ মিস্ট’
‘ছোট গরুতেও গোবর দেয়৷’ অর্থাৎ সব কিছু যে বড় হতে হবে, এমন নয়৷ ছোট ছোট ফলাফল জুড়েও সাফল্য পাওয়া যেতে পারে৷ প্রবচনটা প্রধানত ইতিবাচক হলেও, এর আরেক অর্থ এই হতে পারে যে, ছোট ছোট ফলাফল জুড়ে একটা বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে৷
‘রেডেন ইস্ট সিলবার, শোয়াইগেন ইস্ট গোল্ড’
‘প্রগলভতা রুপো, নীরবতা সোনা৷’ অর্থাৎ কথা বলার দাম যতই হোক না কেন, চুপ করে থাকার মূল্য তার চেয়ে বেশি৷ এক কথায়: বেশি বকবক কোরো না...
‘ভের ডেন ফেনিশ নিশ্ট এহর্ট, ইস্ট ডেস টালার্স নিশ্ট ভের্ট’
‘যে পয়সার মূল্য দেয় না, সে কোনোদিন টাকা অর্জন করতে পারবে না৷’ সঞ্চয়ের মূলমন্ত্রই হলো তাই, ফোঁটা ফোঁটা করেই জল জমে, পয়সা জুড়ে জুড়ে টাকা হয়৷ জার্মানে প্রবচনটিতে তা ফেনিগ (পেনি) আর টালার (ডলার) হলেও, মানে একই দাঁড়াচ্ছে৷
‘পেশ ইম স্পিল, গ্ল্যুক ইন ডের লিবে’
‘জুয়ায় কপাল খারাপ মানে প্রেমে কপাল ভালো৷’ প্রবচনটা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে৷ জুয়া খেলতে বসে সর্বস্ব হারিয়ে যখন আর কোনো সান্ত্বনা থাকে না, তখন বোধহয় মানুষ এভাবেই সান্ত্বনা খোঁজে – অথবা দেয়৷ একদিকে অর্থ আর অন্যদিকে প্রেম, এই কি এর নিগূঢ় অর্থ?
‘ইয়েডার ইস্ট জাইন গ্ল্যুকেস শ্মিড’
‘প্রত্যেক মানুষই তার ভাগ্যের কামার৷’ অর্থাৎ পরকে বা ভাগ্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ আমরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যকে গড়ে নিই৷ প্রবচনটির যেমন একটি ইতিবাচক দিক আছে – আমার ভাগ্য আমার নিজের হাতে – তেমন একটি নেতিবাচক দিকে আছে: আমার দুর্ভাগ্যের জন্য আমি নিজেই দায়ী৷
‘ভি মান ইন ডেন ভাল্ড হিনাইনরুফ্ট, জো শাল্ট এস হেয়ারাউস’
‘জঙ্গলে যেভাবে ডাকবে, সেভাবেই প্রতিধ্বনি আসবে৷’ বাস্তবিক একটি জার্মান প্রবচন, যেন ব্ল্যাক ফরেস্টের ঝুঁঝরো অন্ধকারের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ ক্লান্ত পথিক ডাকছে, উত্তর দিচ্ছে মর্মরিত ঝাউবন৷ প্রবচনটির অর্থ কিন্তু, এক কথায়, যেমন কর্ম তেমনি ফল৷
‘মর্গেনস্টুন্ড হাট গোল্ড ইম মুন্ড’
‘ভোর আসে মুখে সোনা নিয়ে৷’ সেই সোনা কি প্রভাতসূর্যের আলো? চিত্রকল্প হিসেবে মানায় বটে, কিন্তু প্রবচনটির আসল অর্থ হলো, সকালবেলায় কাজ করলে অনেক বেশি কাজ হয়, ফলও হয় অনেক ভালো – ভোরবেলায় পরীক্ষার পড়ার কথা মনে করুন৷
‘ডাস লেটৎস্টে হেম্ড হাট কাইনে টাশেন’
‘শেষ ফতুয়ার জেব নেই৷’ অথবা শেষ জামাটির কোনো পকেট নেই৷ খ্রিষ্টান জার্মানদের ক্ষেত্রে কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্যি, কেননা, যে বেশে মরদেহকে কফিনে শোয়ানো হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার পকেট তো দূরের কথা, পিঠের দিকটা পর্যন্ত থাকে না৷ প্রবচনটির মূল অর্থ কিন্তু, জীবনে যতই উপার্জন বা সঞ্চয় করো না কেন, শেষমেশ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না৷