1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর'

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

১৯৯০ সালের তেসরা অক্টোবর হেলমুট কোল’এর রাজনৈতিক জীবন তার শিখরে পৌঁছায়, তাঁর সারা জীবনের স্বপ্ন সফল হয়৷

https://p.dw.com/p/PPSn
Deutschland Helmut Kohl Ex-Bundeskanzler schwarz/weiß
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener

যে শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ঢেউ শুরু হয়েছিল সাবেক পূর্ব জার্মানির পথে-পথে, তা খরস্রোতে পরিণত হবার পর অভিজ্ঞ কাণ্ডারীর মতো হাল ধরে ছিলেন এই ‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর'৷

গত মে মাসে আশিতে পা দিলেন হেলমুট কোল৷ হুইলচেয়ারে বসে, শত শারীরিক কষ্ট সত্ত্বেও না-কাঁপা গলায় বললেন:

‘‘আমি যখন আশিতে পৌঁছে আমার জীবনের হালখাতা লেখার চেষ্টা করি, তখন শুধু এ'টুকু বলতে পারি: আমি এই জীবনের জন্য গর্বিত এবং কৃতজ্ঞ৷''

টেলিভিশনের খবর: সীমান্ত খোলা!

ফেরা যাক বিশ বছর আগে তেসরা অক্টোবরের আগের সেই মাসগুলোতে৷ ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর হেলমুট কোল ওয়ারশতে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাজোভিয়েচকি-র সঙ্গে মিলিত হন৷ কোল এবং তাঁর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-ডিট্রিচ গেনশার তখন জার্মান-পোলিশ সম্পর্কের উন্নতীকরণের জন্য সচেষ্ট৷ ঠিক সেদিন সন্ধ্যাতেই পূর্ব বার্লিনের হাজার হাজার মানুষ ছোটেন পশ্চিম বার্লিনে যাবার সীমান্ত পারাপারের কেন্দ্রগুলির দিকে৷ তাঁরা টেলিভিশনে শুনেছেন, এখন নাকি অবাধে পশ্চিমে যাওয়া সম্ভব৷ এমনকি ওয়ারশ'তেও এই অষ্টমাশ্চর্যের কথা ছড়িয়েছে৷ পোলিশ টেলিভিশন কোল গেনশারের রাষ্ট্রীয় সফরের কথা ভুলে সেই খবরই দিচ্ছে৷

Altbundeskanzler Helmut Kohl Flash-Galerie Doktortitel
গত মে মাসে আশিতে পা দিলেন হেলমুট কোলছবি: AP

আমরা একই জাতি

পরদিন সকালেই কোল তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর অসমাপ্ত রেখে বিমানযোগে বার্লিনে ফেরেন৷ উদ্দেশ্য: সেখানে যে সব অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে, কোল সেগুলো স্বয়ং চাক্ষুষ দেখতে চান৷ সেদিন সন্ধ্যায় পশ্চিম বার্লিনের শ্যোনবের্গের পৌরভবনে কোলকে বলতে শোনা যায়:

‘‘সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ এবং বিগত দিনগুলি আমাদের কর্ত্তব্য নির্দ্দেশ করে দিয়েছে৷ কাজেই আমি পূর্ব জার্মানির সকলকে বলব: আপনারা একা নন৷ আমরা আপনাদের পাশে আছি৷ আমরা একই জাতি আছি এবং থাকব এবং একসঙ্গেই আমাদের স্থান৷''

দশ দফা

এই সন্ধ্যায় কোল কিন্তু পুনর্মিলনের কথা মুখে তোলেননি৷ অথচ দু'সপ্তাহ পরেই কোল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে জার্মান সংসদে তাঁর দশ-দফা পরিকল্পনা পেশ করেন: সেই পরিকল্পনায় জার্মানির একীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিধৃত ছিল৷ কোল যাদের চমকে দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মিত্রশক্তিরাও ছিল৷ কেননা কোল তাঁর নিকটতম কর্মীদের ছাড়া আর কাউকে ঘুণাক্ষরেও জানাননি, যে জার্মানির একীকরণের শুভলগ্ন এসেছে বলে তিনি মনে করেন, এবং সেজন্যই তিনি তাঁর দশ-দফা পরিকল্পনা পেশ করতে চলেছেন৷

সম্মতি

১৯শে ডিসেম্বর কোল পূর্ব জার্মানির প্রধানমন্ত্রী হান্স মোড্রোভ-এর সঙ্গে মিলিত হন – ড্রেসডেনে৷ ড্রেসডেনে তাঁর অভ্যর্থনা একটি জয়যাত্রায় পরিণত হয়৷ কিন্তু এখানে কোল'এর মূল সমস্যা ছিল, একীকরণের স্বপ্ন সফল হওয়ার মুখে জার্মান জাতীয়তাবাদের ভীতি যেন মাথা চাড়া না দেয় – বিশেষ করে মিত্রশক্তিদের মধ্যে৷ কাজেই ড্রেসডেনে তাঁকে বলতে শোনা যায়:

‘‘(মিত্রশক্তিরা) এ দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমরা মেনে চলব৷ আমরা একত্রে জার্মানির ভবিষ্যৎ অভিমুখে এই যাত্রা সম্পন্ন করব৷''

ঐতিহাসিকরা বলেন, কোল-এর ড্রেসডেন ভাষণই মিত্রশক্তিদের সম্মতির পথ প্রশস্ত করে৷ মনে রাখা দরকার, বহির্বিশ্বের অধিকাংশ সরকারপ্রধানেরা প্রথমে জার্মান পুনর্মিলনের বিরুদ্ধে ছিলেন৷ ইউরোপের কেন্দ্রে জার্মানির মতো একটি শক্তির পুনরুত্থান অনেকের কাছেই ভীতিকর ছিল৷ কিন্তু কোল তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায়, এবং যেহেতু রাজনীতির মঞ্চের অধিকাংশ মুখ্য অভিনেতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত আস্থার সম্পর্ক ছিল, সেহেতু সব দ্বিধা-সন্দেহ কাটিয়ে কোল ‘বিশ্বের' সম্মতি সংগ্রহ করেন৷ মনে করা যাক ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোয় কোল-গর্বোচভ সাক্ষাতের কথা: কোল সংকটপীড়িত সোভিয়েত ইউনিয়নকে অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জার্মান পুনর্মিলনের পথে বৃহত্তম প্রতিবন্ধকটি দূর করেন৷ আসলে কোল জানতেন, গর্বাচভ যা-তে পলিটব্যুরোতে সব প্রতিরোধ অতিক্রম করতে পারেন, সেজন্য তাঁকেও গর্বাচভ'কে সাহায্য করতে হবে৷

সেবাস্টিয়ান কাটসের/এসি