জার্মান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
জার্মানিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিয়ম বেশ কঠোর৷ এইসব প্রথাগত নিয়ম এবং বেশ কিছু নতুন প্রবণতার তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
মৃত্যু বেড়েছে
পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট স্টাটিস্টার তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে জার্মানিতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন৷ জার্মানির প্রায় সকল রাজ্যেই কবরস্থানে দাফন করা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু কবর দেওয়ার পদ্ধতি ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে৷ ঐতিহ্যগতভাবে প্রায়ই বড় ঘাসযুক্ত প্লটে কবর দেয়া হয়৷ এর বেশিরভাগই স্থায়ী নয়, ১৫ থেকে ২০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব লিজ আর নবায়ন করা হয় না৷
বিশেষ স্থান
হামবুর্গের ওলসডর্ফ বিশ্বের বৃহত্তম পার্ক কবরস্থান৷ এখানে মৃতের স্বজনদের দুঃখপ্রকাশের জন্য একটি আলাদা স্থান রয়েছে৷ এখানে মানুষ ফুল নিয়ে এসে প্রিয়জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, বসে আপনমনে স্মৃতিচারণ করতে পারেন, রঙিন চক দিয়ে দেয়ালে লিখতে বা আঁকতে পারেন। এমনই কিছু বার্তা দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ একটি হৃদয়বেষ্টিত বার্তায় লেখা রয়েছে ‘ডু ফেলস্ট’, অর্থাৎ ‘তোমাকে মিস করছি’৷
ঐতিহ্যবাহী দাফন কমছে
দাফনের খরচ বেড়ে গেছে, পারিবারিক প্লটে বিনিয়োগ এবং প্রথাগত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আগ্রহ কমেছে৷ ফলে বিশেষ করে শহুরে এলাকায় জার্মানরা অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল বিকল্প বেছে নিচ্ছেন, আর এই বিকল্পটি হচ্ছে- শ্মশান৷ তবে এখানেও কফিন বা তেমনই কোনো একটি ধারক প্রয়োজন৷ মরদেহ পোড়ানোর পর অবশিষ্টাংশ একটি কলসে বন্ধ করে কবরস্থান বা মনোনীত বনে দাফন করতে হয়।
জীবনের শেষ পছন্দ
সিলমোহর করা আলংকারিক সিরামিক, ধাতু, কাঠ বা বায়োডিগ্রেডেবল কলসেও হয় অনেকের শেষ আশ্রয়৷ জার্মানিতে মৃতদের অর্ধেকেরই দেহাবশেষ এভাবেই ধারণ করা হয়৷ শহরগুলোতে এই হার অনেক বেশি। ২০১৫ সালে, জার্মানির ক্ষুদ্রতম রাজ্য ব্রেমেন দাফনের রীতি শিথিল করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা রাখে৷ প্রিয়জনের ছাই নিজের বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে দেওয়া বা পুঁতে দেয়ার অনুমতি দেয় রাজ্যটি৷
ঘন বনে শেষ আশ্রয়
অনেক জার্মানই জীবনাবসানে শান্তির ঠিকানা হিসাবে ঘন বনকে বেছে নিচ্ছেন৷ নির্দিষ্ট কিছু বনে গাছের শিকড়ের পাশে পচনশীল পাত্রে পুঁতে দেয়া হয় দেহাবশেষ৷ তবে এরপর সেখানে আর কোনো ফুল বা মোমবাতি রাখার নিয়ম নেই৷ সব ছেড়ে দিতে হয় প্রকৃতির দায়িত্বে৷
নতুন ধরনের কফিন
নিজের কফিন নিজে তৈরি করা অনেকের ক্ষেত্রে থেরাপির মতো কাজ করে৷ কীভাবে কফিন তৈরি করতে পারেন, এ বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন সেবিকা লিডিয়া ব়্যোডার (বামে) এবং আর্টিস্ট আনা অ্যাডাম৷ হাতে তৈরি কফিনের জন্য চার বর্গমিটার কাঠের প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় মাত্র কয়েকশ ইউরো৷ দোকান থেকে কিনতে গেলে এসব কফিনের দাম পড়ে ন্যূনতম এক হাজার ইউরো৷
শেষ দেখা
বিশ্বের অনেক দেশেই মরদেহ কবর দেয়ার আগে শেষ বারের মতো প্রিয়জনদের দেখার জন্য কফিন খুলে বা ঢেকে রাখার নিয়ম রয়েছে৷ তবে জার্মানিতে এই নিয়ম তেমন একটা নেই৷ মরদেহ সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ব্যবহারের নিয়মও তেমন একটা দেখা যায় না৷
শোক ও সহানুভূতি
জার্মান ডাকবিভাগ ডয়চে পোস্ট শোকসংবাদ বা সহানুভূতি জানিয়ে চিঠি পাঠানোর জন্য বিশেষ ডাকটিকিট ছাপায়৷ শোকার্ত প্রিয়জন প্রায়ই ডাকের মাধ্যমে শোকসংবাদ এবং শেষকৃত্যের স্থান ও সময় জানিয়ে চিঠি পাঠান৷ অনেকক্ষেত্রে এসব চিঠিতে ফুল নিয়ে আসা যাবে কিনা, নাকি এর পরিবর্তে বৃদ্ধাশ্রম বা সেবাশ্রমের মতো কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ সহায়তা দেয়াটাই শ্রেয়, এমন তথ্যও উল্লেখ করা থাকে৷
খাওয়াদাওয়া
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা স্মৃতিচারণের আয়োজনের পর মৃতের কাছের মানুষ পাশেই কোনো একটি রেস্টুরেন্টে জড়ো হন৷ লাইশেনশমাউজ বা ‘মৃ্তের খাবার’ নামের এই আয়োজনে সাধারণত কফি, স্যুপ, স্যান্ডউইচ এবং নানা ধরনের কেক থাকে৷
দাফনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ২০০৫ সালে বাভারিয়ার শহর ম্যুনারশ্টাড্টে স্থাপন করা হয় ফেডারেল প্রশিক্ষণকেন্দ্র৷ তিন বছর ধরে চলে এই প্রশিক্ষণ৷ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে কীভাবে মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে হয়, শেখানো হয় সেটাও৷ চীন এবং রাশিয়া থেকে অনেকে আসেন এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে৷
চর্চা করা জন্য গোরস্থান
হাতে কলমে সব শিক্ষা তো নেয়া হলো৷ কিন্তু কবর খননের সময় যদি মাটি ভেঙে পড়ে, যদি মজবুত না হয়? আগেই যাতে এই প্রশিক্ষণও হাতেকলমে নেয়া যায়, এজন্য বাভারিয়ান আন্ডারটেকার অ্যাসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালে ম্যুনারশ্টাড্টে একটি প্রশিক্ষণ কবরস্থান চালু করা হয়৷ এখানে প্রশিক্ষণার্থীরা কবর খোঁড়ার হাতেকলমে শিক্ষা নেন৷
সমাধি জাদুঘর
জার্মানিতে নানা ধরনের অদ্ভুত জিনিসের জাদুঘর রয়েছে৷ এমনই একটি কাসেল শহরের সমাধি সংস্কৃতির মিউজিয়াম৷ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঐতিহাসিক নানা সামগ্রী থেকে শুরু করে আধুনিক প্রথাও প্রদর্শন করা হয় সেখানে৷ তবে ১৯৯২ সালে চালু হওয়া এই জাদুঘরের ব্যবস্থাপকেরা অবশ্য মনে করেন, ‘জাদুঘরটি জীবনকে নিয়ে’৷ ছবিতে বামে দেখা যাচ্ছে ১৮৮০ সালের একটি শববহরকারী যান৷ ডানের যানটি ১৯৭৮ সালের৷