1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাপানের কোয়দে, হিরোশের গল্প

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

গত মার্চ মাসে জাপানের ভূমিকম্প ও সুনামি পরিবর্তন এনেছে অনেকের জীবনে৷ পরিবর্তন এসেছে সেইসব বিশেষজ্ঞদের জীবনেও যাদের কথা আগে কেউ শুনতেন না৷

https://p.dw.com/p/12bXl
দুর্ঘটনা কবলিত ফুকুশিমাছবি: AP

হিরোআকি কোয়দে৷ কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক৷ গবেষণা করেন পরমাণু শক্তি নিয়ে৷ তবে সবসময় কথা বলেন এর বিপক্ষে৷ কেননা নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে তিনি ছিলেন চিন্তিত৷ কিন্তু পরমাণু শক্তির বিপক্ষে তাঁর কথা বলাটা কখনোই খুব বেশি মানুষের সমর্থন পায়নি৷

তবে পরিস্থিতি বদলেছে৷ এখন কোয়দের কথা শোনার জন্য, তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য জাপানের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়৷ কারণ দর্শক বা পাঠক কোয়দের কথা শুনতে চায়, পড়তে চায়৷

এছাড়া তাঁর লেখা বই এখন থাকছে বিক্রি তালিকার শীর্ষে৷ এইতো গত জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছে কোয়দের লেখা বই ‘দ্য লাই অব নিউক্লিয়ার পাওয়ার'৷ পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে লেখা এই বইটির এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ কপি বিক্রি হয়েছে৷

আর হবেই বা না কেন? কারণ এই মুহূর্তে জাপানে চলছে পরমাণু শক্তির বিরোধিতা৷ এক জরিপে দেখা গেছে দেশটির প্রায় ৭০ ভাগ লোক এখন এই শক্তি ব্যবহারের বিপক্ষে৷

Japan Fukushima Kraftwerk Reaktor 2 Flash-Galerie
ছবি: AP

তবে হঠাৎ করে পাওয়া এই জনপ্রিয়তায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কোয়দে৷ তিনি বলছেন, যদিও আমি ৪০ বছর ধরে এই শক্তির বিপক্ষে কথা বলছি, কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে  রক্ষা করতে না পারার দায় আমাকে নিতেই হবে৷

কোয়দের জন্ম হয়েছিল ষাটের দশকে৷ স্কুলে পড়ার সময় তিনি পরমাণু শক্তির উন্নয়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ তারপর যখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ার জন্য সেন্দাই শহরে যান তখনই মূলত এই শক্তির প্রতি তাঁর বিশ্বাস কমতে থাকে৷ কেননা ঐ শহর কর্তৃপক্ষ জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটা শহরের কাছে না করে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল৷

এই ঘটনা কোয়দের মনে একটি প্রশ্নের জন্ম দেয়৷ সেটা হচ্ছে, কেন সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও শহরে কেন্দ্রটি বসানো হলো না? তার মানে নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো সমস্যা রয়েছে৷ সেই থেকে পরমাণু বিদ্যুতের বিপক্ষে কথা বলে আসছিলেন কোয়দে৷ তবে বিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোয়দে পরমাণু বিদ্যুতের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতেন৷

কোয়দের মতো আরও একজন হলেন তাকাশি হিরোশে৷ গত বছর আগস্ট মাসে লেখা একটি বইয়ে হামাওকা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার আভাষ দিয়েছিলেন তিনি৷ তবে বাস্তবে দুর্ঘটনা ঘটে ফুকুশিমা কেন্দ্রে৷ কিন্তু তারপরও আলোচনায় চলে আসেন হিরোশে৷ এছাড়া তিনি কথা বলেন তেজস্ক্রিয়তার কারণে ছোট্ট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে৷ এই বিষয়টা সাধারণত সরকার বা গণমাধ্যমে ততটা আলোচিত হয়না৷ তবে কোয়দের মতো হিরোশেকে গণমাধ্যমে অতটা দেখা যায়না৷ কারণ তিনি সমালোচনা করতে খুব কঠোর শব্দ প্রয়োগ করেন৷

ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা ও কোয়দে এবং হিরোশের মতো সমালোচকদের কারণে জাপানে পরমাণু বিদ্যুতের প্রতি মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে৷ সেজন্য এখন প্রায়ই জাপানে পরমাণুবিরোধী বিক্ষোভ হতে দেখা যায়৷ আর সরকারও জনগণের মনোভাব বুঝে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম