জাপানে পাখি দিয়ে মাছ ধরা!
জাপানের ‘গিফু’ অঞ্চলে এখনো ১৩০০ বছর আগের মতো পাখি দিয়ে মাছ ধরা হয়৷ পানকৌড়ি দিয়ে মাছ ধরার এই রীতি সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
১৩০০ বছর আগের রীতি...
‘উকাই’ নামের এই বিশেষ মাছ ধরার রীতিতে জাপানের গিফু অঞ্চলের নাগারা নদীতে নামানো হয় পানকৌড়িদের৷ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, মশাল জ্বেলে যখন সেখানের জেলে বা ‘উশো’রা মাছ ধরতে নামেন, সেটা দেখলে মনে হয় সময় এতটুকুও এগোয়নি৷ কিন্তু বাস্তব কিছুটা ভিন্ন৷
হারাতে বসা ইতিহাস...
উশোদের ধৈর্য ছাড়া এই ‘উকাই’ সম্পন্ন করা অসম্ভব৷ সূর্য ডোবার পর বিশাল আকারের মশাল জ্বেলে ছোট ছোট ট্রাউট মাছ ধরার এই রীতি অতীতে ইউরোপে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে তা কেবল চীন বা জাপানেই দেখা যায়৷ এক সময় পৃথিবীর একাধিক দেশে এভাবে মাছ ধরার চল ছিল৷ কিন্তু এখন হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও সেভাবে চোখে পড়ে না ‘উকাই’-এর আয়োজন৷ তবুও জাপানে এই শিল্পকে ঘিরে আস্তে আস্তে বাড়ছে পর্যটন৷
পানকৌড়ির প্রশিক্ষণ!
‘উকাই’-এর জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রজাতির পানকৌড়ি, যাদের জাপানের ইবারাকি প্রান্ত থেকে এই অঞ্চলে আসার পর ধরে ফেলেন উশোরা৷ এরপর তিন বছর ধরে চলে তাদের প্রশিক্ষন দেওয়ার পালা৷ প্রশিক্ষণ শেষে প্রতি বছরের মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে এই মাছ ধরা৷ কিন্তু বছরের বাকি সময়েও নিয়মিত অনুশীলন করাতে হয় এই পাখিদের৷
পোষ মানা পানকৌড়ি
দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় একসাথে বেশ কয়েকটি পানকৌড়িকে৷ উশোর হাতে ধরা দড়ির অন্য অংশ আলগা করে বাঁধা থাকে পানকৌড়ির গলায়৷ লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণের ফলে পাখিরা মাছ খায় না৷ বরং মাছগুলি ধরে উশোর কাছে এনে দিয়েই আবার লেগে পড়ে মাছ ধরায়৷
পাঁচ প্রজন্ম ধরে উশো
৪৬ বছরের শুজি সুগিয়ামা তাঁর বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন উশো হবার প্রশিক্ষণ৷ পাঁচ প্রজন্ম ধরে তাঁর পরিবার এই অভিনব ধারায় জীবিকা অর্জন করে চলেছে৷
রাজকীয় ছাড়পত্র...
মাছ ধরার এই রীতি কয়েকশ’ বছর পুরোনো হলেও ১৮৯০ সালে রাজপরিবারের পক্ষে বিশেষ লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়৷ হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্পের জন্য রাজকীয় লাইসেন্স পেয়েছেন এমন মাত্র নয়জন উশো বর্তমানে এই কাজের সাথে যুক্ত৷ বছরে আটবার তাঁরা রাজপরিবারের হয়ে মাছ ধরতে নামেন৷ এই কাজের জন্য তাঁদের ৮,০০০ ইয়েন অর্থাৎ ৭১ মার্কিন ডলার বেতন দেওয়া হয়৷
ইউনেস্কোর আশায় উশোরা...
মাছ ধরার এই পদ্ধতি এখন আর বাণিজ্যিকভাবে আগের মতো সফল নয়৷ স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন ভর্তুকির উপর নির্ভর করেই চলে বেশির ভাগ উশোর জীবন৷ তবে আজকাল এই অভিনব মাছ ধরা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেক পর্যটক৷ সে কারণেই ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার স্বপ্ন দেখেন জাপানের উশোরা৷