জাপানে ট্যাটুর ‘ট্যাবু’ নিয়ে জীবন যাপন
শরীরে ট্যাটু আঁকাকে জাপানি সমাজ আজও পুরোপুরি মেনে নেয়নি৷ কেমন জীবন সেখানের ট্যাটুপ্রেমীদের, দেখুন ছবিঘরে...
শিল্প, না অঙ্গহানি?
জাপানি সমাজে ট্যাটুকে ডাকা হয় ‘ইরেজুমি’ নামে, যার অর্থ রং ভরা৷ শরীরে উল্কি আঁকার বিশ্বজুড়ে প্রচলিত এই রীতিকে জাপানে সহজভাবে নেওয়ার চল নেই আজও৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ট্যাটুপ্রেমীদের তুলনা করা হয় মাদকাসক্ত, অপরাধী চক্র ও অন্যান্য সমাজবিরোধীদের সাথে৷ সে দেশে ট্যাটুপ্রেমীদের জীবন তাই অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেকটাই কঠিন৷
ট্যাটু লুকোনো
চুয়াল্লিশ বছর বয়েসি হিরোশি ইওশিমুরা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক৷ কাজের সময় কখনোই নিজের ট্যাটুতে মোড়া শরীর দেখান না তিনি৷ তবুও মাঝে মাঝে ট্রেন স্টেশনে পুলিশ তাকে থামিয়ে জামা খুলতে বলে৷ তারা দেখতে চায় যে কোনো নির্দিষ্ট মাদকাসক্তি বা অপরাধী চক্রের সাথে জড়িত থাকার কোনো চিহ্ন ইওশিমুরার শরীরে পাওয়া যায় কিনা৷ ইওশিমুরা জানান, তাঁর পাড়ায় কেউ জানেন না যে তাঁর গায়ে এত ট্যাটু আছে৷
ট্যাটুর সাথে সমাজবিরোধিতার সম্পর্ক
বিগত চার শতক ধরে জাপানে মূলত অপরাধীদের সাথে শরীরের উল্কিকে মেলানো হয়ে আসছে৷ সেখানে একেকটি অপরাধী চক্র বা গ্যাঙের রয়েছে বিশেষ ডিজাইনের উল্কি৷ সম্প্রতি ইয়াকুজা গ্যাং তাদের উল্কির জন্য শিরোনামে আসে৷ হাত ও গলা ছাড়া সারা শরীরে ট্যাটু করে রাখে তারা, যা সহজেই সাধারণ পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখা যায়৷ তাই জনসাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কে সাধারণ ট্যাটুপ্রেমী আর কে অপরাধী গ্যাঙের সদস্য৷
যে সমস্ত বিধিনিষেধ
জাপানে কারো শরীরে ট্যাটু থাকলে স্পা বা হট স্প্রিং রিসর্টে যেতে পারবেন না তিনি৷ পাশাপাশি, বেশ কিছু সমুদ্রতট, জিম বা সুইমিং পুলেও রয়েছে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা৷ এছাড়া, খেলাধুলার জগতেও আছে ট্যাটু নিয়ে সংশয়৷ বেশ কিছু বক্সিং ও বাস্কেটবল খেলোয়াড় মেকআপ করে শরীরে উল্কি ঢাকেন৷
তবুও কেন ট্যাটুর প্রতি টান
৫২ বছর বয়েসি শোডাই হোরিরেনের সারা শরীরে ট্যাটু৷ বাদ পড়েনি মাথাও৷ শুধু ট্যাটু শরীরে ধারণ করাই নয়, হোরিরেন জাপানের অন্যতম বিখ্যাত ট্যাটুশিল্পীও৷ তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি পুরোনো হয়, বাবা-মা মারা যায়, প্রেম ভাঙে, বাচ্চারা বড় হয়ে দূরে চলে যায়, কিন্তু এই ট্যাটু কবর পর্যন্ত আপনার সাথে থাকবে৷ সেটাই এর আকর্ষণ৷’’
আদালতের রায় বদলাচ্ছে মনোভাব
গত বছর আদালতের একটি রায়ে কিছুটা সুরাহা মিলেছে ট্যাটুপ্রেমীদের৷ সেই রায় জানায় যে, ট্যাটু শুধুই একপ্রকারের অঙ্গসজ্জা, কোনো মেডিক্যাল, অঙ্গহানির প্রক্রিয়া নয়৷ ফলে ট্যাটুপ্রেমীরা মনে করছেন, আস্তে আস্তে ট্যাটুশিল্প স্বাভাবিক হবে জাপানে৷ বিভিন্ন পশ্চিমা গানের ব্যান্ডের শিল্পীদের গায়ে ট্যাটু রয়েছে৷ জাপানে তারা বেশ জনপ্রিয়৷ এটিও ট্যাটুকে সমাজে স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে৷
ট্যাটু-ট্যাবুর অবসান
জাপানের ট্যাটুপ্রেমীদের সংগঠন ইরেজুমি আইকোকাই-এর সদস্যরা নিয়মিত প্রকাশ্যে ট্যাটু নিয়ে আলোচনা করেন, বিভিন্ন পার্টিতে ট্যাটু দেখিয়েই অংশগ্রহণ করেন, যাতে ট্যাটু নিয়ে সমাজের বিভিন্ন ট্যাবুকে কিছুটা হলেও বদলাতে পারেন৷ তাঁরা জানাতে চান যে ‘‘ট্যাটু থাকলেও আসলে তাঁরা প্রত্যেকে খুশি ও সহজ মানুষ’’৷