1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাপানি শিশুদের বাবার আপিল নিষ্পত্তির আগে স্থিতাবস্থা

৯ মার্চ ২০২৩

জাপান থেকে আসা দুই শিশুর হেফাজত নিয়ে তাদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফের করা আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ঢাকার জেলা জজ আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত৷

https://p.dw.com/p/4OQVa
ছবি: Africa Studio - Fotolia.com

এবং একই সঙ্গে দুই পক্ষকে এ সময়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে৷

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণসহ এ আদেশ দেন৷

শুনানিকালে আদালত বলেছেন, ‘সব সমাধান আদালতে হয় না৷ দুপক্ষই (শিশুদের বাবা ও মা) ডেসপারেট৷ আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়৷'

আইনজীবীদের তথ্যমতে, আদালতের অনুমতি ছাড়া জাপান থেকে আসা দুই শিশুকে দেশের বাইরে না নেওয়ার বিষয়ে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশের অংশবিশেষ পুনর্বিবেচনা চেয়ে এবং শিশুদের বাবার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে শিশুদের মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন৷ আর শিশুদের মায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে শিশুদের বাবা ইমরান আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন৷
পৃথক আবেদনের ওপর ২ মার্চ শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আজ আদেশের জন্য দিন রাখেন৷ আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশসহ আদেশ দেন আপিল বিভাগ৷ আদালতে শিশুদের মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ শিশির মনির৷ বাবার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আখতার ইমাম, রাশনা ইমাম ও মোশতাক আহমেদ৷

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, ‘আপিল বিভাগের অনুমতি ছাড়া দুই শিশুকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারির আদেশে বলা হয়েছিল৷ আপিল বিভাগের এই আদেশ অমান্য করে শিশুদের মা দুবার শিশুদের নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ এ জন্য এরিকোর আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমা গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ৷ আদালতের আদেশ ভঙ্গ করার চেষ্টা উল্লেখ করে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে শিশুদের মা এরিকোকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন৷'

আপিল বিভাগের আজকের স্থিতাবস্থার আদেশের ফলে দুই শিশু যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে বলে জানান শিশুদের বাবার এই আইনজীবী৷ তিনি বলেন, ‘প্রথম সন্তান তার মায়ের কাছে ও দ্বিতীয় সন্তান তাদের বাবার কাছে আছে৷ জেলা জজ আদালতে থাকা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষই তাদের নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারবে না৷'

অবশ্য শিশুদের মায়ের আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, ‘শিশুদের বিদেশ নিয়ে যেতে আদালতের অনুমতির বিষয়টি নেই৷ তবে শিশুদের বাবার করা আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে জেলা জজকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ এ সময়ে দুপক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে৷'

এর আগে শিশুদের মায়ের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেন৷ ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটির (শিশুদের বাবার করা)নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত  দুই শিশু তাদের মা এরিকো নাকানোর হেফাজতে থাকবে বলে আদেশে বলা হয়৷ শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়৷ মামলার পারিপার্শ্বিকতা ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় শিশুদের এই আদালতের অনুমতি ছাড়া এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়৷

জাপানের নাগরিক নাকানো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিয়ে হয়৷ তাঁদের তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে৷ ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান৷ এরপর একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি৷ ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে৷ ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো৷ অন্যদিকে, ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান৷

এরিকো ও ইমরানের পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন৷ এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো, যা চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে৷

পরে আপিল বিভাগ দুই শিশুকে তাদের মায়ের কাছে রাখার আদেশ দেন৷ বাবা শিশুদের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে পারবেন বলে আদেশে বলা হয়৷ পাশাপাশি আবেদনকারী পক্ষকে (শিশুদের মা) নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। শিশুদের মা গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত লিভ টু আপিল করেন, যার ওপর গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ আদেশ দেন৷

শিশুদের হেফাজত নিয়ে পারিবারিক আদালতে করা বাবার মামলা গত ২৯ জানুয়ারি খারিজ করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক৷ এর বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা জজ আদালতে আপিল করেন শিশুদের বাবা৷ এ মামলায় আগামী ২৫ মে শুনানির দিন রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী৷

এনএস/কেএম (প্রথম আলো)