1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাপান কি আরেকটি চেরনোবিল?

২৮ মার্চ ২০১১

জাপানে বিভিন্ন খাবারে এবং পানিতে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, আতঙ্কিত আশেপাশের দেশের মানুষও৷

https://p.dw.com/p/10iqQ
জাপানে খাবার ও পানিতে তেজস্ক্রিয়তাছবি: AP

জাপান থেকে খাবার আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে৷ সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন থেকে জাপান এখন অনেক দূরে৷ এভাবে আর কতদিন চলবে? প্রতিটি মূহূর্তেই মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে৷ বাধ্য হয়েই অনেকে সেই খাবার খাচ্ছে এবং পানি পান করেছে৷ তাই সবাই চিন্তিত এই ভেবে যে, ‘‘আমার ভেতর কি তেজস্ক্রিয়তা ঢুকে পড়েছে?'' একজন মহিলা জানলেন,‘‘আমার ভেতর তেজস্ক্রিয়তা ঢুকে পড়েছে কিনা তা নিয়ে আমি চিন্তিত৷ বাচ্চাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে কিনা তাও জানিনা৷ আমরা একই খাবার খাচ্ছি, একই পানি পান করছি৷''

কেইডো ইয়ামাডা একজন চিকিৎসক৷ বেশ চিন্তিতভাবে তিনি বললেন,‘‘আমি যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে চিন্তিত, তা হল যে বা যাদের দেহে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যাবে তারা ভীষণভাবে বৈষম্যের শিকার হবে৷''

কতজন আক্রান্ত কেউই জানে না

এবং শেষ পর্যন্ত কতজন মানুষের মধ্যে এই তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি পাওয়া যাবে তা সঠিকভাবে এখনো কেউ জানে না৷ সবাই আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে৷ একজন ভদ্রলোক একটি কারখানায় কাজ করতেন৷ সুনামি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সব কিছু৷ তিনি প্রতিদিন বাসা থেকে বের হন নাক-মুখ ঢেকে৷ প্রাণপণে তিনি চেষ্টা করেন খুব গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস না নিতে৷ তিনি জানান,‘‘আমি কোন অবস্থাতেই স্বস্তিবোধ করছি না৷ কোন দিক থেকে কখন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে চলে আসি, তা নিয়ে ভীষণ ভীত আমি৷''

তিনি একা নন, আরো অনেকেই এভাবে নাক-মুখ ঢেকে বাসা থেকে বের হচ্ছেন৷ তবে অনেকের মনে আতঙ্কের বোঝা কিছুটা হালকা হয়েছে৷

জাপানে খাবারের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে৷ পানির মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়েছে৷ ফুকুসিমার মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম৷ সেখানে কোনো কল থেকে পানি যেন কোন অবস্থাতেই পান না করা হয় – সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশ রয়েছে৷ সেই গ্রামে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে৷

শাক-শব্জি খাওয়া বন্ধ

পালংশাকসহ আরো বেশ কিছু সব্জি হুমকির সম্মুখীন৷ তবে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে, তা বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আর পানিতে এই তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ফলে মাছ খাওয়াও আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ কীভাবে এসব তেজস্ক্রিয় সম্পন্ন পণ্যের কাছ থেকে দূরে থাকা যায় সেই চেষ্টাই সবাই করছে৷

Tschernobyl
চেরনোবিলে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দূর্ঘটনাছবি: AP

একজন মহিলা জানালেন,‘‘আমি বিশ্বাস করি, তেজস্ক্রিয়তা সংক্রামিত খাবার কখনোই বাজারে ছাড়া হবে না৷ সাবধানতা অবলম্বন করতে আমি নিজেই বাড়িতে সব্জি লাগিয়েছি৷''

আরেকজন জানালেন,‘‘আমি শাক-সব্জি কেনা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছি৷''আরেকজনের ভাষ্য,‘‘আমি আজ বেশি চিন্তিত, কারণ বৃষ্টি হচ্ছে৷ আমি জানি না এটা শুভ লক্ষণ কিনা৷ বৃষ্টিতে ভিজলে এই মুহূর্তে আরো সমস্যায় পড়বো কিনা৷''

তবে একটি কথা ঠিক৷ তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে সবাই বাঁচতে চাইছে, পরিবারকে বাঁচাতে চাইছে৷ শিজুকো কোহাতার বয়স ৬০ বছর৷ তিনি সুনামিতে সব কিছুই হারিয়েছেন৷ তাঁর বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে উত্তাল সমুদ্র৷ তিনি এখন থাকছেন একটি শরণার্থী শিবিরে৷ এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি আতঙ্কিত তেজস্ক্রিয়তায় সংক্রামিত খাবারের জন্য৷ তিনি নিজে একসময় শাক-সবজির চাষ করতেন৷ তিনি জানান,‘‘আমি নিজেই অনেক ধরণের শাক-সবজি লাগিয়েছি৷ এখন আমি নিজেই ভয় পাচ্ছি৷ ভবিষ্যতে এই পেশা কি আমাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে?''

তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহ ফলাফল

তেজস্ক্রিয়তার ফলে কী কী হতে পারে? যে কোন ধরণের ক্যান্সার হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ এর রেশ থাকতে পারে দশকের পর দশক৷ প্রজন্মের পর প্রজন্মও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিতে পারে৷ এবং এটা শুধু যে মানুষেরই ক্ষতি করতে সক্ষম তা নয়৷ পশু-পাখিও রক্ষা পায় না এর হাত থেকে৷ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে গৃহপালিত পশু এমনকি বন্য পশুও৷ পানিতে ছড়িয়ে পড়লে রক্ষা পাবে না মৎসকূল৷ গাছ-গাছালি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে৷ ফল-ফুল আর ফলবে না৷

১৯৮৬ সালের চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয়তার পর অসংখ্য বন নষ্ট হয়ে গিয়েছে ইউক্রেনে৷ মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, আজও তা ঠিক হয়নি৷ প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মারা গেছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা এবং এদের প্রায় ৯০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছিল বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন