1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জাতীয় সংগীতে বর্ষবরণ

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১ জানুয়ারি ২০২০

আন্দোলন স্থির করে নিল লক্ষ্য৷ নতুন বছরে নতুন সূর্য উঠবে৷ রক্ষা করতে হবে দেশের সংবিধান৷ তার জন্য জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই চলবে৷ শাহিনবাগে এক অন্যরকম বর্ষবরণ৷

https://p.dw.com/p/3VYZW
ছবি: Reuters/A. Fadnavis

৩৩ বছরের শামিমা৷ কয়েকমাসের ছোট্ট ছানাকে নিজের গায়ের চাদরে জড়িয়ে-জাপ্টে রেখেছেন৷ তার ভিতরে যতটুকু দেখা যায় বাচ্চাটাকে, সান্তাক্লসের লাল জামায় সেজে৷ বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে শামিমা বললেন, ''জীবনে কখনও কোনও বিক্ষোভে অংশ নিইনি৷ কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে এখানে বসে আছি৷ বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে৷ কারণ ওর ভবিষ্যৎ, এই দেশের আরও হাজারো শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া যায় না৷'' অনেক দূরে আতশবাজি ঝলসে উঠল আকাশে৷ নতুন বছর আসছে৷

৩১ ডিসেম্বর, রাত ১০টা৷ সাংবাদিক দাঁড়িয়ে দিল্লির শাহিনবাগে৷ রাজ্যসভায় যে দিন পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, তার পর দিন থেকে শাহিনবাগে ‘ধর্না'য় বসেছেন অসংখ্য মানুষ৷ যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে লোকসংখ্যা৷ আরও আরও মানুষ এসে বসে পড়ছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে৷ না কেবল মুসলিমরা নয়, জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে মানুষ যোগ দিচ্ছেন৷ আসছেন বিশিষ্টরা৷

সেই শাহিনবাগ বছরের শেষ দিনের দুপুরে ডাক দিয়েছিল বর্ষবরণ উদযাপনের৷ না, আতসবাজি ফাটিয়ে নয়, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে৷ জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে৷ ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগানে স্লোগানে৷

বর্ষবরণ উদযাপন করতে কাতারে কাতারে মানুষ এসেছিলেন এ দিন শাহিনবাগে৷ আন্দোলনকারীদের কাঁধে কাঁধ মেলাতে৷ সেখানেই আলাপ শামিমার সঙ্গে৷ এই প্রবল ঠান্ডায় বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঠায় বসে আছেন রাস্তার উপর তৈরি অস্থায়ী শামিয়ানায়৷ তাঁর পাশেই ৯০ বছরের আসমা খাতুন৷ তিনিও বসে আছেন গত দুই সপ্তাহ৷ ''ভারতীয় সংবিধানকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতেই হবে৷'' একটাই কথা আউড়ে চলেছেন ৯০ বছরের আসমা৷ দেশ ভাগের সময় নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শিখ উদ্বাস্তু পরিবারকে৷ আসমার কথায়, ''যাঁরা আজ নতুন করে দেশটাকে ভাঙতে চাইছেন, তাঁরা দেশভাগ দেখেননি৷ দেখলে বুঝতেন, কী ভয়াবহ সেই দৃশ্য৷ পিছিয়ে দেবেন না দেশটাকে, পিছিয়ে দেবেন না৷''

''সকলে উঠে দাঁড়াবেন দয়া করে৷'' রাস্তার উপর তৈরি মঞ্চ থেকে অনুরোধ ভেসে এল৷ সারা দিন ধরে ওই মঞ্চে বক্তৃতা করে গিয়েছেন, গান গেয়ে গিয়েছেন বহু বিশিষ্ট মানুষ৷ কিন্তু এখন গাওয়া হবে জাতীয় সঙ্গীত৷ এক বছর থেকে অন্য বছরে চাকা ঘুরতে তখন কেবল উনিশ-বিশের তফাত৷ হাতে হাতে উড়ছে জাতীয় পতাকা৷ ১২টা বাজল৷ ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু হল জাতীয় সঙ্গীত৷ বুকে হাত রেখে যাঁরা গাইছেন জনগনমন, রাষ্ট্রের চোখে তাঁরাই কি অনুপ্রবেশকারী? শেষ বেলায় প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র৷ খানিকক্ষণের নীরবতা৷ স্লোগানের রোল উঠল তারপর৷ আজাদি৷ আজাদি৷ আজাদি৷

বছর আসে, বছর যায়৷ উৎসব হয়, উদযাপন হয়৷ কিন্তু ২০২০ সালের প্রথম রাতটা রেকর্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে যে ভাবে পালন করল শাহিনবাগ, যে প্রত্যয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালো, তা এক কথায় অভূতপূর্ব৷ এমন দৃশ্যকল্প শতাব্দীতে দুএকবারই তৈরি হয়৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো