1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলহস্তি যখন নু'র প্রাণ বাঁচায়

৬ ডিসেম্বর ২০১৭

নু বা উইল্ডেবিস্ট হলো আফ্রিকার এক বড় আকারের অ্যান্টিলোপ বা হরিণ৷ পানি খেতে গিয়ে সে যদি কুমিরের কবলে পড়ে, তবে তাকে বাঁচায় কে? ভাগ্যিস কাছে বদমেজাজি জলহস্তিরা ছিল!

https://p.dw.com/p/2opjB
উইল্ডেবিস্টছবি: imago/blickwinkel

গল্পটা এভাবে বললে বেশ সরস শোনায় বটে কিন্তু জীবজগতে বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বে ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও মৃত্যু পরস্পরের সঙ্গে জড়িত৷ জীবনই জীবনের ক্ষুধা মেটায়৷ একটি প্রাণীর মৃত্যু আরেকটি প্রাণীর জীবনকে অন্তত আরো কয়েকটা দিন বা মাস, এমনকি বছর অবধি বাড়িয়ে দেয়৷ কাজেই উইল্টেবিস্টের মৃত্যু মানে কুমিরের বাঁচা৷ কুমিরকে এই ইউটিউব ভিডিওর খলনায়ক মনে করলে ভুল করা হবে৷ সে শুধু তার খিদে মেটাতে চেয়েছে৷

উইল্ডেবিস্ট বা নু'রা ভবঘুরে হলেও, ঠিক সেই হিসেবে পরিব্রাজী নয়৷ আফ্রিকার তৃণভূমিতে তাদের মতো তৃণভোজীদের শত্রুর কোনো অভাব নেই, বিশেষ করে হায়েনাদের শিকার হয় তারা৷ কিন্তু সব প্রাণীরই জলের প্রয়োজন৷ কাজেই সব প্রাণীকেই কোনো না কোনো সময়ে জলে নামতে হয়৷ আর সেখানে জলের তলায় শরীর লুকিয়ে শুধু নাকটুকু ভাসিয়ে রেখে অপেক্ষা করে মরণ৷

দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধরে রাখেন ৭২ বছর বয়সের অবসরভোগী মার্ভিন ভ্যান ওয়াইক ও তাঁর স্ত্রী টোকি৷ আগস্ট মাসের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের স্কুকুজার কাছের বাঁধ থেকে দেখা দৃশ্য৷ বাঁধের উলটোদিকে নীল উইল্ডেবিস্ট, জেব্রা আর ইম্পালা হরিণরা শান্তিতে চরছিল৷ তাদের মধ্যে একটি উইল্ডেবিস্ট পানিতে নামতেই একটা কুমির তার পিছনের ডান পা'টা কামড়ে ধরে – শুরু হয়ে যায় নু আর কুমিরের টানাটানি!

প্রকৃতিতে সবচেয়ে বড় প্রবৃত্তি সম্ভবত বাঁচার প্রবৃত্তি, তবুও একটা মোষের আকারের হরিণ যে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে একটা কুমিরকে হেঁচড়ে ডাঙায় তুলে নিয়ে যেতে পারে, এটা না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত৷ চিকণ পায়ের নড়ি ছিঁড়ে যে পা'টা কুমিরের মুখে থেকে যায়নি, তা থেকে প্রমাণ হয়, প্রকৃতি এই অবোধ প্রাণীদের কী পরিমাণ শক্তি – ও সহ্যশক্তি – দিয়ে থাকে৷ একদিকে পায়ের যন্ত্রণা, অন্যদিকে নাছোড়বান্দা কুমির, কাজেই ধীরে ধীরে নু'টিকে জলের ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কুমির; প্রথমে চুবিয়ে মারবে, তারপর পাক খেয়ে খেয়ে শরীরটাকে টুকরো টুকরো করে গলাধঃকরণ করবে৷

মিনিট দুয়েকের অসম যুদ্ধের পর হঠাৎই উদয় হলো জলাশয়ের আসল বাসিন্দারা – যাকে বলে কিনা পাড়ার মস্তান! আর কিছু নয়, দু'টি জলহস্তি৷ উইল্ডেবিস্ট বাঁচল না মরল, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু ‘তাদের’ পানিতে যে কোনো এক বেটা কুমির যথেচ্ছ শিকার ধরবে, এ তো চলতে পারে না৷

জলহস্তিরা ধেয়ে আসতেই নু'টাকে ছেড়ে জলে গা ঢাকা দিল বেচারা কুমির৷ তার জন্য চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, কেননা কুমিররা নাকি দু'বছর অবধি না খেয়ে থাকতে পারে৷ আর নু'টা যে ঠিক পার পেল, এমন বলা চলে না, কেননা তার পা'টা শুধু ভাঙা নয়, প্রায় বাকি পা থেকে আলাদা হয়ে গেছে, সে খোঁড়াচ্ছে৷ এই অবস্থায় সে দলের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে না, অন্য কোনো জল্লাদ তেড়ে এলে দৌড়ে পালাতে পারবে না৷

আফ্রিকার তৃণভূমিতে কমেডি আর ট্র্যাজেডির মধ্যে কোনো ফারাক নেই৷ আর মৃত্যুর বিরুদ্ধে জীবনের জয় তো চিরকালই ক্ষণিকের৷ তাই বলে কি আর ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ (ভিডিওটির ভিউয়ার) উইল্ডেবিস্ট-এর অযাচিত পরিত্রাণে হর্ষ বোধ করবেন না?

এসি/ডিজি