1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশফ্রান্স

জলবায়ু সংকট কাটানোর ক্ষীণ আশা

২২ মে ২০২৪

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অনেক প্রভাব আজই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে৷ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নেপথ্যে আরো অনেক প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য বিপদ বয়ে আনছে৷ মানবজাতি কি সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সর্বনাশ এড়াতে পারবে?

https://p.dw.com/p/4g7l6
Symbolbild Globale Temperatur
ছবি: Gareth Fuller/PA Wire/empics/picture alliance

জলবায়ু সংকট এখন শুধু আর সংবাদপত্রের শিরোনামে সীমিত নেই৷ অনেকেই ২০২৭ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বাড়ার যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, তা ইতোমধ্যেই বাস্তব হয়ে উঠেছে৷

প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন যে আসন্ন কয়েক বছর অথবা আগামী দশকে সেই মাত্রা ছোঁয়া যাবে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনই তথ্য প্রকাশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, যে সম্প্রতি আমরা সেই বেঞ্চমার্ক বা মানদণ্ড অতিক্রম করেছি৷ বাস্তবে কী ঘটছে, তা খোলসা করে বলা প্রয়োজন৷

প্রশ্ন হল, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী আমরা দেড় ডিগ্রির মাত্রা কি স্থায়ীভাবে পেরিয়ে গিয়েছি? কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের কার্লো বুয়নটেম্পো বলেন, ‘‘আরো উচ্চ তাপমাত্রার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ মূলত বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে৷ অর্থাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাস্প, মিথেন ইত্যাদি৷ লাগাতার উষ্ণায়নের পেছনে সেটাই মূল কারণ৷ তবে সেইসঙ্গে অসিলেশন বা দোদুল্যমানতা এবং অস্থিরতাও কাজ করছে৷''

এমন ওঠানামার অন্যতম কারণ ব্যতিক্রমী মাত্রায় উচ্চ সৌর কার্যকলাপ৷ অন্যটি হলো উষ্ণ আবহাওয়ার প্রবণতা, যাকে এল নিনইয়ো বলা হয়৷ স্প্যানিশ ভাষায় এল নিনইয়োর অর্থ শিশু বা ছোট ছেলে৷

শুনতে নিরীহ মনে হলেও বাস্তবে এল নিনইয়ো মোটেই তেমন নয়৷ সেটি মহাসাগরের তাপমাত্রার উপর প্রভাব ফেলে, যা জলবায়ুও বদলে দেয়৷ সেটা একটা প্রাকৃতিক জলবায়ুর চক্র, যার আওতায় প্রশান্ত মহাসাগরে ইকুয়েডর, কলম্বিয়া ও কোস্টা রিকার উপকূলে বাতাসের প্রবাহ বদলে যায় এবং পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায়৷ এল নিনইয়ো-র ধাক্কায় পৃথিবীর একটা বড় অংশে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতিও বদলে যায়৷ জার্মান আবহাওয়া দপ্তরের ড. আন্দ্রেয়াস বেকার বলেন, ‘‘আচমকা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার আর্দ্র এলাকায় অস্বাভাবিক মাত্রার শুষ্কতা দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে দক্ষিণ অ্যামেরিকার শুষ্ক এলাকা অতিরিক্ত আর্দ্র হয়ে উঠছে৷ সেই প্রবণতার সঙ্গে চরম আবহাওয়াও সৃষ্টি হচ্ছে৷''

জলবায়ু সংকট দূর করা অসম্ভব নয়

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বাড়ছে৷ বর্তমান এল নিনইয়ো পর্যায়ে উষ্ণতা আরো কতটা বাড়বে, তা এখনো অস্পষ্ট৷ তবে ভালো খবর হলো, চলতি বছরের বসন্তের শেষে সেই অবস্থার সমাপ্তি ঘটার কথা৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷

গত বছর মোজাম্বিক ও মালাউইতে ভয়ংকর ঝড় এবং ক্রোয়েশিয়ায় দাবানল দেখা গেছে৷ আমাদের গ্রহের উষ্ণায়নের কারণে চরম আবহাওয়া এখনই মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করছে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রণালীর সহ্যশক্তি প্রায় সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে৷ আর্থ রেজিলিয়েন্স গবেষক হিসেবে নিকো ভুন্ডারলিং মনে করেন, ‘‘আমি সেগুলিকে পৃথিবীর ‘ক্রিটিকাল অরগ্যান' বলবো, যা আমাদের গ্রহের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি৷ গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরsj মাত্রা ছাড়ানোর ঘটনা এমনই একটা উদাহরণ৷ সেই চাদর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় সাত মিটার বাড়িয়ে দেবে৷ সুমেরুর পশ্চিমের বরফের চাদর গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন থেকে পাঁচ মিটার বেড়ে যাবে৷''

অ্যামাজন অরণ্য ও কোরাল প্রাচীরগুলিও অস্থিত্বের সংকটের মুখে পড়ছে৷ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে তথাকথিত ‘অ্যামক' নামের মহাসাগরীয় স্রোতের প্রণালী সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন৷ দ্রুত বরফ গলার কারণে সেই প্রণালীতে বড় পরিবর্তন ঘটতে চলেছে৷ সেটা ঘটলে ইউরোপের গড় তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যেতে পারে৷ দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলিতে উষ্ণায়ন অনেক বেড়ে যাবে এবং অ্যামাজন অঞ্চলে বর্ষা ও শুকনা মরসুমের সময় একেবারে বদলে যাবে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এমন গতিতে বাড়তে থাকবে যে মানুষের পক্ষে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে৷

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সমাজ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল৷ সেটা ছিল জলবায়ু পরির্তনের সম্ভাব্য অপরিবর্তনীয় প্রভাব এড়ানোর লক্ষ্যে এক আন্তর্জাতিক সমঝোতা৷ কিন্তু প্যারিস চুক্তিতে ২০ থেকে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী সময়কালের উল্লেখ রয়েছে৷ এক বছর দেড় ডিগ্রি অতিক্রম করার অর্থ এই নয়, যে এখন থেকে আমরা প্রতি বছরই সেটা করতে থাকবো৷

শাউয়েনব্যার্গ/এসবি