1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জল সংকট নিয়ে বার্তা দিতে পদযাত্রা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ জুলাই ২০১৯

নিত্যদিন বাড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের অপচয়৷ বিশ্বের অনেক স্থানের মতো পশ্চিমবঙ্গও জলের সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে৷ এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে রাজ্য সরকার ১২ জুলাই পালন করতে চলেছে জল দিবস৷

https://p.dw.com/p/3LZaQ
West Bengali, Kolkata: Wassermangel in Indien und West Bengali
ছবি: DW/P. Samanta

সেদিন কলকাতায় আয়োজিত পদযাত্রায় হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

জলের অপর নাম জীবন৷ কিন্তু তার আয়ুই ক্রমশ কমে আসছে৷ বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয়৷ সম্প্রতি চেন্নাইয়ে অভূতপূর্ব জল সংকট দেখা গিয়েছে৷ এই ধারায় ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও৷ ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের প্রধান শহরগুলিতে ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ রাজধানী দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা রয়েছে৷ এই তালিকায় কলকাতা না থাকলেও এখানেও ছবিটা আশাব্যঞ্জক নয়৷ এই রাজ্যেও ব্যাপক নগরায়ণ ও কৃষিকাজের ফলে ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ারে টান পড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের ৩৪১টি ব্লকের মধ্যে ৫০টিতে মাটির নীচের জলের সঞ্চয় কমে গিয়েছে৷ ২০০১ সাল থেকে ক্রমশ একটু একটু করে কমছে এই সঞ্চয়৷ চলতি বছরের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, হুগলি, নদিয়া, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার একটা বড় অংশে গ্রীষ্মে জলস্তর ১৮ মিটার নীচে নেমে গিয়েছে৷ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের অনেক অংশের রিপোর্টও উদ্বেগজনক৷ এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে ১২ জুলাই কলকাতায় পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে৷ জল বাঁচাও দিবসে কবিগুরুর জন্মস্থান জোড়াসাঁকো থেকে বেলা ১২টায় পদযাত্রা শুরু হবে৷ নেতৃত্ব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

গ্রামীণ এলাকা যেখানে নগরায়ণের সমস্যা নেই, সেখানে কৃষিকাজের ফলে মাটির নীচের জল কমে আসছে৷ বিশেষত ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর জল লাগে৷ এক কেজি ধান উৎপাদন করতে প্রয়োজন হয় ১৪০০-১৮০০ লিটার জলের৷ বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জল লাগে৷ এখন আমন ধানের ক্ষেত্রে সেচের বদলে ব্যাপক ভাবে ভূগর্ভস্থ জল পাম্পের সাহায্যে তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এতে কোনো বাধা নেই, তাই ভালো ফলনের লক্ষ্যে কৃষিজীবীরা দেদার জল তুলে ব্যবহার করছেন৷ বীজতলা তৈরির সময় প্রচুর জল লাগে, আবার হাজার হাজার একর জমির ধানগাছের গোড়ায় জল জমিয়ে রাখতে হয়৷ তাই সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, জেলায় জেলায় ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় কমছে৷ এর ফলে অনেক জায়গায় নলকূপ বা টিউবওয়েল থাকলেও তাতে জল উঠছে না৷ জলের ভাঁড়ার ফুরিয়ে আসার অন্য বিপদও আছে৷ এর ফলে জল ও শস্য দুইই বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে, এমনই মত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর৷ তিনি বলেন, ‘‘মাটির নীচে জল কমে গেলে আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু উপরে উঠে আসবে৷ এতে জল শুধু দূষিত হবে না, জমির শস্যও বিষাক্ত হয়ে উঠবে৷ সেই ধান, শাক-সবজি আমাদের খেতে হবে৷'' তাই বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের উপর জোর দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা৷ পূর্ব বর্ধমানের কালনার মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘চাষবাসে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলের ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব৷ চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে৷ নইলে জলের অপচয় রোধ করা যাবে না৷''

‘মাটির নীচে জল কমে গেলে আর্সেনিকের মতো ধাতু উপরে উঠে আসবে’

কলকাতার মতো বড় শহরের ক্ষেত্রে কৃষি নয়, জল সংকট ডেকে আনছে লাগামছাড়া নগরায়ণ৷ অসংখ্য বহুতল গড়ে উঠছে৷ আবাসন বা শপিং মলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে, পুরসভার সরবরাহ করা জল যাচ্ছে মূলত গৃহস্থের বাড়িতে৷ কলকাতার দক্ষিণে যাদবপুর, সন্তোষপুর, টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে উত্তরের লেকটাউন, বাঙুর, বিটি রোডের দুপাশে ভূগর্ভস্থ জল কমে আসছে৷ নাগরিক সচেতনতার অভাব সংকট বাড়াচ্ছে৷ কলকাতা শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, পুরসভার পাইপের মুখে কল নেই৷ ফলে অনর্গল জল পড়ে যাচ্ছে৷ অনেকে এই জল অপচয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন৷ সরকারের তরফে জল সংরক্ষণের হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে শহরে৷ কিন্তু, মানুষ এখনো সংক সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নয়৷

ভূগর্ভস্থ জল  বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূপৃষ্ঠের জল সংরক্ষণ করে ব্যবহার করাই এই সংকট থেকে মুক্তির পথ৷ গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘জল ধরো, জল ভরো' নামে একটি প্রকল্প চালাচ্ছে সংরক্ষণের লক্ষ্যে৷ অধ্যাপক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বছরে গড়ে ২ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়৷ এছাড়া রয়েছে অসংখ্য পুকুর, খাল, বিল৷ এই জল সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে হবে, তারপর প্রয়োজনে মাটির নীচের জল নিতে হবে৷ তা নাহলে গভীর সংকট আসতে চলেছে৷''