1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জর্ডানের দূষিত পানিকে ব্যবহার উপযোগী করছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১

আরব বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলছে আন্দোলন৷ সরকার বিরোধী এই আন্দোলনে উত্তপ্ত সেখানকার আবহাওয়া৷ কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও সেখানে কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা৷ আর তাদের কাজ পানি শোধনের৷ এমনি এক উদাহরণ জর্ডান৷

https://p.dw.com/p/10PD1
জর্ডানে গবেষণায় ব্যস্ত ড. স্টেফান গায়ারছবি: Stefan Geyer

যদি প্রশ্ন করা হয়, আরব জগতের কোন দেশটিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশী পানির সংকট? এক কথায় উত্তর হবে জর্ডান৷ জলবায়ু পরিবর্তন, খরা এবং অনাবৃষ্টি এই দেশটিকে করে তুলেছে জলসংকটের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে৷ বিজ্ঞানীরা যে চিত্র এই পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছেন, তা রীতিমত দুশ্চিন্তার বিষয়৷ সেই দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতোটাই কমেছে যে, সেখানে জমে থাকা পানি আর চলবে মাত্র ৩শ বছর৷

জাতিসংঘের কথায়, বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পৃথিবীর জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ পানি সঙ্কটের মধ্যে পড়বে৷ ৪৮টি দেশের ২০ কোটি মানুষ অন্তত পানির অভাবে কঠিন জীবনের মুখোমুখি হবে৷ যদি জনসংখ্যা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা নেয়া না যায়, তাহলে এই সংকটাপন্ন মানুষের সংখ্যা হবে ৬০টি দেশে অন্তত ৭০ কোটি৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে জলবায়ুর পরিবর্তন হলে আরও ২০ শতাংশ মানুষ এই সংকটাপন্নের তালিকায় যুক্ত হবে৷ আর্দ্র অঞ্চলসমূহে বৃষ্টির পরিমাণ আরো কমে যাবে৷ অব্যাহত পরিবেশ দূষণ এবং জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিশুদ্ধ পানির মানেরও অবনতি ঘটবে৷

আগেই বলেছি, জর্ডানে চলছে চরম পানি সংকট৷ অন্যদিকে, সেখানে বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে শিল্প কারখানা৷ নির্মাণ কাজও চলছে দ্রুত গতিতে৷ গড়ে উঠছে কৃষি শিল্প, তাই বেড়েছে চাষাবাদ৷ ‘‘যদি প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো চলতেই থাকে, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা বলা মুশকিল৷'' জার্মানির হালে শহরে অবস্থিত ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ'এর হাইড্রলজিস্ট ড. স্টেফান গায়ার এমনটাই বলছেন৷ তাঁর মন্তব্য হচ্ছে, ‘‘প্রাকৃতিক এই সকল দুর্যোগ মূলত জর্ডানের ভূগর্ভস্থ পানির মজুতকে আরও কমিয়ে দিচ্ছে৷''

Jordanien Küstenstadt Aqaba
ছবি: picture alliance/dpa

স্টেফান গায়ার বলছেন, ‘‘ধরুন এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হলো৷ তাহলে এর মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে, নতুন করে ভূগর্ভস্থ পানি জমার সম্ভাবনাও কমে গেলো শতকরা ৫০ ভাগ৷ আর যদি বৃষ্টি কম হয় শতকরা ৪০ ভাগ, তাহলে ধরে নেয়া যায় পাতালে কোন পানিই জমবে না৷'

আর এ কারণেই ‘সাস্টেনেবল ম্যানেজমেন্ট অফ অ্যাভেলেবল ওয়াটার রিসোর্সেস' বা স্মার্ট প্রকল্পের জন্ম৷ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রকল্পে কাজ করছে দুটি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় গবেষণা এবং শিক্ষা সংস্থা এ জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে৷ এ পর্যন্ত স্মার্ট প্রকল্পের জন্য জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাত মিলিয়ন ইউরো৷

‘‘এই প্রকল্পের অন্যতম কাজ হচ্ছে, ব্যবহৃত পানিকে আবারো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা৷ বর্তমানে জর্ডানে ব্যবহৃত পানির মাত্র ১০ ভাগ পরিশোধন করা হয়৷ বাকিটা জমা হয় ময়লা পানির কুয়ায়, যা ডেকে আনছে আরেক বিপদ'', বললেন এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জার্মান শহর লাইপসিশ'এ অবস্থিত ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি'র প্রধান ড. রোলান্ড ম্যুলার৷ তিনি বলছেন, ‘‘এই কুয়াগুলোয় জমা পানি নানা পথে চলে যায় পাতালে৷ যা দূষিত করছে ভূগর্ভস্থ পানিকে৷ তাই প্রয়োজন এমন এক প্রযুক্তি যার ফলে দূষিত পানিতে শোধন করে তা ব্যবহার উপযোগী করা যায়৷ এবং তা কৃষিজমিতে ব্যবহারের উপযোগী করে সরবরাহ করা সম্ভব হয়৷''

স্মার্ট প্রকল্পের সদস্যরা সেই কাজটিই করছে৷ তারা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে সেখানে কাজ করছে৷ আর এই কাজের ফলাফল শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা তাদের৷ তাঁরা মনে করছেন, বর্তমানের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ পানিকে তাঁরা পরিশোধন করতে পারবেন৷ ইতিমধ্যে সেখানে এ ধরণের বেশ কয়েকটি কাজে তাঁরা বেশ সফলতা পেয়েছেন৷ স্থানীয় রাজনীতিক, শিক্ষার্থী এবং গ্রামের মানুষদের তারা এই কাজ দেখিয়েছেন৷ কারণ, তাদেরকেই পরে এই কাজের দায়িত্ব নিতে হবে৷

মুল্যার জানিয়েছেন, এভাবে পরিশোধন করা গেলে তা ভূগর্ভস্থ পানির আধারে বিশুদ্ধ পানি জমা হবে৷ যা তুলে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা যাবে৷ জর্ডানে এই কাজের জন্য নতুন করে তহবিল বরাদ্দ করতে যাচ্ছে জার্মান সরকার৷ অল্প কিছু দিনের মধ্যে আরও ১০ মিলিয়ন ইউরো পাওয়া যাবে বলেই আশা স্মার্টের সদস্যদের৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন