জন লেনন: লিভারপুলের সেই ছেলেটা
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী সংগীতজ্ঞ তিনি৷ ১৯৮০ সালে আততায়ীর হাতে মৃত্যু হয় লিভারপুলে জন্ম নেয়া তারকার৷ ছবিঘরে ফিরে তাকানো যাক তার জীবনের দিকে...
বাডি হোলির ভক্ত, স্কুলে মন নেই
১৯৪০ সালের ৯ অক্টোবর লিভারপুলে জন্ম জন লেননের৷ স্কুলের পড়ালেখার চেয়ে বাদ্যযন্ত্রে ব্যাপক আগ্রহ৷ বাডি হোলি আর এলভিস প্রিসলি তাঁর আইডল৷ ১৯৫৬ সালে ব্ল্যাক জ্যাকস নামে ব্যান্ড গড়ে তোলেন, পরে এর নাম হয় দ্য কোয়্যারিম্যান৷ ব্যান্ড দলে নেন পল ম্যাককার্টনি আর জর্জ হ্যারিসনকে৷ ১৯৬০ সালে তারা বিটলস নামে আত্মপ্রকাশ করেন৷
দ্য বিটলস
ব্যান্ডের সাফল্য ছিল অভূতপূর্ব৷ বিশ্বজুড়ে তাদের কনসার্ট দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়েছে৷ তারা এতটাই জনপ্রিয় ছিলো যে ভক্তদের চিৎকারে অনেকসময় কনসার্টে গান শোনা যেতো না৷ লেনন আর ম্যাককার্টনি ব্যান্ডের প্রধান গীতিকার৷ নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার যুদ্ধটা তাদেরই প্রথম চালিয়ে যেতে হয়েছে৷ ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবামে (উইথ দ্য বিটলস, ১৯৬৩) প্রথমবারের মতো জর্জ হ্যারিসন সুযোগ পেয়েছিলেন একটি গানে সুরারোপ করার৷
হিপি গড়ে তোলার স্বপ্ন
১৯৬৭ সালে গ্রিসের ট্যুর শেষে ফিরছিলেন তারা৷ সবাই নেশাগ্রস্ত৷ ঠিক তখনই লেনন তাঁর ব্যান্ড সদস্যদের প্রস্তাব দেন, একটি দ্বীপ কিনে সেখানে হিপি সম্প্রদায় গড়ে তুলবেন৷ ড্রামার রিঙ্গো স্টার জানিয়েছিলেন, যখনই তারা যাত্রাপথে থাকতেন নানা ধরনের আইডিয়া মাথায় ঘুরতো, কিন্তু কম সময়ই তা বাস্তবায়িত হতো৷ হিপি সম্প্রদায় গড়ে তোলার স্বপ্নও অধরাই থেকেছে৷
অল ইউ নিড ইজ লাভ
একই বছর বিবিসি ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড’ অনুষ্ঠানের জন্য একটি গান তৈরি করতে বলে বিটলসকে, যা বিশ্বব্যাপী প্রচার হবে৷ এর অল্প সময় পরেই অ্যাবি রোড স্টুডিওতে অর্কেস্ট্রার সাথে মিক জ্যাগার, এরিক ক্ল্যাপ্টন আর মারিয়ান্নে ফেইথফুলের সাথে ‘অল ইউ নিড’ গানটি রেকর্ড করে বিটলস৷ অনেকের মতে, এটি ছিল বিটলসের সেরা সময়৷
ইয়োকো ওনোর সাথে প্রণয় ও পরিণয়
১৯৬৬ সালে লেননের সাথে জাপানি শিল্পী ইয়োকো ওনোর সাথে দেখা হয়৷ ১৯৬৮ সালে তাদের ডুয়েট অ্যালবাম ‘টু ভার্জিনস’ মুক্তি পায়৷ লেনন ব্যান্ডের সদস্যদের ছাড়াই কনসার্ট করা শুরু করেন৷ এরপর লেনন দম্পতির ‘ওয়েডিং অ্যালবাম’ প্রকাশ হয়৷ তারা দুজনে ‘দ্য প্লাস্টিক ওনো’ ব্যান্ড গড়ে তোলেন৷ বিটলস একেবারে ভেঙে যায়৷ তাদের শেষ অ্যালবাম ছিল ‘অ্যাবি রোড’ যা লেননের মোটেও পছন্দ হয়নি৷
বিটলস ভাঙার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
বিটলস থেকে বেরিয়ে আসার এক বছর পরের ছবি এটি, ১৯৭১ সালে তোলা৷ ম্যাককার্টনি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার ঘোষণা দেন৷ লেনন তাঁর দলের সদস্যদের নিজের সিদ্ধান্ত জানান৷ ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ায় সদস্যরা কষ্ট পেলেও, কেউ কারো প্রতি কখনো অশ্রদ্ধা দেখাননি৷ এরপরই লেননের একক অ্যালবাম ‘ইনস্ট্যান্ট কার্মা’ মুক্তি পায় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়৷
নিউ ইয়র্ক
১৯৭১ সালে বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর লেনন এবং ওনো নিউ ইয়র্কে চলে যান৷ ৭০ দশকের মাঝামাঝিতে লেনন গান ছেড়ে দ্বিতীয় সন্তান লালন-পালনের জন্য বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন৷ লেনন আর ওনো’র এই ছবিটি দ্য হিট ফ্যাক্টরি রেকর্ডিং স্টুডিওতে যাওয়ার পথে তোলা৷ এখানেই লেননের শেষ অ্যালবাম ‘ডাবল ফ্যান্টাসি’র রেকর্ডিং হয়েছিল, যেটি ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে লেননের একমাত্র অ্যালবাম৷
শেষ অ্যালবাম
১৯৮০ সালের ১৭ নভেম্বর ‘ডাবল ফ্যান্টাসি’ মুক্তি পায়৷ কভারে চুম্বনরত ওনো আর লেননের ছবি৷ এর তিন সপ্তাহ পরেই আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান এই কিংবদন্তি শিল্পী৷ তার মৃত্যুর পর মিউজিক চার্টে শীর্ষে ছিল ওই অ্যালবামের গান ‘স্টার্টিং ওভার’৷ এছাড়া লেননের আগের গাওয়া ‘ইমাজিন’ ও টপ চার্টে উঠে এসেছিল৷