1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঞ্জাল থেকে ফ্যাশনের চল বাড়ছে

৩ জুন ২০২০

গোটা বিশ্বে প্রতি বছর বিশাল পরিমাণ জঞ্জাল সৃষ্টি হচ্ছে৷ ইউরোপের বেশ কিছু ডিজাইনার সেই জঞ্জাল পুনর্ব্যবহার করে হালফ্যাশনের পণ্য তৈরি করছেন৷ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার ফলে এমন উদ্যোগ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3dB4R
ছবি: DW

মাছের জাল থেকে কিলটেড জ্যাকেট৷ প্লাস্টিকের বোতল থেকে ব্যাকপ্যাক৷ জঞ্জাল থেকে ফ্যাশন৷ ‘ইকোআফ’ ব্র্যান্ড সেটাই করে দেখাচ্ছে৷ টি-শার্ট হোক, স্নিকার বা জ্যাকেট – মাদ্রিদের এই দোকানে প্রায় সব পণ্যই রিসাইক্লিং-এর ফলাফল৷

জঞ্জাল থেকে পণ্য

‘ইকোআফ’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্পেনের খাবিয়ের গোইয়েনেচে৷ ২০০৯ সালে তাঁর মাথায় এই আইডিয়া আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে আমরা যে পরিমাণ জঞ্জাল সৃষ্টি করছি, সেই হতাশাবোধ থেকেই প্রাথমিক প্রেরণা আসে৷ তখন মনে হলো, প্রাকৃতিক সম্পদ লাগাতার কাজে না লাগানোই সবচেয়ে টেকসই কাজ হবে৷ আমরা নতুন প্রজন্মের রিসাইকেলড পণ্য তৈরি করতে পারলে পুনর্ব্যবহার একটা সমাধানসূত্র হতে পারে৷ তবে সেগুলির মান ও ডিজাইন প্রথাগত পণ্যের মতোই রাখতে হবে৷ এভাবে আমরা দেখাতে পারি, যে পেট্রোলের খোঁজে আরও গভীরে খনন না করার প্রয়োজন নেই৷ বরং অন্যরা যাকে জঞ্জাল বলে, সেগুলিকে পলিমার তন্তু, কাপড় ও পণ্যে রূপান্তরিত করতে পারি৷’’

আবর্জনা দিয়ে ফ্যাশন পণ্য তৈরি হচ্ছে

পুরানো গাড়ির টায়ার দিয়ে একটি পায়ের চটি তৈরি করা হয়েছে৷ অর্থাৎ শতভাগ রিসাইক্লিং করা হয়েছে৷ এমনকি জোড়া লাগাতে আঠাও ব্যবহার করতে হয় নি৷ ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে পণ্যগুলির উৎস জানা যায়৷ খাবিয়ের গোইয়েনেচে বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ে কাপড়ে একটা লেবেল লাগানোর চেষ্টা করি৷ যেমন এটিতে লেখা রয়েছে, যে ২৩৫ গ্লাম বাতিল মাছের জাল দিয়ে এক গজ কাপড় তৈরি করা হয়েছে৷’’

পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা

খাবিয়ের এভাবে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চান৷ সেই ফ্যাশন দেখতেও সুন্দর হতে হবে৷ খাবিয়ের বলেন, ‘‘অনেক মানুষের কাছে রিসাইকেল্ড মানেই নিম্ন মানের পণ্য, যাকে হিপি বলা হয়৷ মানুষের ধারণা হয়েছিল, যে আমি হয়তো আমার দাদির পুরানো কম্বল দিয়ে ব্যাকপ্যাক তৈরি করছি৷ আমি বললাম, একেবারেই না৷ এর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই৷ এটা প্রযুক্তির বিষয়৷ আপনারা দুই পণ্যের মধ্যে কোনো তফাত পাবেন না৷ তাছাড়া রিসাইকেল্ড পণ্যও যে অন্য যে কোনো পণ্যের মতোই আকর্ষণীয় ও ভালো ডিজাইনের হতে পারে, মানুষকে সেটাই বোঝনোর চেষ্টা করছি৷’’

আগে থেকেই রয়েছে, এমন উপাদান নিয়ে কাজ করার দৃষ্টান্ত মোটেই বিরল নয়৷ সুইজারল্যান্ডের ‘ফ্রাইটাগ’ ব্র্যান্ড এমন পথিকৃতদের অন্যতম৷ ট্রাকের পুরানো তেরপল দিয়ে ব্যাগ তৈরি শুরু করে এই কোম্পানি এর মধ্যে পচনশীল পণ্যও তৈরি করছে৷

আরেক প্রকল্পের নাম ‘গাম-শু’৷ সেই জুতার নীচের অংশের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমস্টারডাম শহরের রাস্তার পুরানো চুইংগাম দিয়ে তৈরি৷ অথবা ইটালির ‘অরেঞ্জ ফাইবার’ ব্র্যান্ডের জামাকাপড় কমলালেবুর তন্তু দিয়ে তৈরি৷

সার্বিক উদ্যোগের প্রবণতা

স্পেনের সাংবাদিক ব্রেন্ডা চাবেস এমন টেকসই পণ্য সম্পর্কে লেখালেখি করেন৷ তিনি এক প্রবণতা লক্ষ্য করছেন৷ ব্রেন্ডা বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে এর প্রসার হচ্ছে৷ তবে বাৎসরিক কাপড়ের জঞ্জাল দৃশ্যমান হবার পর এই প্রবণতা সবে শুরু হয়েছে৷ তাছাড়া প্লাস্টিক নিয়েও আমাদের সমস্যা হচ্ছে৷ ফলে শিল্পক্ষেত্রও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে৷’’

‘ইকোআফ'-এর নিজস্ব সূত্র অনুযায়ী এই ব্র্যান্ড এখনো পর্যন্ত সমুদ্র থেকে তোলা প্রায় ৩৩০ টন আবর্জনা কাজে লাগিয়েছে৷ এই কোম্পানি স্পেনের জেলেদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সমুদ্রের জঞ্জাল সংগ্রহ করে৷

মাছের জাল বা প্লাস্টিকের বোতল থেকে পলিমার সুতা তৈরি হয়৷ সেই সুতার কাপড় দিয়ে অবশেষে জামাকাপড় তৈরি হয়৷ এই ব্র্যান্ড পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার আদর্শ তুলে ধরতে চায়৷ তাদের মূলমন্ত্র হলো: ‘‘কোনো প্ল্যান বি নেই, আমাদের একটাই গ্রহ রয়েছে৷’’

বিশেষ এক ধরনের মানুষের কাছেই এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ ব্রেন্ডা চাবেস বলেন, ‘‘এটা লাইফস্টাইলের একটা অংশ৷ ‘জিরো ওয়েস্ট’ আন্দোলনের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে৷ অনেক মানুষ আরও কম জঞ্জাল সৃষ্টি করে পরিবেশের উপর চাপ কমাতে চাইছে৷’’

প্রবণতা হোক অথবা ভবিষ্যতের ফ্যাশন, খাবিয়ের গোইয়েনেচে ভবিষ্যতেও আবর্জনা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যেতে চান৷ ভূমধ্যসাগরের উপকূলের অন্যান্য দেশের জেলেদের কাছেও তিনি নিজের আইডিয়া নিয়ে যেতে চান৷

ইয়ানিনা সেমেনোভা/এসবি